খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যর্থ হয়ে সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে বিডিবিএল
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১২ মে ২০২৪, ১০:৪৮ পিএম
বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) খেলাপি ঋণ আদায় করতে না পেরে সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এর চেয়ারম্যান শামীমা নার্গিস।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকে সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে বিডিবিএল-এর সমঝোতা চুক্তি শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এক সভায় ‘স্বেচ্ছায় একীভূত’ হওয়ার জন্য এ চুক্তি সই হয়। এ সময় সোনালী ব্যাংক ও বিডিবিএল-এর প্রতিনিধিদের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ চুক্তি সইয়ের পর এখন ব্যাংক দুটির সম্পদ ও দায় পর্যালোচনা করা হবে। এরপরই নানা প্রক্রিয়া শেষে একীভূত হবে উভয় ব্যাংক। এদিকে একীভূত হওয়ার চুক্তিতে আতঙ্কে ভুগছেন বিডিবিএল-এর কর্মীরা। কারণ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী একীভ‚ত হওয়ার তিন বছর পর দুর্বল ব্যাংকের কর্মীদের কর্মদক্ষতা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে অধিগ্রহণকারী ব্যাংক।
শামীমা নার্গিস বলেন, বিডিবিএল-এর চারটি সূচকের মধ্যে তিনটিই ভালো আছে, শুধু একটি একটু দুর্বল অবস্থায় আছে। সেটি হলো খেলাপি ঋণ। আগে যেটা ৪১ শতাংশ ছিল, আমরা সেটা কমিয়ে ৩৪ শতাংশে নিয়ে এসেছি। মার্জারের যে নীতিমালা আছে, চারটি সূচকের মধ্যে খেলাপি ঋণের বিষয়টা আলাদা গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, এক বছরে খেলাপি ঋণ ৪১ থেকে ৩৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। ছয় মাসে ৩৪ থেকে ৫-১০ বা ১৫তে আসা সম্ভব না। শুধু ব্যাংক সক্রিয় হলে হবে না, খেলাপি ঋণ কমাতে ঋণখেলাপিকেও এগিয়ে আসতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বেসরকারি ব্যাংকগুলো যেমন গ্যারান্টি দিচ্ছে, আগামী এক বছরে এত হাজার কোটি টাকা আনব, বিডিবিএল সে গ্যারান্টি দিতে পারছে না। কারণ, বিডিবিএল-এর শাখা সংখ্যা কম। মাত্র ৫০টি। কাজেই আমি যে সময় নেব, বাংলাদেশ ব্যাংক তো আর আমাকে ৫-১০ বছর সময় দেবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিডিবিএল-এর ঋণ অবলোপন আছে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বেশি। খেলাপির সঙ্গে ঋণ অবলোপন যোগ হলে প্রকৃত খেলাপি আরও বেশি হবে, যা কোনোভাবে ৫০-৬০ শতাংশের কম হবে না।
এদিকে একীভূত না হতে বিডিবিএল-এর কর্মীদের খোলাচিঠির বিষয়ে শামীমা নার্গিস বলেন, এখানে দুই ব্যাংকের পর্ষদ মিলে একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা অনেক কিছু বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেটা ভালো হবে, সেটাই করা হয়েছে।
সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী বলেন, ‘অনেক চিন্তাভাবনা করেই আমরা বিডিবিএলকে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা কোনো চাপের মুখে না, নিজেরাই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম জানান, এ মুহূর্তে তার ব্যাংকের আমানত ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। অপরদিকে বিডিবিএল-এর আছে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা, যা প্রায় ৫০ ভাগের ১ ভাগ। একই অবস্থা ঋণের ক্ষেত্রেও। কাজেই এটার খুব বেশি প্রভাব সোনালী ব্যাংকের ওপর পড়বে না।
তিনি আরও বলেন, ‘বিডিবিএল-এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শঙ্কিত বা আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমাদের প্রায় আট হাজার কর্মী আছেন, তারপরও অনেক লোকবল প্রয়োজন। আর বিডিবিএল-এর ছয়শর মতো কর্মী আছেন। এজন্য তাদের শঙ্কার কিছু নেই।’