টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণের জোগান বন্ধ করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক
![Icon](https://cdn.jugantor.com/uploads/settings/icon_2.jpg)
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৫১ পিএম
![টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণের জোগান বন্ধ করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2023/11/22/image-743144-1700671902.jpg)
প্রতীকী ছবি
ব্যাপক সমালোচনার মুখে অবশেষে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেওয়া বন্ধ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে সরকার ঋণের জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক খাতের ওপর নির্ভর করেছে। এতে এসব খাত থেকে সরকারের ঋণ বাড়ছে।
তবে সার্বিকভাবে গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে সরকারের ব্যাংক ঋণ কমেছে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের কারণে একদিকে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে কম, অন্যদিকে অর্থনৈতিক মন্দা ও সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের কর্মকাণ্ডও সংকুচিত হয়েছে। এসব কারণে সরকারের ঋণ গ্রহণ কমেছে।
টাকা ছাপিয়ে বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে বাজারে গিয়ে ওই অর্থ দ্বিগুণের বেশি মুদ্রা সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়। এতে পণ্যমূল্য বাড়তে সহায়তা করে। ফলে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যায়। এ হার বেড়ে গেলে বিশেষ করে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষের ভোগান্তি বাড়ে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকার যে ঋণ নেয়, সেটাকেই ছাপানো টাকায় ঋণ বলা হয়। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা সৃষ্টি করতে পারে। ওই টাাকায় ঋণ দেওয়া হয় সরকারের বিভিন্ন উপকরণ বন্ধক রেখে। একটি পর্যায়ে এসব ঋণ ট্রেজারি বিল আকারে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করে দেয়। তখন তা বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ হিসাবে চিহ্নিত হয়।
গত অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব আয় কমে যাওয়ায় ছাপানো টাকায় ব্যাপকভাবে ঋণ নিয়েছে। এতে মূল্যস্ফীতির হারও বেড়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বর্তমানে যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে সেগুলো মুদ্রা সরবরাহের কারণে হয়নি। কারণ মুদ্রা সরবরাহ ওই সময়ে কমানো হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণের স্থিতি ছিল ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে তা কমে ৭১ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। আলোচ্য সময়ে স্থিতি কমেছে ৫৭ হাজার কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারকে ছাপানো টাকায় ঋণ দেয়নি বলে এর স্থিতি কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকসহ ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ঋণের স্থিতি গত বছরের সেপ্টেম্বরে ছিল ২ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে হয়েছে ৩ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে স্থিতি বেড়েছে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা। এসব ঋণের বেশিরভাগই সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক ও নন-ব্যাংক খাত থেকে নিয়েছে।
গত বছরের ১ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিয়েছিল ১১ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঋণ না নিয়ে আগের ঋণ থেকে পরিশোধ করেছে ২৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের কাছে লেখা এক চিঠিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছিল, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ কমিয়ে দিতে। এর বিপরীতে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বন্ড মার্কেট থেকে প্রতিযোগিতামূলক ভিত্তিতে ঋণ নিতে। বন্ড মার্কেটকে এখনো চাঙা করা সম্ভব হয়নি। কারণ বন্ড কেনার জটিলতায় এ মার্কেটের প্রতি বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
এদিকে ২০২১ সালের অক্টোবরে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ। ২০২২ সালের ওই মাসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। অক্টোবরে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশে।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করছে ডিসেম্বরের মধ্যে এ হার ৮ শতাংশে নেমে আসবে। জুনের মধ্যে তা ৬ শতাংশে নামতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে গত বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকার ঋণ নিয়েছিল ১০ হাজার ৫০৯ কোটি টাকা। চলতি বছরের ওই সময়ে নতুন ঋণ না নিয়ে আগের ঋণ পরিশোধ করেছে ৩ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা।
নন-ব্যাংক খাত থেকে গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে নিয়েছিল ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। চলতি বছরের একই সময়ে নিয়েছে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।