ব্যাংকগুলো বেশি সতর্ক, সাইবার হামলা চালাতে পারেনি হ্যাকাররা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৩, ১০:৫০ পিএম
প্রতীকী ছবি
বাংলাদেশের ডিজিটাল জগতে ১৫ আগস্ট সাইবার হামলার হুমকি দিলেও হ্যাকার গ্রুপ সফল হয়নি। তারা হামলা চালাতে পারেনি। তবে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। হামলার হুমকি মোকাবিলায় দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেছে।
তবে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের ওয়েবপেজ কারিগরি ত্রুটির কারণে ডাউন হয়ে আছে। এ ছাড়া কিছু প্রতিষ্ঠান হামলা এড়াতে সার্ভার ব্যবহার সীমিত রেখেছে। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান অথবা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো সুরক্ষিত আছে। একই সঙ্গে সার্ট থেকে সতর্কতা অব্যাহত রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম (সার্ট) ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরামর্শ নিয়েছে।
গত ৩ আগস্ট একটি হ্যাকার গ্রুপ ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের ডিজিটাল জগতে সাইবার হামলার হুমকি দিয়েছিল। তাদের হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে সার্ট থেকে সতর্কতা জারি করা হয় ৪ আগস্ট। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করে দেওয়া হয়। সতর্কতার ফলে গত ১৫ আগস্ট পর্যন্ত তারা কোনো হামলা চালাতে পারেনি। তবে সার্ট থেকে সতর্কতা অব্যাহত রাখা হয়েছে। সার্ট থেকে সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের অনলাইন সিস্টেমস ও সার্ভার সার্বক্ষণিকভাবে তদারকি করেছে।
সূত্র জানায়, একটি হ্যাকার গ্রুপ মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় দাবি করেছে তারা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের সার্ভার হ্যাক করে করেছে। কিন্তু এ বিষয়ে সার্ট কোনো তথ্য পায়নি। সার্ট থেকে তাদের আইটি ডায়াগনোসিস ল্যাবে গবেষণা করে এমন কোনো তথ্য পায়নি। কোনো প্রতিষ্ঠান থেকেও তাদের কাছে কোনো অভিযোগ করা হয়নি। তবে কিছু সার্ভার ডাউন (প্রবেশাধিকার সীমিত) করে রাখা হয়েছে। সেগুলো হ্যাকিং নয়।
এদিকে সার্ট থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে আবার সাইবার অডিট কার্যক্রম অরিচেই শুরু করা হবে। সাইবার নিরাপত্তায় যেসব প্রতিষ্ঠানের ঘাটতি রয়েছে সেগুলোকে শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার নির্দেশনা দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও সাইবার নিরাপত্তায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাইবার অডিটের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। কোনো পরিদর্শক দল ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তদন্তে গেলে তাদেরকে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টিও দেখতে বলা হয়েছে।
ব্যাংকগুলো বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সতর্কতা অবলম্বন করেছে। যে কারণে এ ধরনের লেনদেনে কিছুটা ধীরগতিও রয়েছে। কারণ সতর্কতার কারণে লেনদেনর আগে বিকল্প মাধ্যমেও বার্তা আদান-প্রদান করা হচ্ছে। সফটওয়্যার হালনাগাদ করতে ও নিরাপত্তার জন্য কিছু সময় জাতীয় নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্র, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ কিছু প্রতিষ্ঠানের সেবা বন্ধ ছিল। এর মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্রের অনলাইন সেবা শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওয়েবভিত্তিক কিছু সেবা গত ১৪ আগস্ট রাত ৮টা থেকে ১৬ আগস্ট রাত ৮টা পর্যন্ত বন্ধ রাখে। সফটওয্যার হালনাগাদ করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ পদক্ষেপ নিয়েছে।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সার্ট গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আলাদা একটি সাইবার ইউনিট গঠন করা হয়েছে। তারা সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করছে। এ ছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছে। ব্যাংকগুলোও নিজস্বভাবে সাইবার রেসপন্স টিম গঠন করেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, সামরিক বাহিনী, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাইবার টিম গঠন করা হয়েছে।