পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আশ্বাস, আগামী বৈঠকে নতুন প্রস্তাব
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৩, ১০:২৭ পিএম
পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকার যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, চলমান পরিস্থিতিতে সেটি আরও বৃদ্ধির আশ্বাস দিয়েছেন কারখানা মালিকরা। মজুরি বোর্ডের পরের বৈঠকে নতুন প্রস্তাব লিখিত আকারে জমা দেওয়া হবে। শ্রমিকপক্ষ ওই প্রস্তাব পর্যালোচনা করে নতুন প্রস্তাব দেবে।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের কার্যালয়ে বুধবার ত্রিপক্ষীয় কমিটির ৫ম বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকে বেতন গ্রেড ৭টি থেকে কমিয়ে ৫টিতে আনার বিষয়ে উভয়পক্ষ ঐক্যমতে পৌঁছেছে।
বৈঠক শেষে ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মোল্লা এসব তথ্য জানান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মালিক পক্ষের প্রতিনিধি বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান এবং শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি।
লিয়াকত আলী মোল্লা বলেন, আজকের (বুধবার) বৈঠকে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে স্পষ্ট কিছু জানানো হয়নি। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে মজুরি বোর্ডের পরবর্তী বৈঠক হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নভেম্বরের মধ্যেই বেতন কাঠামো চূড়ান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কোনো মহলের উসকানিতে কান না দিয়ে কারখানায় ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি। লিয়াকত আলী মোল্লা বলেন, মালিকদের পাশাপাশি শিল্পকে রক্ষা করার দায়িত্ব শ্রমিকদেরও।
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সব পক্ষের অনুরোধের প্রেক্ষিতে মালিকরা বেতন বাড়াতে সম্মত হয়েছেন। কতটুকু বাড়ানো হবে, তা আগামী বৈঠকে লিখিত প্রস্তাব আকারে বোর্ডে উপস্থাপন করা হবে। আগে যে প্রস্তাব দিয়েছি, তার চেয়ে অনেক বেশি বাড়ানো হবে। আগামী বৈঠকেই কাঠামো চূড়ান্ত হতে পারে। তারপরও সরকার আছে, সরকার চাইলে মজুরি আরও বাড়াতে পারে। সরকারের সহযোগিতায় মালিক-শ্রমিক উভয়পক্ষ জয়ী হবে- তেমন সিদ্ধান্তই মজুরি বোর্ড নেবে। সেই পর্যন্ত শ্রমিকদের অপেক্ষা করতে আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, শ্রমিকরা অহেতুক প্ররোচনায় পড়ে কারখানা বন্ধ করছেন, ভাঙচুর চালাচ্ছেন। মালিকরা বিশ্বাস করেন, সাধারণ শ্রমিকরা কখনো নিজের কর্মস্থল ভাঙচুর করতে পারে না। এর পেছনে বাইরের ইন্ধনদাতা আছে।
সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, শ্রমিক আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য কখনোই কাম্য নয়। চলমান পরিস্থিতিতে শ্রম আন্দোলন ও ট্রেড ইউনিয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সুশীল সমাজ, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, শ্রমিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই মজুরি বোর্ডে ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এখন কেউ ২৩ হাজার, কেউ ২৫ হাজার টাকার দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলনের নামে বিপজ্জনক জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে, রাজনৈতিক পরিস্থিতির শিকার বানানো হচ্ছে। একজন শ্রম আন্দোলন কর্মী হিসাবে বর্তমান আন্দোলন সমর্থন করি না।
শ্রমিকদের উদ্দেশে রনি বলেন, আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে কাজে যোগ দিন। বাজারদরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ন্যায্য মজুরি আদায় করা হবে।
এদিকে রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে চলমান পরিস্থিতিতে জরুরি সভা ডাকে সংগঠনটি। এতে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসানের সভাপতিত্বে সংগঠনের সাবেক সভাপতি একে আজাদ, সালাম মুর্শেদীসহ শতাধিক কারখানা মালিক অংশ নেন। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, যেসব কারখানায় শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলনে অংশ নেবেন সেসব কারখানায় শ্রম আইনের ১৩(১) ধারা প্রয়োগ করা হবে।
শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় বলা আছে, কোনো প্রতিষ্ঠান বেআইনি ধর্মঘটের কারণে আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে পারবে। এ ধরনের ক্ষেত্রে ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী শ্রমিকরা কোনো মজুরি পাবেন না। অর্থাৎ শ্রমিকরা কাজ না করলে মজুরি পাবেন না।
ফারুক হাসান বলেন, সরকার যে মজুরি নির্ধারণ করবে, মালিকরা সেই মজুরি দেবেন। কিন্তু তার আগে আন্দোলনের নামে সহিংসতা-ভাঙচুর কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানিমূলক প্রচারণা চালিয়ে ভাঙচুর চালানো হচ্ছে। চলমান পরিস্থিতিতে দেশ ও শিল্পের স্বার্থে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে শ্রম আইনের ১৩(১) ধারা প্রয়োগ করবেন পোশাক মালিকরা। আজ (বুধবার) থেকে বিভিন্ন পোশাক কারখানায় এ নিয়ম কার্যকর হয়েছে।
ফারুক হাসান বলেন, একটি গোষ্ঠী চলমান পরিস্থিতিতে ফায়দা লুটতে চাচ্ছে। আমরা শতাধিক শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা সবাই বলেছে এই আন্দোলনের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা নেই। এই অনৈতিক আন্দোলনে যেসব শ্রমিক নেতা ইন্ধন দিয়েছে, তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করার দাবি জানাই। ইন্ধনে জড়িতদের তথ্যপ্রমাণ গোয়েন্দা সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে।