ইবিতে শুরু হয়নি তদন্ত, আতঙ্কে ক্যাম্পাস ছাড়ছেন গণরুমের ছাত্রীরা
ইবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:২৩ পিএম
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে এক নবীন ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় বুধবার পৃথক দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট হল কর্তৃপক্ষ। তবে একদিন পেরিয়ে গেলেও তদন্ত কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি তারা।
এদিকে অভিযুক্তরা এখনো ক্যাম্পাসের হলে অবস্থান করায় আতঙ্কে গণরুম ছাড়ছেন ছাত্রীরা। হলের গণরুমের প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী আতঙ্কে ক্যাম্পাস ছেড়ে বাড়িতে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। তাদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তারা এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। বিভিন্নভাবে তারা বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত ঘটনায় পরিবার জানতে পেরে বাসায় যেতে বলেছে। এজন্য বাসায় যাচ্ছি। এছাড়াও হলে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এমন পরিবেশ স্বাভাবিক করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. রেবা মণ্ডল বলেন, শনিবারে মিটিং ডাকা হয়েছে। সেদিন তদন্ত কমিটির সবাই বসবো। তারপর সিদ্ধান্ত নিয়ে সামনের দিকে এগোব।
দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল প্রভোস্ট প্রফেসর ড. শামসুল আলম বলেন, ইতোমধ্যে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। দুইদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় শনিবার ক্যাম্পাস খোলার পর তদন্ত কার্যক্রম শুরু হবে।
ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী বলেন, আমি ক্যাম্পাসে ফিরতে চাই কিন্তু নিরাপত্তাহীনতায় যেতে পারছি না।
জানা যায়, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে নবীন এই ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। পরদিন ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ওই ছাত্রী। এতে তিনি বলেন, ‘ওই রাতে আমাকে বিবস্ত্র করে মারধর করেন। এতে আমি কান্না করে তাদের পা ধরে মাফ চাইতে গেলে তারা আমাকে লাথি মারেন। অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন, গামছা দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে ধরে রাখেন, একটা ময়লা গ্লাস চেটে পরিষ্কার করিয়ে নেন এবং আমাকে বিবস্ত্র করে সেটার ভিডিও ধারণ করেন। এছাড়া আমাকে বলতে থাকেন যাতে এ বিষয়টা কোনোভাবেই বাইরে না যায় আর যদি বলিস তাহলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও ভাইরাল করে দেব। ভিডিওগুলো তাদের সংরক্ষণে আছে। এ সময় অন্তরা বলেন, যদি তুই প্রশাসনের কাছে কোনো প্রকার অভিযোগ দিস, তাহলে মেরে কুত্তা দিয়ে খাওয়াব। এরপর আমাকে রাত সাড়ে ৩টায় ছেড়ে দেন। এ কারণে পরদিন প্রাণের ভয়ে আমি ক্যাম্পাস ছেড়ে বাড়ি পাবনাতে চলে যাই।'
এদিকে উক্ত ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক তদন্ত কমিটি এখনো কাজ শুরু করেনি বলে জানা গেছে।
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, আমরা ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত প্রক্রিয়া চলাকালীন অভিযুক্ত ওই ছাত্রলীগ নেত্রী কোন সাংগঠনিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে না। তদন্তে ওই ছাত্রী দোষী সাব্যস্ত হলে আমরা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করব।
ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম বলেছেন, হাইকোর্টের বিষয়টা শুনেছি। আমি ইতোমধ্যে প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশ প্রশাসনকে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি জানিয়েছি। আশা করছি আগামী রোববারের মধ্যে হাইকোর্ট থেকে নির্দেশনা অসবে। এরপর লিখিতভাবে হল কর্তৃপক্ষকে অভিযুক্ত ছাত্রীদের ক্যাম্পাস ছাড়ার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হবে।