ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন চান মেজর হাফিজ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৫ পিএম
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামী ছয় মাসের মধ্যে দেশে জাতীয় নির্বাচন দেবে- এমনটাই প্রত্যাশা করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (বীর বিক্রম)। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন দেওয়া সম্ভব।
রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বরিশাল বিভাগ সমিতির উদ্যোগে ‘মুক্তিযুদ্ধের ৯ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার, বাংলাদেশের প্রথম রাজবন্দি, বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) এমএ জলিলের ৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকী’ উপলক্ষে স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলে তিনি এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
মেজর হাফিজ বলেন, বর্তমান সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। আমরা বিশ্বাস করি সরকার আগামী ছয় মাসের মধ্যে জাতিকে একটি নির্বাচন উপহার দেবে। সেই নির্বাচনে যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন আমরা তাদের সাদরে গ্রহণ করব। সেখানে সবার ভোটের অধিকার থাকবে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার থাকবে।
তিনি বলেন, জনগণের কাছে দায়বদ্ধ- এমন একটি সরকার আমরা অবিলম্বে দেখতে চাই। রাজনীতির মাঠ খোলা আছে, ছাত্রসমাজ যদি রাজনীতি করতে চায়, তারা দল গঠন করে নির্বাচনে আসুক। এখন মুক্ত পরিবেশে দল গঠন করে জনগণের দ্বারপ্রান্তে এসে নির্বাচন করতে পারেন তারা। জনগণ যাকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দেবে, আমরা মাথা পেতে তা মেনে নেব।
হাফিজ আরও বলেন, আমরা সংস্কারের কথা শুনছি, ভালো। সংস্কার করতে কোনো দোষ নেই, তবে সংস্কার হলো একটা চলমান প্রক্রিয়া। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে সংস্কার তো চলতেই থাকবে। জনগণ কি ততদিন বসে থাকবে? ১৭ বছর ধরে বিএনপি সংগ্রাম করে এসেছে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
তিনি বলেন, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের ফলে বাংলাদেশের লড়াকু ছাত্রসমাজ এবং বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দল প্রমাণ করেছে বাঙালি সাহসী জাতি। এই সংগ্রামের ফলে ফ্যাসিস্ট সরকার দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। আমরা আশা করি, আমাদের আর কেউ পদানত করতে পারবে না।
মেজর হাফিজ বলেন, ‘১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডারের নেতৃত্বে বরিশালে ব্যাপক কর্মকাণ্ড করেছিলেন এমএ জলিল। অথচ স্বাধীন বাংলাদেশে গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘ নয় মাস কারাবরণ করেন। তিনি জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। আমৃত্যু সংগ্রামী জীবন তাকে করেছিল প্রতিবাদী। জালিম ও লুটেরা শাসকের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন অকুতোভয়। দেশপ্রেমী হিসেবে তিনি সারা বাংলার মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। আর সেটিই তার জীবনে কাল হয়ে গিয়েছিল। এখন সময় এসেছে তাকে মূল্যায়ন করার।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা বলেন, বরিশাল বিমানবন্দর এমএ জলিলের নামে করা উচিত। যারা মুক্তিযুদ্ধ করেনি তাদের নামে কী করে ক্যান্টনমেন্ট হয়। বরিশাল বিভাগে তাদের নামে যা কিছু আছে সব বাতিল করতে হবে। কোনো ব্যক্তির নামে ক্যান্টনমেন্ট হতে পারে না। বাংলাদেশে ৫৩ বছরের রাজনীতিতে কেউ পালিয়ে যায়নি। কিন্তু ফ্যাসিবাদী হাসিনা (শেখ হাসিনা) এদেশে গুম, খুন ও হত্যার রাজনীতি করার কারণে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
আক্ষেপ প্রকাশ করে মেজর হাফিজ বলেন, বরিশালবাসী বিভিন্ন সময়ে নিজেরা ঐক্যবদ্ধ থাকেন না। এ কারণে সেখানে ঐক্যবদ্ধভাবে কোনো অর্জনও হয় না। এখন সময় এসেছে নিজেদের মধ্যে ঐক্য গড়ার। সব ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে কাজ করার এখনই সময়।
বরিশাল বিভাগ সমিতির সভাপতি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ইকবাল হোসেন ফোরকানের সভাপতিত্বে এতে অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মজিবর রহমান সরোয়ার ও সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান প্রমুখ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান শেষে মেজর এমএ জলিলের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।