রাইয়্যান-রিয়ানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিত মুখ। তাদের শুরুর গল্পটা এরকম-বিবাহের পর প্রথম কাপল ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন। ক্যাপশনে লেখা ছিল, একটি কাব্যিক যুগের শুরু।
তাদের ওই পোস্ট দেখে সাবেক সাংবাদিক দুরন্ত মাহমুদ মেনশন করেন প্রকাশক উদভ্রান্ত আকাশকে। এই প্রকাশক একজন ব্যর্থ কবি। নতুন কবির খোঁজ পেলে তিনি আগ্রহ ভরে সংগ্রহ করেন। এরপর কবি বানানোর প্রকল্পে হাত দেন।
প্রথমে নব্য কবির ফেসবুকে আপলোড করা ছবির ক্যাপশন। তারপর এলোমেলো কিছু শব্দ যুক্ত করে কবিতা গোছের কিছু একটা বানিয়ে দেন। শুধু তাই নয়, সুন্দর অলংকরণ সমেত সেই কবিতা, পত্রিকার পাতাতেও ছেপে দেন প্রকাশক। কয়েকটা কাব্য রচনা হয়ে গেলে পরবর্তী ধাপ কবিতার বই প্রকাশ করা। আর এখানেই মূল ব্যবসাটি জড়িত থাকে উদভ্রান্ত সাহেবের। এ কাজে তাকে সহায়তা করেন দুরন্ত মাহমুদ।
রাইয়্যান-রিয়ানাকে তুলে আনার ক্ষেত্রে এ দুজনের ভূমিকা অপরিসীম। তবে এ দম্পতি এখন শুধু কবিতায় সীমাবদ্ধ নেই। তারা এখন স্বঘোষিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর। দুষ্টু লোকরা আগে বলত, যার নাই কোনো গতি, সেই করে ওকালতি। এখন অবশ্য এ প্রবাদ খাটে কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের ক্ষেত্রে।
উদভ্রান্ত সাহেব রাইয়্যান-রিয়ানার নামটিও নিজে দিয়েছেন। রাইয়্যানের নাম ফজলুল হক আর রিয়ানা ছিল রেহেনা। রেহেনা পরিবর্তন করে রিয়ানা। আর তার নামের সঙ্গে মিল রেখে ফজলুল হক হয়ে গেলেন রাইয়্যান। কী অপূর্ব সৃজন প্রতিভা উদভ্রান্ত সাহেবের! তাকে একবার দুরন্ত মাহমুদ বিজ্ঞাপন লেখার প্রতি মনোযোগী হতে বলেছিলেন। তিনি তাতে সায় দেননি। বিজ্ঞাপন লিখলে ভালো পয়সা পাওয়া যায়। কিন্তু নাম-ধাম তো নেই। তাই নতুন লেখক ধরে ধরে প্রকাশনাটি চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রসঙ্গ রাইয়্যান-রিয়ানা। কিন্তু বারবার দুরন্ত আর উদভ্রান্ত সাহেবকে টানা হচ্ছে কেন? আসলে চলে আসে। কান টানলে যেমন মাথা অটোমেটিক আসে, তেমনি কনটেন্ট ক্রিয়েটর রাইয়্যান-রিয়ানার কথা উঠলে চোখের সামনে উদভ্রান্ত এবং দুরন্ত’র মুখ ভেসে ওঠে।
ব্যবসা সফল এ দম্পতি বছরে একটি কবিতার বইয়ের জন্য তাদের আয়ের ২ শতাংশ বরাদ্ধ রাখেন। তাই পেয়ে প্রকাশক সাহেবও মহাখুশি। প্রকাশক শুধু কবি আবিষ্কারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। নতুন কবিদের কীভাবে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পরিচিত করে তোলা যাবে, এসব বিষয়ে তিনি সিদ্ধহস্ত। তাই তাকে দ্বিধাহীনভাবে উদ্যোক্তাদের উদ্যোক্তাও বলে চলে।
সম্প্রতি রাইয়্যান-রিয়ানা নতুন একটি ব্যবসা চালু করেছেন। পবিত্র রমজান উপলক্ষে সাশ্রয়ী ইফতারির প্যাকেজ নিয়ে একটি রেস্তোরা চালু করেছেন। এ উপলক্ষে তাদের লাইভে বলতে দেখলাম, ইফতার করুন, বরই-কুলের সুবাশ আর কাব্যের আবেশে।
এছাড়াও আর কত কত সুবিধা রয়েছে তাদের রেস্তোরায় সেসবেরও ফিরিস্তিও শুনলাম। ঘরটা বরই ফুলের গ্রাফিক্স করা ছবি দিয়ে সাজনো। একটি র্যাকে বইও দেখলাম। বরই ফুল নিয়ে একটি ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকও শোনা গেল। ফিতাকাটা অনুষ্ঠানে প্রকাশক সাহেব নিজেও উপস্থিত ছিলেন। সুন্দর বক্তব্য দিলেন। এদিন অবশ্য দুরন্ত মাহমুদকে দেখা যায়নি। বিষয়টি খটকা লাগলে অনেকেই দুরন্ত মাহমুদকে মেনশন করেন।
কয়েকজনের মেনশনের তিনি জবাব দিয়েছেন, আজ আমার মনে পড়ছে, তাদের সেই প্রথম কাপল ছবি পোস্ট করার মুহূর্তটির কথা। আমি যদি সেদিন মেনশন না করতাম, তাহলে আজ এই বরই-ফুলের সুবাস অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ত না। কী সৌভাগ্য আমাদের! কী সৃজন প্রতিভা তাদের!