Logo
Logo
×

বিচ্ছু

মলাট বৃত্তান্ত

বাম হাতের খেল!

Icon

শফিক হাসান

প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাম হাতের খেল!

কী ব্যাপার, আপনি আমার পকেটে বাম হাত ঢোকালেন কেন? * ইয়ে মানে আজ আন্তর্জাতিক বাঁহাতি দিবস তো। তাই দিবস পালন করতেই বাম হাতের হালকা ব্যবহার করছি!

ধুরন্ধররা বর্তমানে বাঁকাপথ খোঁজে, চোরাগলি অনুসন্ধানের পাঁয়তারায় থাকে; আকাশ কিংবা ঊর্ধ্বমুখী বাতাস দেখার প্রচেষ্টা আমেরিকা দূর অস্ত! আকবর হোসেনের আজ কী হয়-আচমকা তাকায় আকাশপানে; কী চমৎকার পাখিগুলো উড়ছে আকাশের সামিয়ানায়! অজান্তেই স্বর বেরোয়, ‘কী সুন্দর পাখি!’

মুগ্ধতা গাঢ় হওয়ার আগেই বাম গালে চটাস শব্দে চপেটাঘাত অনুভব করে। ব্যথার তীব্রতায় তৎক্ষণাৎ বসে পড়ে আকবর। বসেও স্বস্তি মেলে না, সীসা হয়ে কানে ঢোকে ঝাঁঝালো স্বর, ‘বসে পড়লি যে! আরও পাখি গুনবি না?’

গাল ডলতে ডলতে উঠে দাঁড়ায় আকবর। সামনে দাঁড়িয়ে এক তরুণী। বাম হাতে মুষ্টি পাকাচ্ছে। বাম-হাতি কোনো অপরাধে চড় মারল! তুই-তোকারি করে পাখি গণনার বিষয়েও জানতে চাইছে! অপরাধ ও করণীয় বুঝতে না পেরে আকবর বলে, ‘আপনি কী পাখি নিতে চাচ্ছেন?’

মেয়েটির রাগ-রক্তিম মুখ এবার ব্যঙ্গ-বিদ্রুপে কমনীয়, ‘আহারে চান্দু, পাখি না গুনে এখন বেচতে চাইছে!’

সরল স্বীকারোক্তি আকবরের, ‘কিছুই বুঝতে পারছি না!’

‘সেটা বুঝবি কেন? একটা পাখি গুনেই অঙ্ক ভুলে গেছিস? আরও সাতটা পাখি গণনার বাইরে রেখে দিলি!’

এবার আকাশে পাখি দেখার স্মৃতি মনে পড়ে। ব্যথার তীব্রতা কমেছে বোধহয়।

‘পাখিপ্রেমী হওয়া কত বড় অপরাধ-চড় খেতে হয়!’

‘আমাকে বোকা ভেবেছিস তুই? একটা পাখি, চারটা পাখি, তিনটা পাখি মানে ও খড়াব ণড়ঁ-এটা অনেক আগেই জানা শেষ!’

‘এমন সাংকেতিক বিদ্যা-শিক্ষা আমার নেই। অচেনা মানুষের সঙ্গে কথা বলার রুচিও ছিল না।’

‘ও! অচেনা মানুষ কীভাবে বলে দেয় আমার নাম পাখি সুন্দরী?’

আকবর কথা বাড়াল না। বলা যায় না, কখন আবার ইভটিজিংয়ের অভিযোগে ফাঁসিয়ে দেয়। একবার পাখি দেখে চড় পড়ল গালে, আরও দেখলে চড়-বৃষ্টিই হতো!

দুই.

ওয়ার্ড কাউন্সিলরের আপন খালাতো বোনের বড় ছেলে আকবর। তার পক্ষে বাম-হাতি কারও চড় হজম করা কঠিন। তাও বিনা দোষে! বাসায় ফিরলে বাবা বললেন, ‘তোর গালে ছবি এঁকেছে কে?’

অপমানের কথা বলতে গিয়ে ঝরঝর কেঁদে ফেলল আকবর। বাবা বললেন, ‘মেয়েটিকে খুঁজে বের। আমরা ওর বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলব।’

খুশিই হলো সে। মোক্ষম প্রতিশোধ নিতে হবে। নইলে সম্মান থাকবে না। মানবী পাখিকে খুঁজে পেতে সময় লাগল না। মহল্লায় নতুন এসেছে। তাও আবার কাউন্সিলর মামার ভাড়াটিয়া হয়ে!

