এমসিসিআইর বাজেট পর্যালোচনা
সংস্কার ছাড়া বাজেটের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৪, ১১:৪০ পিএম
বড় ধরনের সংস্কার ছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। ব্যাংক-আর্থিক খাত সংস্কার ও শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে একটি শব্দও নেই, যা হতাশাজনক। তবে সংকোচনশীল মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ও বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত করলেও দীর্ঘমেয়াদে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। উন্নত বিশ্বের কয়েক দেশও এই ফর্মুলা অনুসরণ করে সুফল পেয়েছে।
বুধবার রাজধানীর গুলশানে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) আয়োজিত বাজেট পর্যালোচনা সভায় এ কথা বলেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান।
সভায় এমসিসিআই সভাপতি কামরান টি রহমানের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন পিআরআইর চেয়ারম্যান ড. জায়েদি সাত্তার, এমসিসিআইর ট্রেড অ্যান্ড ট্যাক্সেশন কমিটির চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ, এমসিসিআই সদস্য আদিব এইচ খান প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ড. মনসুর বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, দুর্বল ব্যাংকিং ব্যবস্থা, বেসরকারি খাতে ঋণের অপ্রতুলতা, ঋণের উচ্চ সুদ ও রপ্তানি আয়ের শ্লথগতির প্রেক্ষাপটে সরকারকে এবারের বাজেট দিতে হয়েছে। বাজেটে প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যগুলো বাস্তবভিত্তিক কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্যের দাম কমলেও দেশে গত ১৩ মাসে ৯ শতাংশের কাছাকাছি মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। ব্যাংক ঋণের ‘নয়-ছয়’ সুদের হার ও মুদ্রা বিনিময় হারের কারণে এ অবস্থার সূত্রপাত বলা চলে।
তিনি আরও বলেন, দেরিতে হলেও সুদহার বাড়ানোয় মূল্যস্ফীতি কমে আসতে শুরু হয়েছে। উন্নত বিশ্বের দেশও এ ফর্মুলায় সুফল পেয়েছে। যুক্তরাজ্যের মতো দেশ নীতি সুদহার বাড়িয়ে দুই বছরের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতি ১১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। আর বাংলাদেশ এ সময় তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে বেইল আউট প্যাকেজ দিয়েছে। দুর্বল ব্যাংককে সহায়তা করতে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে তারল্য সরবরাহ করেছে। এতে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ প্রয়োজন ছিল দুর্বল ব্যাংকগুলো যেন নিজেরা সবল হতে পারে সেজন্য চাপ প্রয়োগ করা। কারণ সমস্যা তারাই তৈরি করেছে। বাজেটে ব্যাংক ও আর্থিক খাত সংস্কারে একটি শব্দও নেই, যা হতাশাজনক।
ড. মনসুর বলেন, এটা প্রবৃদ্ধির বছর নয়, প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার বছর। ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নির্ভরতা যত কমিয়ে আনা যায় ততই ভালো। এক্ষেত্রে বিদেশি ঋণের উৎস সন্ধান করা উচিত। এতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ কমে আসতে পারে। টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেওয়া হলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। অবস্থার অবনতি ঘটতে পারে, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য পূরণ না হলে। চলতি অর্থবছরে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হতে পারে ৩ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে একই হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলে ৪০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি থাকতে পারে। এই ৪০ হাজার কোটি টাকা কোথা থেকে জোগান দেওয়া হবে সেটা বড় প্রশ্ন। তাই কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে এখনই সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মশিউর রহমান বলেন, রাতারাতি সব বিধিবিধান পরিবর্তন সম্ভব নয়। ঋণের সুদহার ও মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা হচ্ছে। ক্রলিং পেগ পদ্ধতি অবলম্বন করায় ডলারের দামের পার্থক্য কমে আসতে শুরু করেছে, যা রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সের মাধ্যমে রিজার্ভে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি। তিনি আরও বলেন, ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়। এটি ব্যাংকের জন্য নিরাপদ বিনিয়োগ। আমানতকারীরাও এর সুফল পায়।