Logo
Logo
×

জাতীয়

প্রশাসনে ফের অস্থিরতা

ওএসডি ও বাধ্যতামূলক অবসর আতঙ্কে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা

আমিরুল ইসলাম

আমিরুল ইসলাম

প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:২০ পিএম

ওএসডি ও বাধ্যতামূলক অবসর আতঙ্কে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা

বাংলাদেশ সচিবালয় সচিবালয়। ফাইল ছবি

প্রশাসনে ফের বাড়ছে অস্থিরতা। আতঙ্কে প্রহর গুনছেন বিগত স্বৈরাচারী সরকারের উপদেষ্টা, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং উপমন্ত্রীদের একান্ত সচিবরা (পিএস)। ইতোমধ্যে বিগত সময়ের বিতর্কিত নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করাসহ নানা রকম অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকা কর্মকর্তাদের অনেকেই ফেঁসে গেছেন। এছাড়া বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ মিশন ও পদে পোস্টিং পাওয়া কর্মকর্তারাও আছেন দুশ্চিন্তায়। তারা ওএসডি এবং বাধ্যতামূলক অবসরের ঝুঁকিতে আছেন বলে জানা গেছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন-অপরাধ, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং স্বৈরাচারের ক্ষমতা প্রলম্বিত করতে যারা বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন, তাদের বিচার হবেই। তবে নিরীহ কারও কিছু হবে না। তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। 

এদিকে প্রশাসনে সচিবের শূন্য পদ পূরণে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বর্তমানে ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সচিবের পদ শূন্য। এ বিষয়ে রোববার সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, বিতর্কিত নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য সাবেক জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) মধ্যে কাউকে ওএসডি, কাউকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে যারা অর্থনৈতিক অপরাধ ও দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তালিকা পাঠানো হবে। 

তিনি বলেন, তবে বিভিন্ন সংস্থা এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব অনুসন্ধানে যদি দেখা যায় দুর্নীতি ও আর্থিক অপরাধের ঘটনা সত্য, সেক্ষেত্রে শুধু ওই ব্যক্তির নাম দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানো হবে। এ ধরনের কেস সাধারণ হিসাবে গণ্য হবে না। আর যাদের নামে শুধু অপপ্রচার আছে বা তারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত নন অথবা সাময়িকভাবে ওএসডি হয়েছেন, তাদের কোনো সমস্যা না। এসব বিষয়ে সরকারের কোনো পক্ষপাত নেই। সরকার অত্যন্ত সচেতনভাবে কাজটি করবে, যাতে একজন নিরীহ কর্মকর্তাও কোনো ভাবে অসম্মানিত না হন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিনিয়র সচিব আরও বলেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সাবেক জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) তালিকা গোয়েন্দা সংস্থার কাছে পাঠানো হয়েছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদন আসার পর বিষয়গুলো বিবেচনা করা হবে। 

সিনিয়র সচিব আরও বলেন, এ বিষয়ে চার উপদেষ্টার সমন্বয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি আছে। সেই কমিটিতে গোয়েন্দা প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করা হবে এবং ধীরে সুস্থে সিদ্ধান্ত হবে। পক্ষপাত বা কোনো কিছুর বশবর্তী হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হবে না। সব সিদ্ধান্ত হবে নিয়মনীতির মধ্যে থেকে। একজন কর্মকর্তাও যেন ক্ষতিগ্রস্ত (ভিকটিম) না হন, তা সচেতন ভাবে দেখা হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ইতোমধ্যে বিভিন্ন সময় মোট ৪৩ জন সাবেক ডিসিকে ওএসডি করা হয়েছে। যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছরের কম তাদের ওএসডি করা হয়েছে। আর যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছরের বেশি তাদের বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে। বিতর্কিত নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ২২ জনকে বৃহস্পতিবার বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ পর্যন্ত ১২ জন সচিব, ৫ জন গ্রেড-১সহ ২৯ জন অতিরিক্ত সচিব, একজন যুগ্ম সচিব এবং একজন উপসচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিগত সরকারের সময় উপদেষ্টা, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং উপমন্ত্রীর পিএসদের বিরুদ্ধেও নেওয়া হবে ব্যবস্থা। ওই সব পিএসদের বিরুদ্ধে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগ আছে। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্মচারীদের কাছ থেকে সম্পদ বিবরণী নিয়েছে। তাদের সম্পদ বিবরণী যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। যাদের অর্জিত সম্পদের বৈধ কোনো কাগজপত্র থাকবে না বা যাদের সম্পদ অস্বাভাবিক মনে হবে তাদের নাম দুদকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। দুদক যাচাই-বাছাই করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে। সচিবদের পিএসদের মধ্যে যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়েছেন তারাও ছাড় পাবেন না। তবে শুধু সচিবের পিএস থাকার অপরাধে কাউকে হেনস্তা করা হবে না। এছাড়া যারা বিধিবিধানের ব্যত্যয় ঘটিয়ে প্রভাব খাটিয়ে বিদেশে ভালো পোস্টিংয়ে ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধেও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। 

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা জানান, অনেক কর্মকর্তা চাকরিতে যোগদানের পরই বিদেশে লেখাপড়া করতে গেছেন। চাকরি স্থায়ী হওয়ার আগেই সরকারি খরচে বিদেশে গিয়ে উচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেছেন। আবার বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনে পোস্টিং নিয়ে আয়েশি জীবনযাপন করেছেন। তাদের তালিকা করা হচ্ছে।

এদিকে প্রশাসনে শূন্য থাকা সচিবের পদ পূরণে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. ওবায়দুর রহমানকে সচিব পদে পদোন্নতি দিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করা হয়েছে। এছাড়া আগামী দু-এক দিনের মধ্যে আরও নয়জনকে সচিব পদে পদোন্নতি দিয়ে মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পদায়ন করা হবে। 

এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জানান, চারটি সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের সভায় সচিব পদের জন্য ১২ জনকে নির্বাচন করা হয়েছে। তারা অধিকাংশই যোগ্য ও বঞ্চিত কর্মকর্তা। যাদের বাছাই করা হয়েছে তারা কেউ চুক্তিভিত্তিক নন বরং চাকরিতে কর্মরতদের মধ্যে থেকেই সচিব করা হচ্ছে।

বর্তমানে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, সেতু বিভাগ ও নির্বাহী পরিচালক বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ, পরিকল্পনা কমিশন, জাতীয় সংসদ সচিবালয়, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে কোনো সচিব নেই। কর্মরত অতিরিক্ত সচিবদের মধ্যে থেকে সিনিয়র কর্মকর্তাকে সচিবের রুটিন দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম