দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়ে টানা চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠন করা আওয়ামী লীগ সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন সাধন চন্দ্র মজুমদার। যিনি একাদশেও একই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন।

বৃহস্পতিবার ২৫ জন মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রীকে নিয়োগ দিয়ে নতুন এই মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছে। সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে তাদের শপথ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

নতুন মন্ত্রিসভায় (ক্যাবিনেট) এবার প্রথমবারের মতো ১৪ জন যুক্ত হয়েছেন। এ ছাড়া বাদ পড়েছেন বিদায়ী মন্ত্রিসভার অনেকে। তবে বিদায়ী মন্ত্রিসভার অনেকে নতুন মন্ত্রিসভায়ও ঠাঁই পেয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন সাধন চন্দ্র মজুমদার।

সাধন চন্দ্র মজুমদারের পৈতৃক বাড়ি নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার শিবপুর গ্রামে। তার বাবার নাম কামিনী কুমার মজুমদার ও মায়ের নাম সাবিত্রী বালা মজুমদার। নয় ভাই-বোনের মধ্যে সাধন চন্দ্র মজুমদার অষ্টম। ষষ্ঠ শ্রেণিতে থাকাকালে তিনি বাবাকে হারান।

তিনি নওগাঁ কেডি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং চৌমুহনী সরকারী ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। তিনি নওগাঁ ডিগ্রি কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। চৌমুহনী কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় ১৯৬৭ সালে ছাত্রলীগে যোগ দেন। পেশায় কৃষি ও ব্যবসায়ী সাধন চন্দ্র মজুমদার রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত আছেন। তিনি তৃতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। 

সাধন চন্দ্র মজুমদার ১৯৭৪ সালে চন্দনা রাণী মজুমদারের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। চন্দনা রানী মজুমদার একজন স্কুল শিক্ষিকা ছিলেন। ১৯৯৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর তার স্ত্রী মারা যান। তিনি চার কন্যা সন্তানের জনক।

সাধন চন্দ্র মজুমদার চৌমুহনী কলেজে অধ্যায়নরত অবস্থায় ১৯৬৭ সালে ছাত্রলীগে যোগ দেন।১৯৮৪ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হাজিনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে তিনি হাজিনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন এবং উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, দুইবার প্রচার সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক ও দীর্ঘ দিন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে কাউন্সিলের মাধ্যমে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

সাধন চন্দ্র মজুমদার ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে নওগাঁ-১ আসন থেকে অংশ নেন। তবে তিনি বিএনপির ছালেক চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন। 

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নওগাঁ-১ (নিয়ামতপুর-পোরশা-সাপাহার) থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি নবম জাতীয় সংসদে ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। 

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধীদলগুলো নির্বাচন বয়কট করলে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। দশম জাতীয় সংসদে তিনি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি নওগাঁ-১ থেকে তৃতীয়বারের মতো সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন তিনি। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নওগাঁ-১ থেকে চতুর্থবারের মতো তিনি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এবারও শেখ হাসিনার সরকারের নতুন মন্ত্রিসভায় নিয়োগ পেলেন তিনি।