বিপদ মিসকল দিয়ে আসে না। আসে কালবৈশাখী ঝড়ের বেগে। এমন একটা ঘটনা যে ঘটবে রুমাল’দা ঘুণাক্ষরেও যদি টের পেতেন, চ্যাটিং ডিলেট করে দিতেন।
ঘটনার শুরু অতি সামান্য থেকে। প্রতিদিনের মতোই ফেসবুকে আঙ্গুল চালাচ্ছিলেন সেদিন। একটা স্ট্যাটাস দেখে চোখ আটকে গেল। ‘ডানা ছাঁটা পরী’ নামের এক মেয়ে লিখেছে, আমি একা, বড় একা। স্ট্যাটাস দেখেই ব্যাঁকা হয়ে গেলেন রুমাল’দা।
এমন আজেবাজে মানুষে ভরা ফেসবুক হাটে, পরী বাটে পড়বে তো। এমনিতেই পরী, তারপর নেই ডানা!
ডানা ছাঁটা পরীকে ফেলে রেখে আসতে কিছুতেই মন সায় দিল না রুমাল’দার। একাকিত্বের হাত থেকে উদ্ধার করতে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দিলেন সঙ্গে সঙ্গেই। ফেসবুক ট্রেন্ডে ফ্রেন্ড হতে সময় লাগে না। সেখান থেকে চ্যাটিং পর্যন্ত আসতে সময় লাগে আরও কম। চলছিল ভালোই।
এরমধ্যেই এলো ফেসবুকের কালরাত। ২০২৪ সালের ৫ মার্চ রাত ৯টা। বলা নেই, কওয়া নেই, ফেসবুকও নেই! ইন হতে না হতেই আউট! রুমাল’দা প্যান্টের পকেটে হাত দিলেন।
দু-চারবার লগ ইন করার চেষ্টা করেও যখন কাজ হলো না, হতাশ হয়ে প্যান্টের পকেট থেকে রুমাল বের করে ঘামে ভেজা মুখ মোছা শুরু করলেন। এটা কোনো কথা হলো? এত সহজে ফেসবুক হ্যাক করা শিখেছে হ্যাকার!
‘মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় বুদ্ধিটা বের হয় কমোডে বসে।’ উক্তিটা কোনো মনীষী করেছেন মনে করতে না পারলেও তার সত্যতা প্রমাণে বাথরুমে ঢুকলেন এবার। কমোডে বসেও কোনো সমাধান বের করতে পারলেন না। রাগে বাথরুম থেকে বের হয়ে এসে মোবাইল নিয়ে আবার চেষ্টা করলেন। কীসের কী!
কোন শালা যে আইডিটা খেয়ে দিল কে জানে? ডানা ছাঁটা পরীর সঙ্গে ‘হট চ্যাটিং’ যে ‘কট চ্যাটিং’ হবে এটা স্বপ্নেও ভাবেননি। হ্যাকারজাদা কখন স্ক্রিনশট পাঠাবে কে জানে? বউ যদি টের পায় কী হবে তখন? জ্ঞান থাকবে, না প্রাণ থাকবে? রুমাল’দা চোখে-মুখে রুমাল চাপা দিলেন। নাহ, আর ভাবা যায় না। ভাবতে ইচ্ছাও করে না।
মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন, এবারের মতো যদি এ মহাবিপদের হাত থেকে রক্ষা পাই, সামাজিক মাধ্যম নামের এ অসামাজিক চ্যাটিংয়ে আমি আর নাই। যখন এ আকাইম্মা ফেসবুক ছিল না, কী সুখেই না দিন কাটত। ঘরের সবার সঙ্গে কথা হতো, প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা হতো।
যে মাথা আগে উঁচু হয়ে চলত, ঘুরত, ফিরত সেই মাথা এখন হেঁট হয়ে চলে মোবাইলের পেছন পেছন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ধোঁয়া তুলে ফেসবুক কী অসামাজিকটাই না বানিয়ে দিয়ে গেছে। ফেসবুকের নেশায় সব গেছে। আবার সব ফিরিয়ে আনার স্বপ্নে বিভোর হয়ে নাক ডাকতে শুরু করে দিলেন।
সকালে উঠেই পেপার হাতে নেওয়ার অভ্যাস রুমাল’দার। একটা হেডলাইন দেখে চোখ আটকে গেল তার। চোখ বড় বড় করে পড়তে শুরু করলেন। বিশ্বজুড়ে গতকাল রাতে হঠাৎ ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম ও মেসেঞ্জারে বিভ্রাট দেখা দেয়। গতকাল রাত নয়টার পর থেকে বাংলাদেশের ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবেশ করতে পারছিলেন না। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশের ব্যবহারকারীরাও এ সমস্যায় পড়েন। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। সমস্যার কারণ কী, সেটা মেটা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
লাফ দিয়ে উঠে মোবাইল বের করলেন রুমাল’দা। ফেসবুকে লগ ইন করে ডানা কাঁটা পরী লিখে সার্চ দিতে দিতে ভাবলেন গতরাতে করা প্রতিজ্ঞার কথা। মুচকি হেসে নিজের মনেই নিজে বলে উঠলেন, আরে প্রতিজ্ঞা, রেকর্ড, মান-অভিমান এসব তো করাই হয় ভাঙার জন্য!