ফাইল ছবি
এদেশে লেখকের অভাব নাই। কেউ ফেসবুকে লিখে, কেউবা টাকার নোটে। ফলে দেশের আনাচে কানাচে অনেক সাহিত্য কর্ম দেখা যায়। আবার অনেকে ওয়েট করেন, কারও স্ট্যাটাসের কমেন্ট বক্সে লেখার জন্য।
তবে এ দেশের সবচেয়ে বড় সাহিত্যিক হলো চেকবইয়ের লেখকরা। কারণ বইমেলার বেস্ট সেলার বা পুরো মাস জুড়ে যত না বই বিক্রি হয়, তা ওনারা কলমের এক খোঁচাতেই সেরে ফেলতে পারেন। তাই ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা হলেও এদেশের জন্য বইমেলা দরকার দুইটা। সাধারণ বইয়ের সঙ্গে সঙ্গে চেকবই মেলাও করা যেতে পারে। এতে করে দেশের সব লেখকের মূল্যায়ন সম্ভব।
তা ছাড়া এর আগের মেলায় অনেকে ফেসবুকের স্ট্যাটাস কমেন্ট নিয়ে বই এনেছেন। কেউবা ইংলিশে বাংলা লিখে বই এনেছিলেন। মোদ্দা কথা, আমাদের লিখতেই হবে, তা সাহিত্যের মান থাকুক বা না থাকুক। আবার আজকাল দেয়ালেও অনেকে লিখে চলেছেন। ফলে এ দেশের সাহিত্যকর্ম খুঁজতে হলে শুধু বইমেলায় গেলে হবে না, যেতে হবে ফেসবুকের কমেন্ট বক্স, ব্যাংক-বিমার কার্যালয়গুলোতে।
এক সময় বইমেলাকে সামনে রেখে ব্যস্ততা বেড়ে যেত লেখক-প্রকাশকদের। বর্তমানে বইমেলাকে সামনে রেখে দারুণ ব্যস্ততায় থাকেন ইউটিউবাররা। কোন ড্রেস পরে, কাকে সঙ্গে নিয়ে, কোন নায়িকা কখন বইমেলায় যাবে মূলত সেটাই এখন আকর্ষণ। ফলে মেলায় বইয়ের চেয়ে টপিক গুরুত্ব পায়। বইমেলার এখন এমন অবস্থা যে, এখানে কেউ গিয়ে ইংরেজি শেখানোর বই বিক্রি করে তো, কেউ গিয়ে হারবাল চিকিৎসার বই!
তাই বইমেলাকে ঘিরে কবি-সাহিত্যিকের মিলনমেলা এখন পরিণত হয়েছে কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের মিলনমেলায়। আশ্চর্য হলেও সত্য, আমাদের মিডিয়াগুলোও বইমেলায় একজন সাহিত্যিকের চেয়ে একজন ‘বিতর্কিত’ ব্যক্তি বেশি খুঁজে। অবস্থা এখন এমন, বই বা সাহিত্যকর্মে হাত পাকাতে হলে আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচিত হতে হবে। তারপর আপনি যা-ই লিখেন না কেন, পাবলিক খাবে। আজকাল বই পড়ানোর জন্য লেখা হয় না বললেই চলে, লেখা হয় বই খাওয়ানোর জন্য। অবশ্য প্রকৃত লেখকরা কিন্তু বই পড়ানোর জন্যই লেখেন। সুতরাং এদেশে মূলত তিনটি বইমেলা দরকার। একটি লেখকদের, একটি চেকবই লেখকদের আর একটি দরকার ভিউ শিকারি ইউটিউবারদের জন্য!