ছবি: সংগৃহীত।
হঠাৎ জরুরি টেলিফোন পেয়ে হাসপাতালে ছুটে গেছি। আমার একমাত্র শালা রিকশা থেকে পড়ে পায়ে ব্যথা পেয়েছে। অবস্থা অবশ্য ততটা গুরুতর নয়। কোথাও ভাঙ্গে নাই।
ডাক্তার দেখিয়ে ফিরে আসব, শালা বলল, ‘দুলাভাই খিদে লেগেছে। কিছু খাওয়া দরকার। সকালে না খেয়ে বাসা থেকে বের হয়েছি।’ আমরা একটা ফাস্টফুডের দোকানে ঢুকলাম।
‘কী খাবে?’
শালা ঘুরে ঘুরে খাবার আইটেম দেখতে লাগল। ‘দুলাভাই হটডগ খাবেন? আমি কখনো খাই নাই।’ ‘তুমি যেহেতু খাও নাই, তাহলে অর্ডার দাও, তোমার পছন্দের খাবার খাই’।
ওভেনে গরম করে শালা চারটা গরম হটডগ নিয়ে এসে আমার পাশে বসল। সে খিদের চোটে গোগ্রাসে গিলতে লাগল।
আমি বললাম, ‘স্বাদ কেমন?’ শালা ওম ওম করে খেতে খেতে বলল, ‘ফাটাফাটি। আমার দুটায় হবে না, আরও কয়েকটা খাব’।
আমি সস লাগিয়ে সবেমাত্র একটা কামড় দিতে যাব, বউয়ের ফোন চলে এলো। আমি আঁতকে উঠলাম। বউ একটা লাউ আর লবণ কেনার জন্য বাজারে পাঠিয়েছে, আমি লাউ আর লবণ না কিনে হাসপাতালে এসেছি। রাগী মানুষ, কী না কী বলে বসে।
তার সবচেয়ে প্রিয় খাবার হচ্ছে লাউ। দিনে কমসে কম দুই বেলা তার লাউ চাই। বিয়েবাড়ি গিয়েও সে লাউয়ের তরকারি খোঁজে। লাউ আমার দুচোখের বিষ।
আমি মোবাইল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলল, ‘তোমাকে কী বলেছিলাম?’
‘লাউ আনতে বলছিলা। টেনশন কইরো না জানপাখা, তোমার মতো ফ্রেশ, সাহসী, ভদ্রলাউ কিনে আনব।’
‘তুমি লাউ পছন্দ করো না বলে কিনতে পারবে না, সেটা সরাসরি বললেই হয় আর আমি জানপাখা’?
‘অবশ্যই তুমি জানপাখা। তুমি আমার একমাত্র নিজস্ব বউ, যার কোনো শাখা প্রশাখা নাই। জানপাখি থেকে জানপাখাই ভালো। গরমকাল এলে পাখার দরকার হয়। তুমি কী বলো? পাখি দিয়ে কি গায়ে বাতাস দেওয়া যায়?’
‘আমি চুলায় তরকারি বসিয়ে বসে আছি লবণের অপেক্ষায়, আর তুমি আমাকে পাখি আর পাখার হিসাব দেখাচ্ছ? শরীরে তেলের খনি গজাইছে? তোমাকে আমি ত্যাজ্য জামাই করব। বাসায় আস তারপর বুঝবা, হাউ মেনি পেডিতে হাউ মেনি রাইস হয়। সত্যি করে বল, তুমি এখন কোথায় আছ?’ মিনমিনে গলায় বললাম, ‘একটা ফাস্টফুডের দোকানে আছি’।
বউ চিৎকার করে বলল, ‘পানির নিচে ফিশ, উপরে তুমি সেলফিশ। সঙ্গে তোমার কোন জানপাখি? আমার লাউ রেখে তুমি ওখানে কী করছ? পাখার বাতাস খাচ্ছ’?
‘আমার সঙ্গে কোনো জানপাখি নাই, তবে একজন জানপাখা আছে। তার সঙ্গে বসে হটডগ খাচ্ছি।’
‘কী খাচ্ছ?’
‘আরে বাবা হটডগ?’
‘আজকেই আমি বাপের বাড়ি চলে যাচ্ছি, বেশি করে জানপাখির সঙ্গে খাও, কুত্তা বিলাই খাও!’
সে রাগ করলেই বাপের বাড়ি চলে যাওয়ার হুমকি দেয়।
আমি হেসে ফেললাম, ‘তুমি রাগ করে বাপের বাড়ি চলে গেলে, আমি এখনই প্রার্থনায় বসে যাব’। ‘আমি যাতে আবার ফিরে আসি সেই দোয়া করতে বুঝি?’
‘না। তুমি যাতে আর ফিরে না আসা সে দোয়া করতে। তখন আরাম করে প্রতিদিন হটডগ খেতে পারব’।
বউ ধমক দিয়ে বলল, ‘একদম চুপ। আমি না এলে তোমার সুবিধা হলে জীবনেও যাব না। অপরাধ করে আমাকে ইংরেজি শোনাচ্ছ? বাংলা বলতে লজ্জা পাও? বললেই হয় গরম কুত্তা খাচ্ছ? তা কুত্তার মাংসের স্বাদ কেমন? গরম গরম যেহেতু খাচ্ছ, নিশ্চয় অনেক স্বাদ? ও মা গো, ওয়াক থুঃ! কুত্তা বিলাই খাচ্ছে! শুনেছি এসব চাইনিজ কোরিয়ান খবিশরা খায়! ইহ্ গরম কুত্তা খাচ্ছে। কী খাচ্চোর রে বাবা! এই শোনো, বাসায় আসার সময় বুড়িগঙ্গা নদী থেকে গোসল করে আসবা।’
আমি হাসতে হাসতে বললাম, ‘শোনো বউ, এটা গরম কুত্তা না, হটডগ। অনেকেই পছন্দ করে খায়। খেতে বেশ সুস্বাদু। তোমার জন্য দুই পিস নিয়ে আসি?’
‘এগুলো সুস্বাদু? এই শোনো, আমার সঙ্গে টাল্টিবাল্টি কথা বলবা না। তোমার উচিত নাকের সয়েল টেস্ট করান। ওয়াক থুঃ! কী নোংরা! কখনো শুনেছ, কোনো ভদ্র ঘরের সন্তান এসব খায়?’
আমি শালার দিকে তাকালাম। সে খাবার শেষ করে বসে আছে। আমি ইশারায় বললাম, ‘যা, তোর জন্য আরেক পিস নিয়ে আয়।’ শালা তক্ষুনি ছুটে গেল খাবার আনতে।
‘কী কথা বলছ না কেন? একেবারে স্পিকটি নট হয়ে গেলে? জীবনে শুনেছ, খাটাশ ছাড়া এসব কোনো ভদ্র ঘরের কেউ খায়?’
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস
ছেড়ে বললাম, ‘না বউ। দেখিও নি, শুনিও নি। আমার ভুল হইছে।’