ফাইল ছবি
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হার্টে (হৃদযন্ত্র) পেসমেকার (হৃদস্পন্দন তৈরির যন্ত্র) স্থাপন করা হয়েছে।
রোববার বিকালে হাসপাতালের চতুর্থ তলায় ক্যাথল্যাবে এই যন্ত্র বসানো হয়। এর আগে খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা একাধিকবার বোর্ড সভা করে পেসমেকার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন জানান, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) হৃদরোগের সমস্যা আগে থেকেই ছিল। হার্টে ব্লক ছিল, একটা স্টেন্টও (রিং) লাগানো ছিল। সব কিছু পর্যালোচনা করে মেডিকেল বোর্ড ম্যাডামের হার্টে পেসমেকার বসানোর সিদ্ধান্ত নেন। পরে বিশেষায়িত কক্ষে (ক্যাথল্যাবে) নিয়ে পেসমেকার স্থাপন করা হয়।
এদিকে পেসমেকার স্থাপনের আগে দুপুরে খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপালে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাতে মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্রে পেসমেকার বসানোর বিষয়ে একমত হন। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর রোববার বিকাল সাড়ে চারটার দিকে খালেদা জিয়াকে ক্যাথল্যাবে নেওয়া হয়। সেখানেই তার অস্ত্রোপচার করা হয়। সন্ধ্যার আগেই পেসমেকার বসানোর কাজ শেষ করেন চিকিৎসকরা। তবে তার অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক বলেও জানান মেডিকেল বোর্ডের এক চিকিৎসক।
পেসমেকার হলো হৃদস্পন্দন নিয়মিত রাখার কৃত্রিম বৈদ্যুতিক যন্ত্র, যা বৈদ্যুতিক স্পন্দন তৈরি করে হৃদপেশিতে পাঠায় এবং হৃদপিণ্ডের গতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
গত ২১ জুন দিবাগত রাতে গুলশানের বাসা ফিরোজায় খালেদা জিয়া হঠাৎ ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়লে রাত সাড়ে ৩টায় অ্যাম্বুলেন্সে করে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী, অধ্যাপক শামসুল আরেফিন, অধ্যাপক একিউএম মহসিনসহ মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা কয়েক দফা বৈঠকে বসে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থা পর্যালোচনা করেন। মেডিকেল বোর্ডের এসব সভায় লন্ডন থেকে ডা. জোবায়েদা রহমানসহ যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়ার কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ডা. জাহিদ বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ম্যাডামের শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করে তাৎক্ষণিক যা করণীয় সেই ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
খালেদা জিয়াকে সর্বশেষ গত ২ মে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই সময় তাকে সিসিইউতে রেখে দুই দিন চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এর আগে গত বছরের ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তখন পাঁচ মাসের বেশি সময় চিকিৎসা শেষে গত ১১ জানুয়ারি তিনি বাসায় ফেরেন। এরপর ওই বছরের ২৭ অক্টোবর লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বিএনপির চেয়ারপারসনের রক্তনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে খালেদা জিয়ার রক্তনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। তার স্বাস্থ্য কিছুটা স্থিতিশীল হলে সে দফায় পাঁচ মাসের বেশি সময় পর তাকে বাসায় নেওয়া হয়েছিল।
ডায়াবেটিস, আর্থারাইটিস ছাড়াও হৃদরোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনির বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন ৭৯ বছর বয়সি খালেদা জিয়া।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায়র কারাদণ্ডের সাজা পেয়ে খালেদা জিয়া কারাগারে যান। পরে একই বছরের অক্টোবরে হাইকোর্টে আপিলে সাজা বেড়ে দ্বিগুণ হয়। সেই মাসেই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ৭ বছরের সাজা হয় তার। সেই থেকে প্রায় দুই বছর জেলে ছিলেন তিনি। পরে মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধি পেলে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে দুটি শর্তে সরকারের নির্বাহী আদেশে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
প্রথমটি হলো, তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। দ্বিতীয় শর্তটি হলো, তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না। তখন করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে তার পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ৬ মাসের জন্য মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর থেকে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছয় মাস অন্তর অন্তর তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।