Logo
Logo
×

ব্যাংক

বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ আরও কমেছে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৩, ১০:১৭ পিএম

বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ আরও কমেছে

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে টাকার প্রবাহ কমানোর নীতিতে রয়েছে। এতে ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ। টানা তৃতীয় মাসের মতো দেশের বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের নিচে। গত সেপ্টেম্বরে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশে। 

আগের মাসে এটি ছিল ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অর্থাৎ মাসের ব্যবধানে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি কমেছে দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। ২৩ মাস আগে ২০২১ সালের অক্টোবরে বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংকে তারল্য সংকটের প্রভাব পড়েছে ঋণ বিতরণে। আমানতে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি না হওয়ায় বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে গেছে। ফলে আগের অর্থবছরের চেয়ে কম প্রবৃদ্ধি ধরা হলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে তা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে ব্যাংক খাত।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পদ্ধতিগত কারণে বাজার থেকে টাকা উঠে যাওয়া এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সাম্প্রতিক সময়ে আমানতে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে খুব কম। এর মধ্যে বেনামি ঋণসহ বিভিন্ন কারণে অনেকে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে হাতে রাখছেন। এতে সৃষ্ট তারল্য সংকটের কারণে শরিয়াহভিত্তিক পাঁচটিসহ আটটি ব্যাংক অনেকদিন ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিধিবদ্ধ নগদ জমা (সিআরআর) রাখতে পারছে না। এমনকি জরিমানার টাকাও পরিশোধ করতে পারছে না কোনো কোনো ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ১৩ হাজার ৫৪ কোটি টাকা। আগের বছরের সেপ্টেম্বর শেষে যা ছিল ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা। ঋণস্থিতির হিসাব হয় সুদসহ। ফলে নিট ঋণ যে এত বেড়েছে তা নয়। বেসরকারি খাতে পরিস্থিতি এমন হলেও সরকারের ঋণ বাড়ছে দ্রুত। যদিও সরকার চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ঋণ পরিশোধে মনোযোগী হয়েছে।

সাধারণভাবে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের ঘরে থাকে। তবে ২০১৯ সালের নভেম্বরে প্রথমবারের মতো তা নেমে যায় ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশে। করোনা শুরুর পর ব্যাপক হারে কমে ২০২০ সালের মে মাসে প্রবৃদ্ধি নামে ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে। তবে পরের মাস জুন থেকে তা অল্প অল্প করে বাড়তে থাকে। 

এসব বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া মানে বাজারে টাকা ছাড়া, যা মুদ্রাস্ফীতি ও লেনদেন ভারসাম্যের (বিওপি) ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। অর্থায়ন কমে যায় বেসরকারি খাতে। ফলে কমে যেতে পারে নতুন কর্মসংস্থান। জনগণের হাতে অতিরিক্ত অর্থ থাকলে পণ্যের চাহিদা তৈরি হবে, যা দাম বৃদ্ধি করবে। বিপুল পরিমাণ অর্থ বাজারে ছাড়লে তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাবেক এই কর্মকর্তা। অর্থের প্রচলন বেড়ে গেলে পণ্য ও পরিষেবার চাহিদা বেড়ে যায়, যার ফলে আমদানিও বাড়ে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশ ব্যাংকের করা প্রাক্কলনের চেয়েও কম। চলতি অর্থবছরের ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রাক্কলন করা হয়েছিল ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। এরও আগের অর্থবছরে (২০২১-২০২২) প্রাক্কলন করেছিল ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। যদিও প্রাক্কলিত হারের চেয়ে লক্ষ্যমাত্রার অর্জন ছিল অনেক কম।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম