
প্রিন্ট: ১২ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:২৩ পিএম
আফ্রিকায় যেভাবে পালিত হয় রমজান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২৫, ১০:১৭ এএম

ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন
বিশ্বের মুসলিমদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র মাস রমজান। এটি এমন একটি মাস যে মাসে সময়ের ছন্দ বদলে যায়। ধৈর্য এবং উদারতা ব্যস্ততাকে ছাপিয়ে যায়। দিনের ব্যস্ততম সড়কগুলো শান্ত হয়ে যায় আর রাত পার হয় ইবাদতে।
পবিত্র রমজান মাসের আচার-অনুষ্ঠানগুলো অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যেও যেন মিশে যায়। আফিকাও এর ব্যতিক্রম নয়, যেখানে এক বিলিয়ন মানুষের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ মুসলিম।
সপ্তম শতাব্দীতে মহানবী (স.) এর সময় ইসলাম প্রথম মধ্যপ্রাচ্য থেকে আফ্রিকা মহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় ১,৪০০ বছর পরে, এটি উত্তর আফ্রিকার পাশাপাশি চাদ, গাম্বিয়া, সেনেগাল, সোমালিয়া এবং সুদানে সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্ম।
চলুন জেনে নেওয়া যাক সেনেগাল, নাইজেরিয়া এবং দক্ষিণ আফিকায় কীভাবে উদযাপিত হয় রমজান মাস।
নাইজেরিয়া
আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল দেশ নাইজেরিয়া। মহাদেশটির সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মুসলিম বসবাস করে এই দেশে। প্রধানত মুসলিম উত্তরাঞ্চলীয় অঞ্চলগুলোতে বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীর বাস, যার মধ্যে প্রধান হাউসা এবং ফুলানি।
রমজান মাসে, উত্তরের ব্যস্ত শহরগুলোর কর্মকাণ্ড ধীর হয়ে যায় কারণ বেশিরভাগ মানুষ তাপ এড়াতে এবং বক্তৃতা বা কুরআন পাঠের মতো ধর্মীয় কার্যকলাপে মনোনিবেশ করার জন্য ঘরে বসে থাকে।
প্রতি বছর সাধারণত ঈদ উপলক্ষ্যে দেশটিতে একটি দরবার উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। দরবার হলো সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এবং অশ্বারোহী অনুষ্ঠান যা শতাব্দী ধরে হাউসাদের মধ্যে জনপ্রিয়। আজকের দিনের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি হলো কানো সিটি দরবার, যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ স্টাইলিশ ঈদের পোশাক পরে প্রায়শই ঘোড়ায় চড়ে আমিরকে দেখার জন্য সমবেত হন।
সেনেগাল
পশ্চিম আফ্রিকার ফ্রাঙ্কোফোন দেশ সেনেগালের জনসংখ্যার ৯৭ শতাংশই মুসলিম। দেশটি তার ‘তোরঙ্গা’ সংস্কৃতির জন্য পিরিচিত-এটি একটি উওলোফ শব্দ যার অর্থ ‘উদারতা’, ‘আতিথেয়তা’ এবং ‘ভাগাভাগি’।
স্থানীয়দের মতে, দেশটিতে কেবল একজন পথচারীর কাছে নিকটতম রেস্তোরাঁর দিকনির্দেশনা জানতে চাইলেই তিনি আপনাকে একটি ব্যক্তিগত পারিবারিক ডিনারের আমন্ত্রণ জানাতে পারে।
হাওকেন বলেন, রমজান মাসে শহরগুলো শান্ত হয়ে যায় এবং তেরাঙ্গা এবং দান করার সংস্কৃতি বৃদ্ধি পায়। তিনি আরও বলেন, এখানে কেউ ক্ষুধার্ত থাকে না কারণ সবারই কিছু না কিছু ভাগ করে নেওয়ার আছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা
দক্ষিণ আফ্রিকায় মুসলিমদের সংখ্যা খুবই কম, দেশের জনসংখ্যার মাত্র ২ শতাংশ। কিন্তু তারা দৃশ্যমান সংখ্যালঘু, বিশেষ করে কেপটাউনে, যেখানে ১৬০০ সালে ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রথম মুসলিমরা এসেছিলেন। অনেক দক্ষিণ আফ্রিকান মুসলিম তাদের পূর্বপুরুষদের দাসত্বপ্রাপ্ত মানুষ এবং চুক্তিবদ্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে পরিচিত বলে মনে করেন যাদের পশ্চিমা উপনিবেশবাদীরা মহাদেশে নিয়ে এসেছিল।
যখন তারা এসেছিলেন, তখন তারা তাদের সঙ্গে আচার-অনুষ্ঠান নিয়ে এসেছিলেন, যার মধ্যে রমজান এবং ঈদের আগে চাঁদ দেখার ঐতিহ্যও ছিল।
কেপটাউনের রয়টার্সের একজন আলোকচিত্রী এসা আলেকজান্ডার বলেছেন, রমজান শহরের একটি বিশেষ সময়। যদিও কেপ ফ্ল্যাটস এলাকার মতো কিছু অংশ উচ্চ মাত্রার অপরাধ এবং দারিদ্র্যের জন্য পরিচিত, সে এলাকার পরিস্থিতিও রমজান মাসে শান্ত থাকে বলে জানান তিনি।
আলেকজান্ডার আলজাজিরাকে বলেন, ‘সময়টা এমন যেন মানুষ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেয়, আর তুমি বাতাসে প্রশান্তি অনুভব করতে পার। এ সময় মানুষকে একত্রিত করে। উদাহরণস্বরূপ- আমাদের সম্প্রদায়ে অনেক রাস্তার ইফতার এবং অনেক এনজিও এবং অন্যান্য সংস্থা আসছে, যারা দরিদ্রদের খাবারের পার্সেল এবং খাবার বিতরণ করছে।