বনফুলের মালা গেঁথে মাহেশের রথের মেলায় বিক্রি করতে গিয়েছিলেন রাধারানী। কিন্তু হঠাৎই এলো বৃষ্টি, কেনাবেচা উঠল মাথায়। ১৮৮৬ সাল নাগাদ রাধারানীকে নায়িকা করেছিলেন স্বয়ং বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। প্রায় ১৩৯ বছর পর তেমনই এক মালাপসারিণীকে পাওয়া গেল আরেক মেলায়। মাহেশ থেকে প্রায় সাত-আটশ কিলোমিটার দূরে এলাহাবাদে— মহাকুম্ভের মেলায়। আর সেই মালাপসারিণীকে নিয়েই দেশ উত্তাল। নাম তার মোনালিসা। 

১৫০৩ থেকে ২০২৫— যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাহ্যিক রূপ হয়তো বদলেছে। কয়েক শতক পেরিয়েও মোনালিসার আকর্ষণে বিন্দুমাত্র টান ধরেনি। তা সে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির আঁকা ছবিই হোক কিংবা কুম্ভমেলার সেই পাথরের মালা বিক্রেতা মোনালিসাই হোক। 

সৌন্দর্যপিয়াসীর নজরে আরও একবার একালের মোনালিসা ভোঁসলে। ইন্দোরের ষোড়শীর চোখের মায়ায় বুঁদ পুরো দেশ। সামাজিক মাধ্যমে এখন শুধুই মোনালিসা। এই খ্যাতির বিড়ম্বনায় নাকি মালা বিক্রিই হচ্ছিল না তার। তাই মেলা ছেড়ে চলে গেছেন মোনালিসা। তবে যা হয় সবই নাকি ভালোর জন্য হয়! 

একটি সূত্র জানিয়েছে, পাথরের মালা বিক্রেতা মোনালিসা নাকি দক্ষিণী বিনোদন দুনিয়া থেকে ডাক পেয়েছেন। স্বয়ং পুষ্পাখ্যাত সুপারস্টার আল্লু অর্জুন ‘পুষ্পা ৩’-এ তাকেই নাকি নায়িকা হিসেবে পেতে চান।

বাড়িতে মা-বাবা, তুতো ভাইবোন মিলিয়ে বড় পরিবার। এক বর্ণ লেখাপড়া জানেন না মোনালিসা। তাই নিয়ে কোনো আক্ষেপ নেই তার। সাদামাঠা যুক্তি— আমি বিদেশে পড়তে গেলে মা-বাবাকে দেখবে কে, খাওয়াবে কে? এ কারণেই তিনি প্রতি বছর কুম্ভমেলায় আসেন। নানা রকম পাথর দিয়ে তৈরি রকমারি মালা বিক্রি করেন। ভালোই বিক্রি হতো তার। বাদ সেধেছে ২০২৫। 

এক যুবক তার ছবি তুলে সামাজিক মাধ্যমে দিয়েছিলেন। ব্যাস, চোখ দিয়েই চোখের মণি প্রত্যেকের— 'লোকে আমার তৈরি মালার থেকেও আমার প্রতি বেশি আগ্রহী। ধান্দা চৌপাট। বিক্রি নেই। যেখানে যাচ্ছি, পেছনে লোক দৌড়োচ্ছে। মোনালিসা মোনালিসা ডাকতে ডাকতে...! এ বছরের মেলা আমার সর্বনাশ করে দিল।', বলেন মোনালিসা।

কুম্ভমেলার পাথরের মালা বিক্রেতা মোনালিসার গল্প এখানেই শেষ হতে পারত। কিন্তু হচ্ছে না। সাফল্য তার জীবনকে ছুঁয়েছে। যার ছোঁয়ায় ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করেছে ষোড়শীর জীবন। নিজে ইউটিউব চ্যানেল খুলেছেন। সেখানে লাখো লোকের আনাগোনা। এক ঝলক তাকে দেখবে বলে। সদ্য রূপটান করে নতুন সাজে হাজির তিনি। 

মোনালিসার নয়া ‘লুক’ মন কেড়েছে ভক্ত-অনুরাগীদের। জানা গেছে, পারিবারিক পেশা ছেড়ে শিগগিরই রুপালি পর্দায় নিজেকে মেলে ধরবেন তিনি। হতে পারে ছোটপর্দার কোনো হিন্দি অনুষ্ঠানে। হতেই পারে আল্লু অর্জুনের নায়িকা রূপেও।