এজেন্ডায় নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার থাকলে রাজি বিএনপি ও সমমনারা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৩, ১০:১২ পিএম
দেশের সংকট সমাধানে সংলাপে রাজি বিএনপিও। তবে এজেন্ডায় নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার থাকতে হবে। নেতাদের মতে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না তা প্রমাণিত। তাই সরকারি দলকে আগে নীতিগতভাবে মানতে হবে, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্থায়ী পদ্ধতি বা কাঠামো সৃষ্টিতে তারা আন্তরিক। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে আলোচনায় বসতে চাইলে তাতে সাড়া দেবে।
এছাড়া সংলাপ নিয়ে কিছু ভাবছে না বিএনপি। সরকারের পদত্যাগের দাবি বাস্তবায়নে এখন চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকেই মনোযোগ তাদের। একই মত বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর।
অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পথ খুঁজতে সব পক্ষ শর্তহীন সংলাপের দিকে এগিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তার এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যুগান্তরকে দলগুলোর নেতারা এসব কথা বলেন।
মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। বৈঠক শেষে পিটার হাস সাংবাদিকদের বলেন, গণতান্ত্রিক নির্বাচনে রাজনৈতিক সংঘাতের জায়গা নেই। আমি আশা করি, সব পক্ষ শর্তহীন সংলাপের দিকে এগিয়ে যাবে। যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের দিকে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব হলো স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। যাতে আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান যুগান্তরকে বলেন, শর্তহীন সংলাপ আমরা তখনই চাইব যখন আমাদের দাবি মেনে নেবে। আমরা চাচ্ছি দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। যেখানে গণতন্ত্র ফিরে আসবে, মানুষের মৌলিক অধিকার ফিরে আসবে। মৌলিক অধিকার, মানুষের ভোটের অধিকার বাদ রেখে প্রধানমন্ত্রীর অধীনে আমরা তো কোনো সংলাপে যেতে পারি না। সংলাপের আসল শর্ত, আপনি (প্রধানমন্ত্রী) পদত্যাগ করুন, আমরা সংলাপ করব। আমরা নির্বাচন চাই। জবাবদিহিমূলক সরকার চাই।
কারাগারে যাওয়ার আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বিভিন্ন সময় তার বক্তব্যে সংলাপের বিষয়ে দলের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের এজেন্ডা ছাড়া আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো আলোচনা নয়। অতীতে এজেন্ডাবিহীন সংলাপে তারা নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও এর কোনোটাই রক্ষা করেনি। তাই সরকারের ওপর আস্থা রাখার কোনো সুযোগ নেই। তাই এখন একটা বিষয় আলোচনা হতে পারে, অন্য কোনো বিষয় না। সেটা হচ্ছে নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার। তার আগে অবশ্যই প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে।
বিএনপির মিত্র লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বলেন, রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের আহ্বানকে স্বাগত জানাই। কিন্তু নিরুদ্দেশের উদ্দেশে যাত্রায় কোনো ফল হয় না।
তিনি বলেন, শর্তহীন সংলাপ অতীতেও হয়েছিল। ১৯৯৪ সালে কমনওয়েলথ মহাসচিবের বিশেষ দূত হিসাবে ঢাকায় আসেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক গভর্নর জেনারেল স্যার নিনিয়ান স্টেফান। তারপর ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল এবং বিএনপির মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূঁইয়ার মধ্যে আলোচনা হয়। আমার সঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার আলোচনা হয়। যে পক্ষেরই দোষ হোক না কেন ওই সংলাপগুলো ফলপ্রসূ হয়নি। সংলাপ করতে একটা এজেন্ডা প্রয়োজন। এজেন্ডা ছাড়া সংলাপের অর্থ হয় না। ২০১৮ সালে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সংলাপ হয়েছিল। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। এতে কোনো লাভ হয়নি। আওয়ামী লীগ দিনের ভোট রাতে করেছিল।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, পিটার হাস তার কথা বলেছেন। কিন্তু আমরা তো সব সময়ই বলছি সংলাপ হতে হলে প্রধানমন্ত্রী আগে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে হবে। এটাকে শর্ত মনে করলে শর্ত, না করলে নয়। কিন্তু পদত্যাগের ঘোষণা না দিয়ে আলোচনায় বসলে ওটার কোনো মানে থাকবে না।