৪ রোগের ওষুধের কাঁচামালের কর মওকুফের প্রস্তাব বাজেটে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৩, ১০:৩২ পিএম
আগামী অর্থবছরের বাজেটে ক্যানসার, ডায়াবেটিস, যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়া এ চারটি রোগের ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে কর মওকুফের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা সুলভ করতে দেশে প্রস্তুত হয় এমন নিরাময়যোগ্য ওষুধের ১০০টি কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়া অন্যান্য রোগের ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার কথা বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করার সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ প্রস্তাবনা জানান।
তবে বিশিষ্ট চিকিৎসা বিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী যুগান্তরকে বলেন, এবার স্বাস্থ্য বাজেটকে পরিমাণের দিক থেকে বৃদ্ধি বলা হচ্ছে। কিন্তু আপেক্ষিকভাবে দেখলে বোঝা যাচ্ছে, বেশ কয়েক বছর মোট বাজেটের ৫ শতাংশের আশপাশে বরাদ্দ থাকত। কিন্তু এটা এবার কমে ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশে নেমে এসেছে। সেদিক থেকে এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ কমে গেছে।
তিনি বলেন, কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে স্বাস্থ্যে যে বাজেট দেওয়া হয় তা খরচ করতে পারে না। প্রতি বছরই কিছু ফেরত যায়। সে কারণে এবার কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন খরচ করতে পারছে না- সেটি আগে খতিয়ে দেখা দরকার। যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি দেশের মোট বাজেটের ১২ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছে, বাংলাদেশের পঞ্চ বার্ষিকী পরিকল্পনাতেও ১১ দশমিক ১ শতাংশ লক্ষমাত্রা রাখা হয়েছে সেখানে উল্টো বৃদ্ধির পরিবর্তে শতাংশের দিক থেকে কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
অধিবেশনে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বাজেটে ডায়াবেটিস রোগ ব্যবস্থাপনায় অতি প্রয়োজনীয় ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার্য বিশেষ কিছু কাঁচামাল (৩টি) আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। ম্যালেরিয়া ও যক্ষ্মা নিরোধক ওষুধের উৎপাদন পর্যায়ে মূল্যসংযোজন কর অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি রোগীদের ইঞ্জেকশনের আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের প্রধানতম কাঁচামাল সিলিকন টিউব আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
মুস্তফা কামাল আরও বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে নারী ও শিশু সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় স্যানিটারি ন্যাপকিন ও ডায়াপারের স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের লক্ষ্যে ও উৎপাদনে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন কর (আগাম কর) ও সম্পূরক শুল্ক (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) অব্যাহতি সুবিধা মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা শতকরা বিবেচনায় মোট প্রস্তাবিত বাজেটের ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা ছিল। সে হিসাবে এ বাজেটে বরাদ্দ বাড়ছে ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী বলেন, মানসম্মত ও জনবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা আমাদের সরকারের অন্যতম নির্বাচনি অঙ্গীকার। এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি। বিশেষ করে স্বাস্থ্যখাতে সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে সাফল্যের ধারাবাহিকতায় টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টগুলো অর্জনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্যখাতে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের মূল বৈশিষ্ট্য হলো- অগ্রাধিকারভিত্তিক সেবাগুলো সম্প্রসারণ, অধিক সংখ্যায় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্তকরণ ও সেবাগ্রহীতার ব্যক্তিগত ব্যয় হ্রাসকরণ। এক কথায় আর্থিক কষ্ট ব্যতিরেকেই সব নাগরিকের জন্য গুণগত স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা চতুর্থ স্বাস্থ্য, ও পুষ্টি খাত কর্মসূচির আওতায় ৩১টি অপারেশনাল প্লানের মাধ্যমে সারাদেশে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছি।