Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

কুরআনের আলোকে সুখী পরিবার

Icon

সাইয়েদ আল আমিন

প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কুরআনের আলোকে সুখী পরিবার

একটি আদর্শ পরিবার বা পরিবারের সবাই যেন উন্নত ও আদর্শবান হয়ে গড়ে উঠতে পারে, এ ব্যাপারে ইসলামের সুনিপুণ নির্দেশনা রয়েছে। পরিবার গঠনে প্রথম কাজ হচ্ছে, একজন পুণ্যবতী স্ত্রী পাওয়া। যার মাধ্যমে পরিবারের সবাই পাবে ইসলাম মেনে চলার উদ্দীপনা এবং হৃদয়ে আসবে প্রশান্তির পরশ।

আল্লাহতায়ালা এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আর তার অনুগ্রহসমূহের একটি হচ্ছে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন। যাতে করে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাকতে পার। আর তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া প্রবণতা করে দিয়েছেন। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্য নিদর্শনাবলি রয়েছে’। (সূরা আর রুম-২১)।

সন্তানদের আখলাক ও আচরণের অনেকটাই নির্ভর করে সন্তানদের প্রতি মায়ের আচরণ কিংবা পরিবারের শাসনের ওপর। এ জন্যই ইসলামে উত্তম স্ত্রী গ্রহণের নির্দেশনা এসেছে। নবি (সা.) বলেছেন ‘চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ রেখে নারীদের বিয়ে করা উচিত, তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার সৌন্দর্য এবং তার দ্বীনদারিতা। অতএব, তুমি তার দ্বীনদারিতাকেই প্রাধান্য দেবে অন্যথায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে’। (সহিহ বুখারি-৫০৯০)।

প্র্যাকটিসিং ইসলাম বা ইসলামের সব অনুশাসন সুন্দরভাবে মেনে চলার জন্য পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আশপাশের মানুষজন বা প্রতিবেশী যদি ইসলামি আদর্শের মূল্যায়ন না করে কিংবা তারা ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হয়, তাহলে এর প্রভাব ছোট বাচ্চাদের ওপর পড়বে। উপরন্তু পরিবারের অন্য সদস্যরাও এতে প্রভাবিত হতে পারে। যা আদর্শ ইসলামি পরিবার গঠনে অন্তরায় তৈরি হতে পারে। সে বিষয়ে সতর্কতা স্বরূপ হাদিসের বর্ণনা পাওয়া যায়, নবিজি (সা.) বলেছেন ‘অসৎ সঙ্গীর চেয়ে একাকী থাকা উত্তম আর একাকী থাকার চেয়ে সৎ সঙ্গী উত্তম’। (সহিহ বুখারি-২৪৩৯)। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ তার সঙ্গীর ধর্ম তথা স্বভাব চরিত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়, সুতরাং কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে তা যেন যাচাই বাছাই করে নেয়’। (তিরমিযি শরিফ-২৩৪৭)।

এছাড়া পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন ‘হে মুমিনরা, আল্লাহকে ভয় করো এবং তোমরা সৎ লোকদের সাথি হও’। (সূরা তাওবা-১১৯)। ভালো কাজের চর্চা করা ও মন্দ বিষয় পরিহার করা এবং পরিবারে ইসলামি বিধিনিষেধ নিয়ে সবার খোলামেলা আলোচনা করা উচিত। একটি বাচ্চা যদি ছোট থেকেই শিখতে পারে যে, সালাত আদায় প্রতিটি মুসলিমের জন্য অপরিহার্য এবং পরিবারের সবাই সালাতের প্রতি যত্নশীল তাহলে বাচ্চাটি নিয়মিত সালাত আদায় করবে। তদ্রুপ, যদি মিথ্যা বলা, গিবত করা, এসব মন্দ কাজগুলো পরিবারের সবাই পরিহার করে তাহলে বাচ্চাটি অনায়াসে এসব থেকে বিরত থাকবে। এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা স্বরূপ হাদিসে সন্তানদের ৭ বছর বয়স থেকেই সালাত আদায়ের আদেশ করতে বলা হয়েছে। নবি (সা.) বলেছেন ‘তোমরা সন্তানকে ৭ বছর থেকেই সালাত শিক্ষা দাও এবং ১০ বছর বয়স থেকে সালাত আদায়ের জন্য তাকে প্রহার করো’ (আবু দাউদ-৪৯৪)।

পরিবারকে কর্মঠ ও গতিশীল করার জন্য সবাইকে নিয়মানুবর্তিতার শিক্ষা দিতে হবে। অযথা সময় নষ্ট করা কিংবা অকল্যাণ বয়ে আনে এমন কাজে নিয়োজিত থাকার অসাড়তা তুলে ধরতে হবে। সুমহান ধর্ম ইসলাম সর্বদাই অনর্থক কাজে সময় নষ্ট করাকে অসুন্দর মনে করে। রাসূল (সা.) বলেছেন ‘মানুষের জন্য ইসলামের সৌন্দর্য হচ্ছে, যা অনর্থক ও অপ্রয়োজনীয় তা বর্জন করা’। ( তিরমিযি, বুলুগুল মারাম, হাদিস : ১৪৮৯)।

একটি আদর্শ পরিবারে পারস্পরিক সুসম্পর্ক ও শ্রদ্ধাবোধ থাকা জরুরি। ছোটরা বড়দের থেকে শিখবে এ মূলনীতির আলোকে পরিবার গড়ে তুলতে হবে। একটি শিশুকে যদি বকা দেওয়া হয় তাহলে সে বকা দেওয়া শিখবে। পক্ষান্তরে শিশুটিকে নবির সুন্নাহ অথবা ভালো ব্যবহার করা শিক্ষা দিলে বাচ্চাটি সে কাজটিই করবে। বড়দের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা করা শিক্ষা দেওয়ার জন্য বড়দের কর্তব্য হচ্ছে শিশুটির প্রতি ভালোবাসা ও মমত্ব দিয়ে সুন্দর আচরণ করা। বড় ও ছোটদের সুন্দর আখলাক শিক্ষা দেওয়ার জন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘যে আমাদের ছোটদের স্নেহ করে না এবং আমাদের বড়দের হক সম্পর্কে অজ্ঞাত সে আমাদের দলভুক্ত (মুসলিম) নয়’। (আদাবুল মুফরদ-৩৫৪)।

সাধারণত পাপের সূচনা হয় মিথ্যা দিয়ে। ধীরে ধীরে পাপ হৃদয়কে কলুষিত করে তোলে। প্রথম প্রথম পাপ বা মন্দকাজ করে ফেলার পর অপরাধবোধ কাজ করে। কিন্তু এভাবে অনবরত পাপ করার ফলে হৃদয় থেকে আল্লাহর ভয় ও রাসূলের ভালোবাসা কমে যায়। তখন মানুষ আরও বড় গোনাহে লিপ্ত হয়। তাই পরিবারে মিথ্যা না বলা এবং কাউকে বলতে না দেওয়ার প্রতি যথেষ্ট সতর্কতা প্রয়োজন।

সর্বোপরি, একজন পবিত্র জীবনসঙ্গী/সঙ্গিনী, শিশুদের আদব ও তরুণদের আখলাক শিক্ষা দেওয়া। নিজেরা ইসলামি অনুশাসনগুলো মেনে চলা এবং বাচ্চাদের সে পথে পরিচালিত করার মাধ্যমে একটি পররিবার তার সার্থকতা খুঁজে পাবে এবং অনাবিল শান্তিতে দুনিয়া/আখিরাত উভয় জগতের সফলতা অর্জন করবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম