একটা ছেলেকে আমি খুব ডিস্টার্ব করি। প্রথমদিন তাকে দেখেছিলাম, রাস্তার পাশে একটা দোকান থেকে সিগারেট ধরিয়ে বাম দিকের রাস্তায় যাচ্ছে। আমি কলেজে যাচ্ছিলাম। ইম্পর্টেন্ট একটা টিউটোরিয়াল ছিল। ছেলেটাকে দেখে সেসব ভুলে তার পেছনে হাঁটা ধরলাম। টিউটোরিয়াল জীবনে অনেক আসবে, এ ছেলে আর আসবে না।
অনেকক্ষণ ধরে ছেলেটার পেছনে হাঁটার পর সে সন্দেহের চোখে কয়েকবার দেখল আমাকে। তারপর দৌড়ে একটা বাড়ির দরজা খুলে ঢুকে পড়ল। আমি হালকা হেসে ফিরে এলাম। বাড়ি চেনা হয়ে গেছে আর সমস্যা নাই।
তারপরের কয়েকদিন বান্ধবীদের সঙ্গে তার বাড়ির সামনে স্কুটি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। সে বের হওয়ার সময় আমাকে দেখে ভয়ে ভয়ে একটা অটোয় উঠল। আমিও তার পিছু নিলাম। সে বয়েজ কলেজে পড়ে সেটাও চিনে এসেছি।
এভাবে একমাস চলার পর ওয়ার্নিং পেলাম। একদিন তার মা তার সঙ্গে এসে আমাকে বললেন, ‘এই মেয়ে, রোজ এখানে দাঁড়িয়ে থাকো কেন? এটা ভদ্রলোকের এলাকা। আর একদিন এরকম অসভ্যতা করলে পুলিশ ডাকব কিন্তু।’
পুলিশ আমি খুব ভয় পাই। এর আগেও দুইটা ছেলেকে ডিস্টার্ব করতে গিয়ে পুলিশের মার খেয়েছি। তাই হতাশ হয়ে সেখান থেকে ফিরে এসে ছেলেটাকে কীভাবে পটানো যায় সে পরিকল্পনা করতে লাগলাম। বয়েজ কলেজের বাইরেও দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। সেখানে পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকে। ছেলেদের যাতে কোনো মেয়ে ডিস্টার্ব করতে না পারে তাই।
একদিন তিন-চারজন বান্ধবী নিয়ে বের হলাম। দূর থেকে ছেলেটাকে ফলো করতে করতে একটা গলির ভেতর তার পথ আটকে দাঁড়ালাম। ছেলেটা ভীতু গলায় আমতা আমতা করে বলল, ‘তুমি কী চাও?’
হাসিমুখে বললাম, ‘তোমাকে!’
‘দেখ, আমি ওরকম ছেলে না। প্রেম-ট্রেম আমার পছন্দ না!’
‘সে দেখা যাবে। তোমার ফোন নাম্বার দাও।’
‘নাম্বার মনে নেই।’
‘ফোন দাও, আমি নাম্বার বের করছি।’
‘ফোন বাড়িতে।’
‘ফেসবুক আইডি দাও।’
এবার সে আর না করতে পারল না। ফেসবুক আইডির নাম বলল। আমি তাকে সামনে দাঁড় করিয়ে তার আইডি বের করলাম। তারপর ওকে ছেড়ে দিলাম। সে ভোঁ দৌড় দিয়ে উধাও হয়ে গেল। রাতে সে আমার রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করল। আমি মেসেজ দিলাম-হ্যালো! সে সিন করেও রিপ্লাই দিল না।
আমি : ফোন নাম্বার মনে পড়েছে?
ছেলে : পরে দেব।
আমি : তুমি অনেক সুন্দর!
