শাহজালাল বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল পরিচালনা হবে পিপিপিতে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০৫:৫৪ পিএম
পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল।
এ লক্ষ্যে ‘অপারেশন অ্যান্ড মেইন্টেনেন্স অব থার্ড টার্মিনাল অ্যাট হযরত শাহজালাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট’ শীর্ষক প্রকল্পের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো সাংবাদিকদের কাছে বিস্তারিত তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান।
পিপিপিতে থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পের কাজ পাওয়া কোম্পানির নাম এখনো চূড়ান্ত হয়নি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বলেন, আশা করা যাচ্ছে আগামী অক্টোবরে টার্মিনাল উদ্বোধন করা যাবে। সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের আদলে নির্মাণ হচ্ছে এ টার্মিনাল। এরই মধ্যে প্রকল্পের কাজ ৫১ শতাংশের বেশি শেষ হয়েছে। থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় একাধিক দফা বেড়ে প্রায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
এছাড়া ‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জেনারেল এভিয়েশন হ্যাঙ্গার, হ্যাঙ্গার এপ্রোন এবং ফায়ার স্টেশনের উত্তর দিকে এপ্রোন নির্মাণ’ প্রকল্পের পূর্ত কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে ব্যয় হবে ৩৮০ কোটি টাকা। বাস্তবায়নের জন্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে বিইউসিজি, এনডিই এবং অ্যারোনেস বাংলাদেশ নিয়োগ পেয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৩৫০ একর জমির ওপর নির্মাণাধীন থার্ড টার্মিনালে একসঙ্গে থাকবে কেবিন এক্সরে মেশিন ৪০টি, ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ, ১৬টি কনভেয়ার বেল্ট, ১১টি বডি স্ক্যানার ও টানেল। থাকবে ৫৪ হাজার বর্গমিটারের বহুতলবিশিষ্ট কার পার্কিং, নতুন ইমপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স ও ৬৩ হাজার বর্গমিটারের এক্সপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স। এ ছাড়া থাকবে রেসকিউ ও ফায়ার ফাইটিং স্টেশন এবং ৪ হাজার বর্গমিটার ইকুইপমেন্ট স্টেশন।
উড়োজাহাজ চলাচলের জন্য তৈরি হবে ২৪ হাজার বর্গমিটার কানেক্টিং ট্যাক্সিওয়ে (উত্তর), ৪২ হাজার ৫০০ বর্গমিটার কানেক্টিং ট্যাক্সিওয়ে (অন্যান্য) এবং ২২ হাজার বর্গমিটার র্যাপিড এক্সিট ট্যাক্সিওয়ে (উত্তর) ১৯ হাজার ৫০০ বর্গমিটার র্যাপিড এক্সিট ট্যাক্সিওয়ে (দক্ষিণ), ৯৬ হাজার ৫০০ বর্গমিটার সোল্ডার, জিএসই রোড ৮৩ হাজার ৮০০ বর্গমিটার, সার্ভিস রোড ৩৩ হাজার বর্গমিটার ও ড্রেনেজ ওয়ার্কস (বক্স কালভার্ট ও প্রোটেক্টিভ ওয়ার্কস)।
টার্মিনালের চারদিকে থাকবে নিশ্ছিদ্র বাউন্ডারি ওয়াল, সিকিউরিটি গেট, গার্ড রুম ও ওয়াচ টাওয়ার। এর বাইরে ল্যান্ড সাইড, সার্ভিস রোডসহ এলিভেটেড রোড, ওয়াটার সাপ্লাই সিস্টেম, সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, ইনটেক পাওয়ার প্ল্যান্ট ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম, কার্গো কমপ্লেক্সের জন্য সিকিউরিটি ও টার্মিনাল ইকুইপমেন্ট, এয়ারফিল্ড গ্রাউন্ড লাইটিং সিস্টেম, হাইড্রেন্ট ফুয়েল সিস্টেমসহ আনুষঙ্গিক সব সুবিধা থাকবে। এছাড়া অন্যতম আকর্ষণ হিসাবে ফানেল টানেল রাখা হবে।
বেবিচকের তথ্যানুযায়ী, থার্ড টার্মিনালে থাকবে ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজ। প্রথম ধাপে চালু করা হবে ১২টি। থাকবে উড়োজাহাজ রাখার জন্য ৩৬টি পার্কিং বে। ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারের এপ্রোনে একসঙ্গে রাখা যাবে ৩৭টি উড়োজাহাজ। বহির্গমনের জন্য ১৫টি সেলফ সার্ভিস চেকইন কাউন্টারসহ মোট ১১৫টি চেকইন কাউন্টার থাকবে। এছাড়া ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টারসহ থাকবে ৬৬টি ডিপারচার ইমিগ্রেশন কাউন্টার।
আগমনের ক্ষেত্রে পাঁচটি স্বয়ংক্রিয় চেকইন কাউন্টারসহ মোট ৫৯টি পাসপোর্ট ও ১৯টি চেকইন অ্যারাইভাল কাউন্টার থাকবে। এর বাইরে টার্মিনালে ১৬টি আগমনী ব্যাগেজ বেল্ট স্থাপন করা হবে। গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য থার্ড টার্মিনালের সঙ্গে মাল্টিলেভেল কার পার্কিং ভবন নির্মাণ করা হবে। এতে থাকবে ১ হাজার ২৩০টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিমানবন্দরের সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে থার্ড টার্মিনালে।
২০১৯ সালের শেষে শুরু করা নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২৩ সালের জুনে। ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণে এই প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। প্রথমে ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা ধরা হলেও পরে একাধিক দফা বেড়ে প্রায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
নির্মাণকাজে অর্থায়ন করছে জাইকা। আর জাপানের সিমুজি ও কোরিয়ার স্যামসাং যৌথভাবে এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম (এডিসি) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। দুই দেশের চার শতাধিক দক্ষ জনবল কাজ করছেন প্রতিদিন। বিশ্বখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিনের নকশায় টার্মিনালে ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের একটি ভবন তৈরি হবে।