শিল্প খাতের অবকাঠামা উন্নয়নে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বৈদেশিক মুদ্রায় দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দিতে গঠিত তহবিলের সুদের হার ২ শতাংশের সামান্য বেশি কমানো হয়েছে।
বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে আলোচ্য তহবিলের সুদের হার কমানোর বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের জানানোর জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, এ দফায় গড়ে ঋণের সুদের হার কমবে ২ থেকে এর কিছু বেশি। এখন গড়ে সুদ দিতে হবে সাড়ে ৫ শতাংশ। আগে দিতে হতো সাড়ে ৭ শতাংশ বা আরও বেশি। সুদের এ হার ১ জুলাই থেকেই কার্যকর হবে।
সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে শিল্প খাতের অবকাঠামো উন্নয়নে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের বৈদেশিক মুদ্রায় কম সুদে ঋণ দিতে ৪২ কোটি ডলারের সমপরিমাণ ৪ হাজার ৬৪১ কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে। টাকার অবমূল্যায়নের কারণে বর্তমানে তহবিলের আকার বেড়েছে। ২০২০ সালে এ তহবিলের আকার ছিল ৩ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে প্রথম এ তহবিলটি গঠন করা হয়। পরে এর মেয়াদ বাড়ানো হয়। আগামী বছরের ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত এর মেয়াদ রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, এই তহবিলের মেয়াদ দুই দফায় বাড়ানো হয়েছে। চাহিদা থাকলে আরও বাড়ানো হতে পারে।
আগে এ তহবিলের ঋণের সুদের হার নির্ধারিত হতো ছয় মাস মেয়াদি ডলার বন্ডের লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অফার রেট বা লাইবরের ভিত্তিতে। বর্তমানে লাইবর রেট ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ। এর সঙ্গে আরও সুদ যোগ করে সুদের গড় হার পড়ত সাড়ে ৭ শতাংশের বেশি। এ কারণে এ তহবিল থেকে ঋণের সুদের হারে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন যুক্তরাষ্ট্রে ৬ মাস মাস মেয়াদি ডলার বন্ডের সোফর রেটের ভিত্তিতে এর সুদ হার নির্ধারিত হবে। বর্তমানে সোফর রেট সাড়ে ৫ শতাংশর কাছাকাছি ওঠানামা করছে। ফলে উদ্যোক্তারা ওই সুদ হারে ঋণ পাবেন।
এ তহবিলটি পরিচালনার জন্য কেন্ত্রীয় ব্যাংকে ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন অ্যান্ড ফিন্যান্সিং ফ্যাসিলিটি (আইপিএফএফ) প্রজেক্ট সেল একটি বিভাগ গঠন করা হয়েছে। এ বিভাগ থেকে এটি পরিচালিত হচ্ছে। এ তহবিল থেকে ঋণ দিতে ১৪টি ব্যাংক ও ৭টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। তারা ওই তহবিল থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় উদ্যোক্তাদের ঋণ দিচ্ছে। দেশের ভেতর থেকে অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য পণ্য ক্রয় করা হলে অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় মুদ্রায়ও ঋণ দেওয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ৪২ কোটি ডলারের তহবিলের মধ্যে ৬ কোটি ডলার দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বাকি ৩৬ কোটি ডলার দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তহবিল থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। তহবিলটি আবর্তনশীল বলে সুদসহ যেসব ঋণ পরিশোধ করা হচ্ছে সেগুলো আবার তহবিলে যোগ হয়ে এর আকার বেড়ে যাচ্ছে। এগুলো থেকে পরে আবার নতুন উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়া হচ্ছে।