সে রিপ্লাই দিল না। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে তাকে মেসেজ দিলাম, আজ তুমি সাদা রঙের ড্রেস পরে বের হবে। সাদায় তোমাকে খুব মানায়।
ছেলে : আজ ছুটির দিন। আম্মু বের হতে দেবে না।
আমি : আচ্ছা, তোমার কি গার্লফ্রেন্ড আছে?
ছেলে : না।
এরপর কয়দিন তাকে পটানোর জন্য আমি সমানতালে চেষ্টা চালিয়ে গেলাম। প্রতি রাতে তাকে একটা করে কবিতা পাঠাই। গান পাঠাই। রোমান্টিক মিমিতে মেনশন করি। একদিন সাহস করে বলেই ফেললাম-ও ষড়াব ণড়ঁ!
সে সিন করে রেখে দিল। আমি হতাশ হয়ে একের পর এক কবিতা লিখতে শুরু করলাম। তার কলেজ পর্যন্ত তার পাশেপাশে যেতে লাগলাম। সে সব সময় লাজুক হাসত আর তার হাসি দেখে আমার হৃদয়ে আশার আলো দাউদাউ করে জ্বলতে লাগল। সকাল-বিকাল তাকে কবিতা-গান এগুলো পাঠাতে লাগলাম।
‘আমার একলা আকাশ থমকে গেছে তোমায় ভালোবেসে!’
‘চলো আজ বৃষ্টিতে ভিজি, দুজনা দুজনার মনেতে মিশি!’
সে কোনো মেসেজেরই জবাব দেয় না। তার কলেজে খোঁজ নিলাম। শুনলাম আমি ডিস্টার্ব করি বলে তার বাবা-মা তার কলেজ অফ করে দিয়েছে। বাসায় খোঁজ নিতে গিয়ে দেখলাম তালা দেওয়া। আশপাশের বাসা থেকে খোঁজ নিলাম। শুনলাম সবাই মিলে ছেলের ফুপুর বাসায় গেছে।
হতাশ হয়ে ফেসবুকে এসে ছেলেটাকে আরেকটা দুঃখের কবিতা পাঠানোর জন্য ইনবক্স ওপেন করতেই দেখি সে আমাকে ব্লক করে দিয়েছে। তাড়াতাড়ি ফেক আইডি দিয়ে তার আইডিতে ঢুকে দেখি বিয়ের ছবি পোস্ট করেছে। ক্যাপশনে লেখা-হঠাৎ বৃষ্টি!
তার হঠাৎ বৃষ্টিতে আমার মাথায় বজ পাত ঘটল। এতবড় বেইমানি? এভাবে কষ্ট দিল আমাকে? পছন্দ না অথচ দিনের পর দিন লাই দিয়ে গিয়েছে আমাকে। ছেলেরা এমন কেন!
বেশ কিছুদিন কেটে গেল। বন্ধুরা আমাকে কিছুটা সামলে নিয়েছে। সবাই মিলে হাওয়া বদলের জন্য সেন্টমার্টিন এসেছি। সারা দিন পাগলা পানি খাই আর সমুদ্রের ধারে বসে থাকি। নেশার ঘোরে বকবক করি, ‘সব ছেলেরা খারাপ! বেইমানের বেইমান! আর জীবনে কোনো ছেলের দিকে তাকাব না!’
সেন্টমার্টিনে আট দিন ছিলাম। একদিন সমুদ্রের ধারে বসে আছি। সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে বোটে চড়ে এক রূপবান যুবক ভাসতে ভাসতে এগিয়ে এলো। তাকে দেখে আমি দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম। এই কি সে, যে হবে আমার স্বপ্ন পুরুষ? এই তো সে, যাকে দেখে কয়েক কোটি বার সূর্য উঠবে, অস্ত যাবে পৃথিবীর বুকে?
বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে ওর পিছু নিলাম। আসলে সব ছেলেরা এক না। এই ছেলেটাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে খারাপ হতেই পারে না! আগেরটার চিন্তা বাদ! এই ছেলেটাকে পটানোর জন্য যা করতে হয় আমি করব!