বাবা-মা হাসিমুখে ফিরলেন পশুতুল্য আচরণকারিণী পাখিদের বাসা থেকে। দুঃসংবাদ দিলেন মা-ই, ‘সম্পর্ক পাকাপাকি করে এলাম। আগামী মাসে তোদের বিয়ে।’

এবার ফ্যাচফ্যাচ কেঁদে বুক ভাসাল আকবর। বিরক্ত বাবা বললেন, ‘ছিঁচকাদুনে স্বভাব বাদ দে। নইলে আমার পাখি-মা’র হাতে আরও চড় খাবি। সাহসী হতে শেখ।’

‘কী দেখে তোমরা মজে গেলে! বাড়িতে অনুপ্রবেশ ঘটলে ওই বাম-হাতি মেয়ে ছারখার করে দেবে সব। তোমাদের গায়েও হাত তুলতে পারে!’

বিদূষী খনার পাণ্ডিত্য দেখিয়ে মা বললেন, ‘বাম-হাতি মেয়েরা লক্ষ্মী হয়। প্রবাদ শুনিসনি-কনে যদি হয় বাম-হাতি/বৃষ্টির দিনে লাগে না ছাতি!’

ক্রন্দনরোল আকাশ-পাতালে ধ্বনিত হলেও বাবা-মায়ের কান পর্যন্ত পশে না। বুক বিদীর্ণ করে একদিন শত্রুর সঙ্গে আকবরের বিয়ে হয়ে যায়।

তিন.

বউয়ের তৎপরতায় কিছুদিনের মধ্যেই চাকরি পায় আকবর। চাকরি পেতে কাউন্সিলর মামার প্রভাব খাটাতে হয়নি। মূল ভূমিকাটা ছিল পাখির। ইন্টারভিউ-পর্ব শেষে অফিস-প্রধানের মুখোমুখি হলো পাখি সুন্দরী। বলল, ‘ঘুস নিয়ে যদি চাকরি না দেন, আমি টাকা ছাড়াই চাকরিটা ম্যানেজ করে ছাড়ব। তখন লোকসান গুনবেন চল্লিশ লাখ টাকা...।’

লোকসানের পথে কে হাঁটে! পাখির বাম-হাতে ব্যাপক জোর, চাকরি না হওয়ার কারণ ছিল না। চেয়ারে বসার দ্বিতীয় দিন থেকেই দু’হাতে উপরি কামাই শুরু করল। লোকজন এটাকে বলে বাম হাতের কাজ! আকবর থুতু দিয়ে প্রতিটি পাই-পয়সা গুনে নেয় দু’হাতে! ঘুস গ্রহণকে যারা ‘বাম হাতের কাজ’ মনে করে তাদের বসবাস ভুলের স্বর্গেই!

উঁচুস্তরের ঘুসখোরদের সংগঠন ‘বাম-হাতি কল্যাণ সংঘ’র সদস্য হলো সে। কী কী উপায়ে ঘুসের রেট বাড়ানো যায়, টাইট দেওয়া যায় বেয়াড়া মক্কেলকে-পানির মতো মদ গিলতে গিলতে এসব বিষয়ে প্রভূত সেমিনার চলে। নানামুখী উদ্ভাবনে পেশাজীবীরা বুঝে গেছে, ডান-বাম নয়, সবচেয়ে শক্তিশালী হাতটির নাম অজুহাত। এর কারিশমাতেই টাকাকে ডলারে রূপান্তরিত করা যায়।

ঘুস খাওয়াখাওয়ির স্বর্ণসময়ে পাখি দ্বিতীয় চড়টা কষাল। এবারও অপরাধ বুঝতে পারল না আকবর, ‘বাম হাতের খেল আর কতদিন দেখাবে?’

‘যতদিন পর্যন্ত না তুমি শতভাগ পশু হয়ে উঠতে পারবে। আমি পাখি বেগম হয়েও কানাডার বেগমপাড়ায় নিজের নামে বাড়ি থাকবে না- এটাও মেনে নিতে হবে?’

‘আমি কী করতে পারি?’

‘আগামীকালের মধ্যে আমাকে একশ কোটি টাকা দেবে। বুকিংটা অন্তত দিই।’

‘এত টাকা! গরিব ঘুসখোর আমি কোত্থেকে দেব?’

উলটো করে তৃতীয় চড়টা বসাল পাখি, আকবরের ডান গালে। জ্ঞান হারানোর আগে শুনতে পেল কালনাগিনীর কণ্ঠ, ‘নোংরা দেশে পড়ে থাকার জন্যই কি তোকে সোনার ডিম-পাড়া চাকরিটা দিয়েছিলাম, হাঁদারাম!’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম