দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতে যা বলা হলো
মো. জাকির হোসেন, লুৎফুজ্জামান লিটন ও মো. আনোয়ার হোসেন, টঙ্গী (গাজীপুর)
প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৫:৪২ পিএম
ইজতেমা মাঠসংলগ্ন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বসে অনেকে মোনাজাতে অংশ নেন। ছবি: যুগান্তর
বিশ্বের মুসলমানদের নিরাপত্তা, ঐক্য, সম্প্রীতি, মুক্তি, শান্তি এবং ইহ ও পারলৌকিক কল্যাণ কামনায় রোনাজারি ও আকুতি-মিনতিপূর্ণ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে রোববার শেষ হয়েছে এবারের বিশ্ব ইজতেমার ৫৭তম আসর।
গভীর ভাবাবেগপূর্ণ পরিবেশে ‘আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন’ ধ্বনিতে সকালের আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে মহামহিম ও দয়াময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে অপার করুণা ও অশেষ রহমত কামনা করেছেন দেশ-বিদেশের অগণিত ধর্মপ্রাণ মুসলমান।
লাখো মানুষের কাঙ্ক্ষিত আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন দিল্লির মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ কান্ধলভী। তিনি বিশ্ব তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বি মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বড় ছেলে।
বেলা ১১টা ১৭ মিনিটে শুরু করে ১১টা ৪৩ মিনিট পর্যন্ত দীর্ঘ ২৬ মিনিট স্থায়ী আবেগঘন আখেরি মোনাজাতে অযুতকন্ঠে উচ্চারিত হয়েছে রাহমানুর রাহীম আল্লাহর মহত্ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব। মনীব-ভৃত্য, ধনী-গরির, নেতাকর্মী নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষ পরওয়ারদেগার আল্লাহর দরবারে দুহাত তুলে নিজ নিজ কৃতকর্মের জন্য নি:শর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
জনসমুদ্র থেকে সকালের আকাশ কাঁপিয়ে ধ্বনি উঠে- আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন’। মুঠোফোনে, রেডিও এবং স্যাটেলাইট টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের সুবাধে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মানুষ একসঙ্গে হাত তুলেছেন পরওয়ারদিগারের শাহী দরবারে। গুনাহগার, পাপি-তাপি বান্দা প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা চেয়ে কান্নায় বুক ভাসিয়েছেন। দেশের ৬৪ জেলার লাখ লাখ মুসল্লি ছাড়াও বিশ্বের ৬৫টি দেশের ৯ হাজার ২৩১ জন তাবলিগ অনুসারী মুসল্লি আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন।
সকাল থেকে দিকনির্দেশনামূলক বয়ানের পর লাখো মানুষের প্রতীক্ষার অবসান ঘটে বেলা ১১টা ১৭ মিনিটে। জনসমুদ্রে হঠাৎ নেমে আসে নি:স্তব্ধতা ও পিনপতন নীরবতা। যে যেখানে ছিলেন সেখানে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে হাত তুলেন আল্লাহর দরবারে।
২৬ মিনিটের মোনাজাতে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ কান্ধলভী প্রথম ১২ মিনিট মূলত পবিত্র কোরআনে বর্ণিত দোয়ার আয়াতগুলো উচ্চারণ করেন। শেষ ১৪ মিনিট তিনি আরবি-উর্দু ভাষার সংমিশ্রণে দোয়া করেন।
মোনাজাতে তিনি বলেন, হে আল্লাহ, আমাদের ওপর রহম করেন। হে আল্লাহ, আপনি সকল ক্ষমতার অধিকারী, সর্বশ্রোতা, দয়ালু। আপনি আমাদের গুনাহকে মাফ করে দেন। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের প্রয়োজন মিটিয়ে দেন। হে আল্লাহ, আমাদের ইমানের হাকিকত ও কামাল নসিব করে দেন। হে আল্লাহ, আমাদেরর ইমানী জিন্দেগী নসিব করে দেন। হে আল্লাহ, ওলামাদের কদর করার তৌফিক দান করুন। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের হয়ে যান, আমাদের আপনার করে নেন। হে আল্লাহ, সারা দুনিয়ায় ইসলামকে জিন্দা করে দেন। হে আল্লাহ সারা বিশ্বের মুসলমানকে হেফাজত করেন, ইসলামের হেফাজত করেন। হে আল্লাহ, ইমানের সঙ্গে মউত নসিব করে দেন।
আরও পড়ুন: মাওলানা সাদ আসলে ২৫ হাজারের বেশি বিদেশি মেহমান আসত
হে আল্লাহ, সারাজীবন যেন আপনার হাবিবের সুন্নতের উপর চলতে পারি সেই তৌফিক দান করেন। হে আল্লাহ, নাফরমানি থেকে আমাদের হেফাজত করেন। হে আল্লাহ, একে অপরকে ভালোবাসতে পারি সেই তৌফিক দান করুন। হে আল্লাহ, আমাদের মাঝ থেকে গাফিলতি দূর করে দেন। হে আল্লাহ, সাহাবাদের মতো ঈমানী জিন্দেগি দান করেন। হে আল্লাহ, আমাদের জীবন মুমিন ও কামেল ওলিদের মতো করে দেন। হে আল্লাহ, আমাদের আখলাককে সুন্দর করে দেন। হে আল্লাহ, অন্তরের সব খারাবি দূর করে দেন। হে আল্লাহ, সকল মুসলমানের ইমান-আমল, জান-মাল, ইজ্জত-আব্রুকে হেফাজত করেন। হে আল্লাহ, দাওয়াতের কাজকে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দেন।
হে আল্লাহ, ইজতেমাকে সারা দুনিয়ার মানুষের হেদাতের জরিয়া হিসেবে কবুল করেন। হে আল্লাহ, রোগে আক্রান্তদের শেফা দান করেন। হে আল্লাহ, যারা দোয়া চেয়েছে তাদের মনের আশা পূরণ করুন। হে আল্লাহ, ইজতেমায় বয়ানকারী, শ্রোতা, অংশগ্রহণকারী ও সহযোগিতাকারী সবাইকে কবুল করেন। হে আল্লাহ, ইজতেমাকে সফল করার জন্য যতরকম কাজ করা হয়েছে সবগুলোকে আপনি কবুল করেন। হে আল্লাহ, বাংলাদেশকে ইজতেমার জন্য কবুল করেন।