নতুন শিক্ষাক্রমে দরিদ্র শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ছে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:৫৬ পিএম
শিক্ষা উপকরণ। ফাইল ছবি
চলতি ২০২৩ সাল থেকে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চালু হওয়া নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষা উপকরণের ব্যয় বেশি হওয়ায় দরিদ্র ছাত্রছাত্রীরা ঝরে পড়ছে- এমন দাবি করে ওই শিক্ষাক্রম (কারিকুলাম) সংস্কারের দাবি জানিয়েছে ‘সম্মিলিত বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠন।
শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে এই দাবি জানানো হয়। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক মো. জাহাঙ্গীর হোসেনসহ ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবক ও শিক্ষকরা।
বক্তারা বলেন, নতুন কারিকুলামে প্রজেক্ট বানানোর শিক্ষা উপকরণ হাতের কাছে না পাওয়া এবং সেই সঙ্গে চড়া দামের কারণে এগুলো কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন অভিভাবকরা। শহরের সচেতন অভিভাবকরা এই শিক্ষা উপকরণের জোগান দিতে পারলেও মফস্বল এলাকার অভিভাবকরা এগুলোর জোগান দিতে পারছেন না। ফলে দরিদ্র পরিবারের ছাত্রছাত্রীরা ঝরে পড়ছে আগের তুলনায় অনেক বেশি। গত ৯ মাসের বিভিন্ন জরিপ বলছে, গ্রামের স্কুলগুলোতে এই শিক্ষাক্রম পুরোটাই অগ্রহণযোগ্য হিসাবে বিবেচিত হয়েছে এবং শিক্ষাক্রম সংস্কার বা বাতিলের জোর দাবি উঠছে অভিভাবক ও ছাত্র-শিক্ষক মহলে।
অপরদিকে নতুন শিক্ষাক্রমের আরেকটি সমস্যা ‘চিহ্নভিত্তিক মূল্যায়ন’। এই পদ্ধতি রাখার কারণে অভিভাবকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা দাবি জানিয়েছেন, আগের মতো নম্বর ও গ্রেডভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি রাখা হোক।
তারা বলেন, চলতি বছর থেকে দেশে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ১ম, ২য়, ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে চালু হয়েছে এই নতুন শিক্ষাক্রম। আগামী বছর ৩য়, ৪র্থ, ৮ম এবং নবম শ্রেণিতে যুক্ত হচ্ছে। ২০২৫ সালে যুক্ত হবে ৫ম ও দশম শ্রেণি। ২০২৬ সালে একাদশ এবং ২০২৭ সালে যুক্ত হবে দ্বাদশ শ্রেণি। বর্তমান শিক্ষাক্রমে নবম শ্রেণিতে গিয়ে শিক্ষার্থী বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ভাগ হয়ে ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের ওপর পড়াশোনা করলেও নতুন কারিকুলামে মাধ্যমিক পর্যন্ত থাকছে না কোনো বিভাগ বিভাজন। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির সবাইকে পড়তে হবে ১০টি অভিন্ন বিষয়। বর্তমানে নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচি মিলিয়ে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। নতুন কারিকুলামে কেবল দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ওপর অনুষ্ঠিত হবে এসএসসি পরীক্ষা।
নতুন শিক্ষাক্রমে একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা বিভাগ পছন্দ করতে পারবে এবং একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি শেষে আলাদা দুটি বোর্ড পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ দুই পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের সমন্বয়ে তৈরি হবে এইচএসসি পরীক্ষার ফল। নতুন শিক্ষাক্রমে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা নেই। চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়তে হবে আটটি বিষয়।
নতুন শিক্ষাক্রমে তাত্ত্বিক বিষয়ের চেয়ে শিখনকালীন মূল্যায়নকে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে এবং তুলে দেওয়া হয়েছে আগের নিয়মের সাময়িক পরীক্ষা। পরীক্ষা না থাকায় ছাত্রছাত্রীরা অধ্যয়নমুখী হচ্ছে না। বইয়ের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ায় তারা বিভিন্ন ডিভাইসমুখী হচ্ছে। দলগত কাজে মোবাইল ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা থাকায় তারা এই সুযোগে নানারকম ক্ষতিকর সাইটে ঢুকে পড়ছে। এর দরুন শিক্ষার্থীদের মাঝে নানারকম নেতিবাচক দিক দৃশ্যমান হওয়ায় পারিবারিক অশান্তি ও কলহের সৃষ্টি হচ্ছে।
মানববন্ধন থেকে ৭ দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- নতুন কারিকুলাম সংস্কার বা বাতিল করা, ৫০-৬০ নম্বরের অন্তত ২টি সাময়িক লিখিত পরীক্ষা চালু রাখা, ত্রিভুজ, বৃত্ত, চতুর্ভুজ ইত্যাদি ইন্ডিকেটর বাতিল করে নম্বর ও গ্রেডভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি রাখা, শিখন ও অভিজ্ঞতাভিত্তিক ক্লাসের সব ব্যয় স্কুলের বহন করা এবং স্কুল পিরিয়ডেই সব প্রজেক্ট সম্পন্ন করা, শিক্ষার্থীদের দলগত কাজে ডিভাইসমুখী হতে অনুৎসাহিত করা, নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের আগে অবশ্যই তা মন্ত্রিপরিষদ ও সংসদে উত্থাপন করা।