অপকর্ম করে এখনো অধরা কিছু বিএনপি নেতা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৩০ পিএম
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সারা দেশে শুরু হয় নৈরাজ্য ও সহিংসতা। যে কোনো মূল্যে দেশে সম্প্রীতি রক্ষা, লুটপাট, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব বন্ধসহ শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করছে বিএনপি।
দল কিংবা দলের নাম ব্যবহার করে অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এরই মধ্যে সারা দেশে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার কিংবা পদ স্থগিত করা হয়েছে। অনেককে করা হয়েছে শোকজও। এরমধ্যেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় অপকর্ম করে এখনও অধরা রয়েছেন বিএনপির কিছু নেতা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখনও বিভিন্ন জেলায় চাঁদাবাজি, লুটের মতো ঘটনা ঘটছে। তবে আগের চেয়ে অনেক কম। চাঁদা দিতে রাজি না হলে হত্যা মামলার আসামি করারও ঘটনা ঘটছে। এমনকি জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরে আবেদন করা হলেও অদৃশ্য কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে কয়েকজন স্থানীয় পর্যায়ের নেতা অভিযোগ করেছেন। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের ফিরিস্তি জানিয়ে দপ্তরে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানালেও কোনো প্রতিকার পাননি সেখানকার ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। ওই নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে, এমনকি থানায়ও। ওই নেতার রোষানলে পড়েছে বৃহৎ রপ্তানিমুখী পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফকির গ্রুপও। এ গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ৫০ হাজারের মতো কর্মী রয়েছেন।
ফকির ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফকির কামরুজ্জামান নাহিদ যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ী। আমাদের পরিবার কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম আজাদ প্রতিটি গার্মেন্ট থেকে চাঁদা চেয়েছেন। না দেওয়ার কারণে ব্যবসায়িক সুনাম ক্ষুণ্ন ও হয়রানি করার উদ্দেশ্যে আমাদের ফকির নিটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফকির আক্তারুজ্জামান ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ফকির মাশরিকুজ্জামান নিয়াজ এবং আমাকে দুটি হত্যা মামলায় আসামি করেছেন। সবাইকে ভয় দেখিয়ে রেখেছেন, এমপি হলে কারখানা চালাতে দেবেন না। নানা ধরনের হুমকি-ধমকি দিয়ে রেখেছেন। চাঁদাবাজি, লুটতরাজসহ মিথ্যা মামলায় হয়রানির বিষয়ে আমরা ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের কাছে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দিয়েছি। চলতি সপ্তাহে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার কাছেও দেওয়া হবে।’
আড়াইহাজারের কালাপাহারিয়া ইউনিয়নে সরকারি সফর আলী কলেজের সাবেক এজিএস ও আড়াইহাজার থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু হানিফ যুগান্তরকে বলেন, ‘১৩ আগস্ট আমাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়েছে আজাদের লোকজন। ডান হাতের চারটি রগ কেটে ফেলেছে। চাইনিজ কুড়াল দিয়ে বাম হাতে আটটি কোপ দিয়েছে। আজাদের নির্দেশে এই হামলা হয়। নিজ দলের লোকজন হামলা করবে কখনো ভাবিনি। অথচ বিস্তারিত বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরে চিঠি দিয়ে জানালেও এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিকার পাইনি।’
এদিকে গাজীপুরে তৈরি পোশাক কারখানার ঝুটসহ বিভিন্ন পরিত্যক্ত মালামালের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে বিএনপি নেতাদের নাম এলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে ওই জেলার একাধিক নেতা যুগান্তরকে জানিয়েছেন। পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়কের বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে দলের পক্ষ থেকে তাকে শোকজ করলেও থেমে নেই তার অপকর্ম।
এ নিয়ে ভুক্তভোগীরা সংবাদ সম্মেলনও করেছেন। কেন্দ্রীয় দপ্তরে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠিও দিয়েছেন। এ রকম আরও বিভিন্ন জেলার কিছু নেতার বিরুদ্ধে এখনও চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেলেও ভয়ে কেউ কথা বলতে সাহস পাচ্ছেন না।
জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘অপকর্মের সঙ্গে জড়িত, দলের ভাবমূর্তি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে এখন শুধু সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নয়, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নেতাকর্মীদের ১৫ বছরের আত্মত্যাগ এবং কমিটমেন্ট কিছু ব্যক্তির অপকর্মের জন্য প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে না। তাদের দায় দল নেবে না।’