নিরপেক্ষ হওয়ার চেষ্টা করবেন না: অন্তর্বর্তী সরকারকে আব্দুস সালাম
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫০ পিএম
অন্তর্বর্তী সরকারকে নিরপেক্ষ না হওয়ার আহবান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম। তিনি বলেছেন, আপনাকে আমরা এনেছি। হাসিনাকে বিদায় করে, অভ্যুত্থানের পরে এই অন্তর্বর্তী সরকার আমরা এনেছি। তাই নিরপেক্ষতার নামে আওয়ামী লীগ যাতে পুনর্বাসিত না হয়, সেদিকে কিন্তু জনগণ খেয়াল রাখছে।
বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার বিকালে মহানগরীর বাটার মোড়ে রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সমাবেশে আব্দুস সালাম বলেন, যদি ৭ নভেম্বর না ঘটত, সেদিনই বাংলাদেশের স্বাধীনতা আমরা হারাতাম। তাই আজ আমাদের শপথ নিতে হবে- গত ১৫ বছর ভারতীয় তাঁবেদার সরকার ক্ষমতায় ছিল, ক্ষমতায় থেকে মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। সেই তাঁবেদার সরকার আর যাতে ফিরে না আসতে পারে।
আওয়ামী লীগ বিদায় হলেও দেশে গণতন্ত্র ফেরেনি উল্লেখ করে এই বিএনপি নেতা বলেন, শেখ হাসিনার বিদায় হইছে, এখনো কিন্তু গণতন্ত্র ফিরে আসে নাই। শেখ হাসিনা বিদায় নিছে, এখনো আমাদের নেতা তারেক রহমান ফিরে আসে নাই। তাই এই সরকারকে বলব- নিরপেক্ষ সরকার হওয়ার চেষ্টা কইরেন না। নিরপেক্ষ সরকার না আপনি। আপনাকে আমরা এনেছি।
আওয়ামী লীগের নেতারা কিভাবে ভারতে পালাচ্ছেন, সেই প্রশ্ন তুলে আব্দুস সালাম বলেন, আজকের প্রশ্ন করতে চাই রাজশাহীতে। রাজশাহীর যে অবৈধ মেয়র ছিল, জোর করে ক্ষমতা দখলকারী, সেই লিটন আজকে কোথায়? কোথায় আছে? এখন ও পালাইছে, কোথাও গ্রেফতার হয় নাই। এই সরকারকে বলি, ভারতীয় সরকারকেও বলি- সীমান্তে কৃষককে হত্যা করা হয়, শ্রমিককে হত্যা করা হয়, ফেলানিকে হত্যা করে তারকাঁটায় ঝুলাইয়া রাখা হয়। আর সীমান্ত পার হয়ে এই আওয়ামী লীগের হোমরা-চোমরারা কিভাবে আজকে ভারতে যাচ্ছে, এ সরকারের কাছে আমরা জিজ্ঞাসা করতে চাই। আজকে ভারতকেও জিজ্ঞাসা করতে চাই। তাই বলব, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক।
দ্রব্যমূল্যের দাম কমিয়ে সরকারকে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার আহবান জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, যত দ্রুত সম্ভব জিনিসপত্রের দাম কমান। চাল, ডাল, তেল, লবণের দাম কমান। এখন উপদেষ্টাদের দেখি, তারা প্রায় আড়াইশ স্টেডিয়াম বানানোর পরিকল্পনা করে। স্টেডিয়াম বানানোর কাজ আপনাদের না। আপনাদের কাজ দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন করা।
গণতন্ত্র রক্ষায় নেতাকর্মীদের লাঠি প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দিয়ে আব্দুস সালাম বলেন, আপনারা ১৭ বছর ধৈর্য ধরেছেন। আরও কয়েক মাস একটু ধৈর্য ধরেন। ধৈর্য ধরা মানে এই না যে রাজপথ ছেড়ে দিতে হবে। ধৈর্য ধরা মানে এই না যে লাঠিটা আওয়ামী লীগকে মেরেছিলেন, ওই লাঠিটা ফেলে দিতে হবে সেটা না। ওই লাঠিটা সযত্নে রাখবেন। যতি আবার গণতন্ত্র ভূলুণ্ঠিত হওয়ার জন্য কেউ ষড়যন্ত্র করে, ওই ষড়যন্ত্রকারীর মাঠে লাঠি ভাঙার জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র রক্ষা করতে হলে বিএনপি, তারেক রহমান, বেগম খালেদা জিয়ার কোনো বিকল্প নেই। আগামী নির্বাচনে আমরা আশা করি, আমাদের সঙ্গে আন্দোলনকারী যে রাজনৈতিক দল ছিল, সবার সঙ্গে আমরা নির্বাচন করব। একসঙ্গে আমরা নির্বাচন করব। ঐক্য যেন নষ্ট না হয়। সবার সঙ্গে ঐক্য ধরে রাখতে হবে। এটাই তারেক রহমানের নির্দেশ।
রাজশাহীতে নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিভেদের দিকে ইঙ্গিত করে দলের কেন্দ্রীয় এই নেতা বলেন, ঐক্যবদ্ধভাবেই রাজশাহীকে গড়ে তুলতে হবে। এখানে ঈসা ভাই আছেন, সদস্য সচিব মামুন আছে। এর বাইরে রাজশাহীর সাবেক মেয়র মিনু সাহেব আছেন। সাবেক মেয়র বুলবুল আছে। এখানে মিলন আছে। ঐক্যবদ্ধভাবেই কিন্তু রাজশাহীকে গড়ে তুলতে হবে। যদি রাজশাহী মহানগরীতে ঐক্য নষ্ট হয়, এই কয়জন নেতা দায়ী থাকবেন। তারেক রহমানের নির্দেশ- ঐক্যবদ্ধভাবে সংগঠন করে তুলতে হবে। বড় নেতা যারা, তাদের দায়িত্ব বেশি। সেই দায়িত্ব আপনারা পালন করবেন। এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহবায়ক এরশাদ আলী ঈসা। সদস্য সচিব মামুনুর রশিদ সমাবেশ পরিচালনা করেন। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক শফিকুল হক মিলন, জেলার আহবায়ক আবু সাঈদ চাঁদ, কেন্দ্রের সদস্য আবু বকর সিদ্দিক, দেবাশিষ রায় মধু, রাজশাহী মহানগরের যুগ্ম আহবায়ক নজরুল হুদা, দেলোয়ার হোসেন, ওয়ালিউল হক রানা, জয়নাল আবেদিন শিবলী, জেলার সদস্য তোফাজ্জল হোসেন তপু, গোলাম মোস্তফা মামুন প্রমুখ।
সমাবেশে শেষে বাটার মোড় থেকে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি আলুপট্টি মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। এই শোভাযাত্রায় জেলা ও মহানগর বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।