ফুল-শব্দটি একবাক্যে ভালোবাসা ও সৌন্দর্যের প্রতীক। সুঘ্রানে এটি ছড়িয়ে দেয় অন্যরকম আবেশ। কিন্তু সেই ফুল থেকেই যদি বের হয় গলিত মাংস, ঘাম ও পচা আবর্জনার মতো গন্ধ-তাহলে বোধহয় সহজেই কেউ সেই ফুলের ধারেকাছেও যাবে না। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী সিডনিতে ঘটেছে ভিন্ন ঘটনা।
একটি বিরল ও বিপন্ন উদ্ভিদের ফুল ফোটার পর একটি গ্রিনহাউজে শত শত দর্শনার্থীরা ভিড় জমিয়েছে। বৃহস্পতিবার ফুলটি ফুটেছে। উদ্ভিদ থেকে বের হওয়া দুর্গন্ধই যেন মন মাতাচ্ছে দর্শকদের। এই উদ্ভিদটির নাম ‘লাশ ফুল’ বা বৈজ্ঞানিক ভাষায় অ্যামোরফোফ্যালাস টাইটানাম। সিএনএন।
ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রার বনাঞ্চল থেকে এসেছে এই উদ্ভিদটি। সিডনির রয়্যাল বোটানিক গার্ডেনের কর্মীরা আদর করে এর নাম দিয়েছেন ‘পুট্রিসিয়া’। সপ্তাহজুড়ে পুট্রিসিয়া তার ‘গথিক’ প্রদর্শনী দিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ১৫ বছরের মধ্যে এই বাগানে প্রথমবারের মতো এই উদ্ভিদে ফুল এসেছে।
সপ্তাহজুড়ে প্রায় ২০ হাজার দর্শনার্থী গাছটির পাশে দাঁড়িয়ে সময় কাটিয়েছেন। পুট্রিসিয়ার প্রভাবশালী ‘ভক্তরা’ নিজেদের পরিচয় দেন ‘পুট্রিসিয়ান’ হিসাবে। দর্শকদের জন্য সেখানে লাল গালিচা ও ভেলভেট দড়ি দিয়ে সজ্জিত স্থানে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এই উদ্ভিদের ফুল ফোটার প্রক্রিয়া প্রাকৃতিকভাবে সাত থেকে দশ বছর সময় নেয়।
বোটানিক্যাল গার্ডেনের মুখপাত্র সোফি ড্যানিয়েল বলেন, এই উদ্ভিদ খুবই ধীরগতিতে বিকাশ লাভ করে। কারণ এরা নিজের পরাগায়ন করতে পারে না। তাই প্রাকৃতিক পরিবেশে বংশবৃদ্ধির জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
পুট্রিসিয়া ৭ বছর আগে বাগানে আনা হয়েছিল। ডিসেম্বরে যখন এটি প্রথম খুঁজে পাওয়া যায়, তখন এর উচ্চতা ছিল মাত্র ২৫ সেন্টিমিটার। বৃহস্পতিবার তা বেড়ে দাঁড়ায় ১.৬ মিটার এবং এর পুষ্পমঞ্জরি উন্মোচিত হয়। বাগান কর্তৃপক্ষ ভিড় সামলাতে বাধা দেওয়া শুরু করে। দর্শনার্থীরা ফুলের কাছাকাছি যেতে চেয়েছে, কেউ কেউ ফুলের সামনে সেলফি তুলেছে, কেউ আবার ঝুঁকে ঘ্রাণ নিয়েছে। এক তরুণী পুট্রিসিয়ার সামনে মাথানত করে অভিবাদন জানান।
ফুল ফোটার সময় পুট্রিসিয়ার তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়, যা পচা গন্ধ ছড়াতে সাহায্য করে। এই গন্ধ মাছি ও মাংসাশী পোকামাকড়কে আকৃষ্ট করে, যারা ভিতরে ডিম পাড়ে।
এরপর উদ্ভিদটি পরাগায়নের মাধ্যমে প্রজাতি সংরক্ষণের কাজ শুরু হবে। বাগান কর্তৃপক্ষ ভেবেছিল দর্শনার্থীদের জন্য বমির ব্যাগ সরবরাহ প্রয়োজন হবে। তবে শেষ পর্যন্ত তা করা লাগেনি। সোফি ড্যানিয়েল বলেন, এখন পর্যন্ত কেউ গুরুতর ক্ষতির সম্মুখীন হয়নি।