সুপ্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ, আশাকরি তোমরা সবাই ভালো আছ। আগামী ৩০ এপ্রিল শুরু হতে যাচ্ছে তোমাদের এসএসসি পরীক্ষা-২০২৩। প্রথমে বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষা। তোমাদের জানা থাকা দরকার যে, বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয়পত্র মিলে এ প্লাস নির্ধারিত হয়। তাই বাংলা প্রথমপত্র ও দ্বিতীয়পত্র উভয় পরীক্ষায় তোমাকে সমান গুরুত্ব দিতে হবে।
বাংলা প্রথমপত্রে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার জন্য কতগুলো বিষয় খেয়াল করলে সাফল্য পাওয়া যায়। তোমাদের মধ্যে অনেকেই আছে, যারা বাংলা গদ্য ও কবিতা বিভিন্ন গল্প, প্রবন্ধ ও কবিতা খুব ভালো করে জান। কিন্তু পরীক্ষার প্রশ্নে যে শব্দ ব্যবহার করে তোমাকে উত্তর করতে বলা হয়, সে সম্পর্কে তোমরা জান না।
সেক্ষেত্রে অনেক জানা সত্ত্বেও একজন শিক্ষার্থী প্রশ্নের সঠিক উত্তর লিখতে পারে না। এ কারণে তোমাদের অনেকেই বাংলা প্রথমপত্রে কাঙ্ক্ষিত নম্বর পেতে ব্যর্থ হও। পরীক্ষার আগে তোমাদের উচিত বেশি বেশি করে টেস্ট পেপারের প্রশ্ন; বিশেষ করে প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতার স্তরের প্রশ্নের উত্তর লেখা। প্রশ্নটি কোন আঙ্গিকে আসছে, তা জেনে উত্তর করা।
যেমন, প্রয়োগ স্তরের প্রশ্নে- কোন চরিত্রের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ/ কোন ঘটনার সঙ্গে সাদৃশ্য বা বৈসাদৃশ্যপূর্ণ/ কোনদিক থেকে সাদৃশ্য বা বৈসাদৃশ্যপূর্ণ/ যে চরিত্রের বিপরীত/ যে ঘটনার বিপরীত/ যে ঘটনার ইঙ্গিত করে/ যে ভাবনার বিপরীত- এমন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে তোমাকে কীভাবে সাজাতে হবে তা সঠিকভাবে জানতে হবে। আবার উচ্চতর দক্ষতা স্তরের প্রশ্নের ক্ষেত্রে- তুমি কি মনে কর.../ একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ/ বিশ্লেষণ কর/ তোমার মতের পক্ষে উত্তর দাও/ যথার্থতা নিরূপণ কর/ সত্যতা যাচাই কর/ একটি বিশেষদিক প্রতিফলিত হয়নি/ একটি বিশেষ ঘটনা প্রকাশ পায়নি/ মূলভাব বা মূলশিক্ষা প্রকাশ পেয়েছে কি?/ যৌক্তিক মতামত দাও/ বিশ্লেষণ কর- এমন প্রশ্নের উত্তরের তোমাকে কী লিখতে হবে তা তোমাকে জানতে হবে।
প্রতিটি প্রয়োগ স্তরের প্রশ্নের উত্তর লেখার জন্য সর্বোচ্চ ছয় মিনিট ও উচ্চতর দক্ষতার স্তরের প্রশ্নের জন্য সর্বোচ্চ নয় মিনিট সময় তোমরা পাবে। এ সময়ের মধ্যে যদি যথাযথ উত্তর লিখতে ব্যর্থ হও কিংবা অপ্রয়োজনীয় কথা লেখ বা প্রয়োজনীয় তথ্যের ঘাটতি থাকে তবে কাঙ্ক্ষিত নম্বর আসবে না। আবার প্রশ্নের কথা অনুসারে যদি উত্তর শুরু করতে না পার কিংবা প্রশ্নে যেভাবে উত্তর চেয়েছে; সেভাবে লিখতে না পারলে সর্বোচ্চ নম্বর আসবে না।
প্রতিটি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর লেখার সময় প্রশ্নের স্তর অনুসারে প্যারা করে লিখবে। অনেক শিক্ষার্থী প্রয়োগ স্তরের প্রশ্নে জ্ঞান অংশ অর্থাৎ সাদৃশ্য বা বৈসাদৃশ্যের বিষয়টি না লিখে শুধু বর্ণনা করতে থাকে এবং শেষের দিকে গিয়ে লেখে “এই দিক থেকে সাদৃশ্য বা বৈসাদৃশ্য”/ “সাদৃশ্য বা বৈসাদৃশ্য দেখানো হলো”- এমন করে উত্তর লিখে। উচ্চতর দক্ষতা স্তরের প্রশ্নের জ্ঞান অংশে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যুক্তি বা কারণ দেখায় না। শুধু অনুধাবন ও প্রয়োগ অংশ লিখে নিজের মতো করে সমাপ্ত করে। এসব ক্ষেত্রে নম্বর খুব কম পাওয়া যায়।
তাই কাঙ্ক্ষিত নম্বর পেতে হলে গদ্য অংশের প্রতিটি গল্প ও প্রবন্ধ, প্রতিটি কবিতা, নাটক ও উপন্যাসের প্রতিটি লাইন ধরে ধরে পড়তে হবে। শব্দার্থ ও পাঠ পরিচিতি পড়ে আলোচ্য রচনা সম্পর্কে জানতে হবে। টেস্ট পেপারের বিভিন্ন প্রশ্ন সমাধান করে প্রশ্নের বাঁকগুলো/ শর্তগুলো ধরতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ে উত্তর শেষ করতে হবে।
কোনোভাবেই অতিরিক্ত লেখা যাবে না কিংবা তথ্যের ঘাটতি রেখে উত্তর শেষ করা যাবে না। বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য মূল বইয়ের গল্প, প্রবন্ধ, কবিতা, নাটক ও উপন্যাসের ছোট ছোট তথ্য বা জ্ঞানস্তরের প্রশ্নের উত্তর, শব্দার্থ, পাঠ পরিচিতি, লেখক পরিচিতি মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে।
সাধারণ বহুনির্বাচনি, বহুপদী সমাপ্তিসূচক বহুনির্বাচনি, অভিন্ন তথ্যভিত্তিক বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য বইয়ের প্রতিটি লাইনকে জ্ঞান, অনুধাবন, প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতার স্তরের তথ্যে চিহ্নিত করতে হবে। টেস্ট পেপার থেকে বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর দাগাতে হবে এবং তা মূল বইয়ের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে হবে। কোনোভাবেই ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রশ্নের উত্তর দাগানো যাবে না।
প্রভাষক, সেন্ট গ্রেগরিজ হাইস্কুল, লক্ষ্মীবাজার, ঢাকা