মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণের সুদ হার আরও বাড়ানো হয়েছে। এই দফায় সুদ সর্বোচ্চ ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ থেকে সর্বনিম্ন দশমিক ৬৪ শতাংশ বাড়বে। ফলে সব ধরনের ঋণের সুদ হার বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে বাড়বে আমানতের সুদ হারও। ঋণের সুদ হার বাড়ার কারণে ব্যবসা খরচ বাড়বে। এতে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়ার সঙ্গে দামও বাড়বে। ফলে বিপাকে পড়বেন দেশের উদ্যোক্তারা। পণ্যের দাম বাড়ার কারণে ভোক্তার ভোগান্তি আরও বাড়বে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ করতে বাজারে টাকার প্রবাহ কমানো হচ্ছে। এতে বাড়ানো হচ্ছে সুদ হার। এ হার বাড়ানোর ফলে পণ্যমূল্য আরও বেড়ে যাবে। ফলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের কৌশল কতটুকু কাজে আসবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
ট্রেজারি বিলের গড় সুদের হারের সঙ্গে সাড়ে ৪ শতাংশ যোগ করে ভোক্তা ঋণের সুদ নির্ধারণ করা হয়। এ হিসাবে এ খাতে সুদ হার হবে ১৪ দশমিক ১১ শতাংশ। আগে ছিল ১৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ। শুক্রবার থেকে যেসব ঋণ ছাড় করা হবে সেসব ঋণের সুদে বাড়তি হার এদিন থেকেই কার্যকর করা হবে। তবে আগে যেসব ঋণ বিতরণ করা হয়েছে সেগুলোর সুদ হার ছয় মাস পর বাড়ানো যাবে। এর আগে বাড়ানো যাবে না।
সূত্র জানায়, গত জুলাই থেকে সুদ হার নির্ধারণ করা হচ্ছে সরকারের ছয় মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদ হারের ভিত্তিতে। সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির কারণে এর সুদ হার ক্রমেই বেড়ে চলছে। ট্রেজারি বিলের গড় সুদ হারের সঙ্গে নির্দিষ্ট অংশ যোগ করে সুদ নির্ধারিত হচ্ছে। ফলে প্রতি মাসেই সুদ হার বাড়ছে। ফেব্রুয়ারি মাসে গড় ট্রেজারি বিলের গড় সুদ হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ। গত জানুয়ারিতে ছিল ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এক মাসের ব্যবধানে ট্রেজারি বিলের গড় সুদ হার বেড়েছে দশমিক ৯৩ শতাংশ। আগে ট্রেজারি বিলের সুদের হারের সঙ্গে সাধারণত ঋণের ক্ষেত্রে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ যোগ করা হতো। শুক্রবার থেকে এ খাতে দশমিক ২৫ শতাংশ কমানো হয়েছে। ফলে এখন থেকে যোগ হবে সাড়ে ৩ শতাংশ। ফলে সাধারণ ঋণের সুদ হার বেড়ে দাঁড়াবে ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে এ হার ছিল ১২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এ খাতে সুদ হার বাড়বে দশমিক ৬৪ শতাংশ। গত জুনে এসব ঋণের সুদ হার ছিল ৯ শতাংশ। গত আট মাসে এ হার বেড়েছে ৪ দশমিক ১১ শতাংশ।
পল্লী ও কৃষি ঋণের সুদ হার গত জুনে ছিল ৮ শতাংশ। এখন ট্রেজারি বিলের গড় সুদের হারের সঙ্গে আড়াই শতাংশ যোগ করে নতুন সুদ নির্ধারিত হবে। ফলে এ খাতে সুদ হার হবে ১২ দশমিক ১১ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে ছিল ১১ দশমিক ১৪ শতাংশ। আট মাস এ খাতে সুদ হার বেড়েছে ৪ দশমিক ১১ শতাংশ। একইভাবে রপ্তানি খাতের প্রি শিপমেন্ট ক্রেডিটের ক্ষেত্রে ট্রেজারি বিলের গড় সুদের হারের সঙ্গে আড়াই শতাংশ যোগ করতে হবে। ফলে এ খাতে সুদ হার হবে ১২ দশমিক ১১ শতাংশ। গত মাসে ছিল ১১ দশমিক ১৪ শতাংশ।
গত সেপ্টেম্বরে ট্রেজারি বিলের গড় সুদ হার ছিল ৭ দশমিক ২০ শতাংশ। এদিকে ঋণের সুদ হার বাড়ানোর সঙ্গে আমানতের সুদ হারও বাড়বে। ব্যাংকের আমানতের সুদ হার বাড়ানোর কোনো সীমা নেই। ব্যাংকগুলো আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের তুলনা করে তা বাড়াতে পারবে। ইতোমধ্যে আমানতের সুদ হার অনেক ব্যাংক বাড়িয়েছে। কোনো কোনো ব্যাংক ১২ শতাংশ সুদেও আমানত নিচ্ছে। তবে বেশির ভাগ ব্যাংকেই এ হার ডাবল ডিজিটে রয়েছে।
উদ্যোক্তারা বলেছেন, ঋণের সুদ হার যেভাবে বাড়ছে তাতে ব্যবসা খরচ আরও বেড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে ডলারের দামও চড়া। সব মিলে আমদানি পণ্যের দাম আরও বাড়বে। এতে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার থেকে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেগুলোর সুফল কতটুকু মিলবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরা। এদিকে সুদ হার বাড়ানোর ফলে বাজারে টাকার প্রবাহ কিছুটা কমেছে। এতে মূল্যস্ফীতির হারও কিছুটা নিম্নমুখী হয়েছে। তবে এতে ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি কমে গেছে। নতুন শিল্প স্থাপন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।