যশশ্বী কথাসাহিত্যিক মঞ্জু সরকারের এ বইটি একেবারে ভিন্ন ধরনের। এটি একটি আত্মজৈবনিক রচনা; কিন্তু কথাসাহিত্যিক যে গুণগুলোর জন্য মঞ্জু সরকার বিশিষ্ট সেগুলোর সবই এখানে উপস্থিত। গল্প আছে, যে গল্প কৌতূহল জাগায় এবং পাঠককে সঙ্গে করে সামনে নিয়ে যায়। তবে এ গল্প একেবারেই বাস্তবিক।
গল্পে দেখা পাওয়া যায় অনেক চরিত্রের, তাদের কেউই কল্পিত নন, কেউ কেউ খ্যাতিবান মানুষ; কিন্তু প্রত্যেকেই নতুন ও জীবন্ত হয়ে উঠেছেন। অতিরিক্ত যা প্রাপ্য তা লেখকের চিন্তাভাবনা।
মঞ্জু সরকারের অভিজ্ঞতা, সংগ্রাম, তার লেখক হয়ে ওঠা, সবকিছুই ঘটনাবহুল ও চমকপ্রদ, যেমনটা উপন্যাসে পাওয়া যায়। মূল কথাটা এই যে, তিনি ঠিক করেছিলেন লেখক হবেন। লেখার কাজটা মোটেই সহজ নয়; আর লেখক হওয়া তো খুবই কঠিন।
সেই কঠিন পথেই পা বাড়িয়েছিলেন ঘরবাড়ি ছেড়ে। মাথার ওপর আর কোনো দায়িত্ব ছিল না লেখক হওয়া ছাড়া। পিতার দেখানো পথে চলতে রাজি না হওয়াতে পিতা তাকে কার্যত ত্যাজ্য করে দিয়েছিলেন; তবে কাঁধে যে কোনো দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছিলেন তা-ও নয়; সম্পূর্ণ স্বআরোপিত দায়িত্ব ছিল ওই একটিই, সেটি লেখক হওয়ার। এবং সে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাকে কঠিন যেসব অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে সেসবের কথা আছে এ বইতে।
ঠিক করেছিলেন যে শুধু লেখক নন, হবেন বিপ্লবী কলমযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে চলে গিয়েছিলেন কিশোর বয়সেই। যুদ্ধ শেষে দেশে ফিরে দেখেন যুদ্ধ মোটেই শেষ হয়নি। পরিবেশ ও পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে সম্পূর্ণ বৈরী; কিন্তু মঞ্জু সরকার দমে যাননি। আত্মবিশ্বাস ছিল অত্যন্ত দৃঢ় এবং অবশ্যই ছিল মেধা; এ দুই সম্পদকে কাজে লাগিয়ে অবিরাম অধ্যবসায় করেছেন এবং লেখা কখনোই ছাড়েননি; যেন যুদ্ধক্ষেত্রেই ছিলেন, এক বৈপ্লবিক যুদ্ধ-লেখার তো বটেই, নতুন কিছু লেখার, নিজের মতো করে লেখার।
সে যুদ্ধে তিনি সফল হয়েছেন, কিন্তু সন্তুষ্ট হননি, অসন্তোষের কথাটাও আছে তার এ রচনাতে। মঞ্জু সরকার আমার অনেক দিনের চেনা একজন প্রিয় মানুষ। তার লেখার আমি একজন অনুরাগী পাঠক। এ বই পড়ে তাকে আরও ভালো করে জানার ও বোঝার আনন্দ পেলাম। অনেক জানা ঘটনা ও চেনা মানুষও নতুন হয়ে উঠল। বইটি যারা পড়বেন, তারা সবাই আমার মতো আনন্দ পাবেন, দেখবেন লেখক
কীভাবে নিজেই একজন ঔপন্যাসিক চরিত্র হয়ে উঠছেন, চমৎকার আত্মকথনের মধ্য দিয়ে। মঞ্জু সরকারকে অভিনন্দন। পথে নেমে পথ খোঁজা মঞ্জু সরকার প্রকাশক আগামী প্রকাশনী প্রচ্ছদ নির্ঝর নৈঃশব্দ মূল্য ৭০০ টাকা।