রিজার্ভ কমলেও ঘাটতি হয়নি: সংসদে অর্থমন্ত্রী
সংসদ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ০৭:২৫ পিএম
বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ আগের তুলনায় কমে এলেও কোনো ঘাটতি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধিসহ রেমিট্যান্সের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য কাজিম উদ্দিন আহম্মেদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এ তথ্য জানান।
মন্ত্রী বলেন, আইএমএফ’র বিপিএম৬ অনুযায়ী গত ১২ অক্টোবর পযন্ত— স্থিতির ভিত্তিতে দেশে বর্তমানে গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ২১ হাজার ১১৬ দশমিক ৫৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। কোভিড-১৯ পরবর্তী বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধজনিত আন্তর্জাতিক পণ্য সরবরাহের অনিশ্চয়তার কারণে সৃষ্ট দেশের বহির্খাতের চাপ মোকাবিলা করে রিজার্ভের সন্তোষজনক স্থিতি বজায় রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। পদক্ষেপগুলোর মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার অধিকতর বাজারমুখীকরণ ও একাধিক হারের পরিবর্তে একক হারের দিকে ধাবিত হওয়ার জন্য পর্যায়ক্রমিক পদক্ষেপ নেওয়া।
তিনি বলেন, আমদানিকৃত পণ্যের মূল্যের সঠিকতা যাচাইয়ের নিমিত্তে একই সার্কুলার ২০২২ সালের ১৪ জুলাই এবং একই সার্কুলার ২৯ জুলাই জারি করা হয়েছে। এগুলো প্রতিপালনে প্রতিনিয়ত তদারকি চলছে। অপ্রত্যাবাসিত রপ্তানি আয় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রত্যাবাসনের জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা প্রদানের সার্কুলার জারি করা হয়েছে। আর সরকারি বৈধপথে পাঠানো রেমিট্যান্সের বিপরীতে ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে আন্ডার-ইনভয়েসিং ও ওভার-ইনভয়েসিং বন্ধের জন্য কার্যকরী মনিটরিং ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্র অর্জিত হয়নি: সৈয়দ আবু হোসেনের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২৪) অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে চার লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং স্ট্যাম্প শুল্ক বাবদ অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের নিজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ১৩ হাজার ৬১৭ দশমিক ৫৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের মোট রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার লাখ ৪৩ হাজার ৬১৭ দশমিক ৫৭ কোটি টাকা।
তিনি বলেন, গত অর্থবছরে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। ২০২২-২৩ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৮৭৮ দশমিক ৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের স্ট্যাম্প শুল্ক বাবদ ১৩ হাজার ৮৭৮ দশমিক ৭০ কোটি টাকা।
মন্ত্রী বলেন, এর বিপরীতে আহরিত হয়েছে ৩ লাখ ৩৫ হাজার ৫৯৯ দশমিক ৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ৩ লাখ ৩১ হাজার ৫০২ দশমিক ৫ কোটি এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের স্ট্যাম্প শুল্ক বাবদ ৪ হাজার ৯৭ কোটি টাকা। গত অর্থবছর (২০২২-২৩) শেষে লক্ষ্যমাত্রার ৮৭ দশমিক ৪২ শতাংশ রাজস্ব অর্জিত হয়েছিল বলে জানান তিনি।
প্রবৃদ্ধি অর্জন : বেনজীর আহমদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে অথনৈতিকভাবে বাংলাদেশের প্রভূত অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। প্রায় ১৫ বছরের পথ-পরিক্রমায় আমরা এরই মধ্যে নিম্নআয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তীর্ণ হয়েছি এবং স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছি।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে ২০০৯ থেকে ২০২২ অর্থবছর মেয়াদে গড়ে ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। যেখানে উন্নয়নশীল দেশগুলোর গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ১ শতাংশ। একই সময়ে মাথাপিছু জিএনআই গড়ে ৯ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
জাপানের অনুদান : এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানবসম্পদ উন্নয়নে ২০২৩ সালে জাপান আর্থিক অনুদান দিয়েছে। অনুদানের পরিমাণ ৪৭২ মিলিয়ন জাপানিজ ইয়েন (আনুমানিক ৩ দশমিক ৩৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)।
টিআইএনধারী : নূরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশে ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বরধারীর সংখ্যা ৯৩ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬৯ জন (সেপ্টেম্বর পর্যন্ত)। আয়কর আইন অনুযায়ী স্পষ্ট ট্যাক্স নির্ধারণ বাতিল করা হয়েছে।