Logo
Logo
×

ফুটবল

‘ব্যালন ডি’অর, ভিনিসিয়ুস ব্যালন ডি’অর’ চিৎকারে বার্নাব্যুর গ্যালারি

Icon

স্পোর্টস ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৪৩ পিএম

‘ব্যালন ডি’অর, ভিনিসিয়ুস ব্যালন ডি’অর’ চিৎকারে বার্নাব্যুর গ্যালারি

চ্যাম্পিয়নস লিগে গতকাল রাতের বার্নাব্যুর খবর হয়তো আপনার জানা। ২-০ গোলে পিছিয়ে বিরতিতে গিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। ঘুরে দাঁড়ানোর ‘ডিএনএ’ জেগে উঠেছিল তারপরই। দ্বিতীয়ার্ধে রিয়াল নেমেই করেছে ৫ গোল। সেখানে হ্যাটট্রিক করেন ভিনিসিয়ুস। সেটিও যেনতেন হ্যাটট্রিক নয়—কথাটি বলতে হচ্ছে মহাকাব্যিক তার দ্বিতীয় গোলটির জন্য।

আমার মনে হয় ভিনিসিয়ুসই জিতবে এবারের ব্যালন ডি’অর। তবে সেটি গতরাতের পারফরম্যান্সের জন্য নয়; সে গত মৌসুমে যা করেছে, সেটির জন্য। গতরাতের ৩ গোল তাকে পরের ব্যালন ডি’অর জিততে সাহায্য করবে।

সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ততক্ষণে শেষ বাঁশি বেজেছে। কিন্তু গ্যালারিতে উন্মাদনা শেষ হয়নি। টিভিতে সেই উন্মাতাল কোরাস শুনে ও দেখে মনে হতে পারে, পাগলামি ছাড়া কিছু নয়! ভিনদেশি ভাষা তো বোঝা কঠিন। তবে রিয়াল সমর্থকদের শরীরী ভাষার প্রকাশটা বাংলায় অনূদিত করলে মনে হবে— ‘সব সাথীকে খবর দে— ভিনিসিয়ুসকে ব্যালন ডি’অর এনে দে।

৮৬ মিনিটে ভিনি নিজেদের অর্ধে যখন বল পান, বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের গোলপোস্ট থেকে তার দূরত্ব ছিল ৮০ মিটারের। তারপর ভিনির শরীরে কী যেন ভর করল! মহাকাশে ছুটন্ত ‘তারাখসা’র গতিতে একে একে পেছনে ফেললেন সবাইকে। বলে ৯ টাচে এগোলেন ৭০ মিটার। ১০ম টাচে গোল! সেটা ফুটবলীয় প্রতিশব্দ। আসলে তো চোখে মায়াঞ্জন মেখে দেওয়া কোনো মায়াপুরীর মোহ!

বার্নাব্যুর গ্যালারি সেই মোহেই পড়েছিল। শেষ বাঁশি বাজার পরও যা কাটেনি। ‘ব্যালন ডি’অর, ভিনিসিয়ুস ব্যালন ডি’অর’ চিৎকারে মোহগ্রস্ত হওয়ার স্বীকারোক্তিও দিয়েছে বার্নাব্যুর গ্যালারি। এবারের ব্যালন ডি’অর ভিনিকেই দেওয়া হোক— রিয়ালের ভক্তদের এ দাবির সঙ্গে ঠিক একমত হতে পারেননি ভিনিরই সতীর্থ লুকাস ভাসকেজ। তার দাবি— একটু অন্য রকম। ‘ভিনিকে বলেছি, আজ রাতে (গতকাল) প্রতিটি গোলের পর সে-ই ব্যালন ডি’অর। দ্বিতীয়ার্ধে ভিনিসিয়ুসের খেলা সব শিশুকে দেখানো উচিত, তাহলে তারা বুঝতে পারবে— ফুটবল কীভাবে খেলতে হয়।’

তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে ভিনির দ্বিতীয়ার্ধের ভিডিও নিশ্চয়ই সংরক্ষণে রাখা থাকবে। সেই ভিডিও ফাইলের নাম কী হতে পারে? এ বিষয়ে ইনস্টাগ্রামে তা বলে দিয়েছেন তার একসময়ের সতীর্থ করিম বেনজেমা। ব্যালন ডি’অর লিখে পাশেই আগুনের তিনটি হলকা (ইমোজি)। সত্যি বলতে— ৩১ মিনিটের মধ্যে করা হ্যাটট্রিকটি দেখে কেউ যদি আগুন আগুন বলে চিৎকারও করে উঠতেন, তাকে দোষ দিয়ে লাভ হতো না। 

কাল রাতে ব্রাজিলিয়ান তারকার পারফরম্যান্সের ওটাই একমাত্র শিরোনাম—আগুন! সবাই তা পারে না কিংবা সবার পায়েই ওই আগুন ফোটে না। বিশ্বাস না হয় ডর্টমুন্ডের কোচ নুরি সাহিনের মুখেই শুনুন— ‘ভিনি জুনিয়র আমাদের নিয়ে আজ (গতকাল) রাতে (গতকাল) যা করেছে, সেটা দুনিয়ায় খুব কম খেলোয়াড়ই করতে পারে।’

রিয়ালের ‘লা কুইন্তা দেল বুইত্রে’ (দ্য ভালচার)–এর সদস্য এমিলিও বুত্রাগুয়েনোর কথায়— সে আমাকে পেলেকে মনে করিয়ে দেয়। রিয়াল কিংবদন্তি কিন্তু ভিনির দ্বিতীয় গোলের মোহে মজে পেলেকে স্মরণ করেননি। বুত্রাগুয়েনোর চোখে তার তৃতীয় গোল ‘কালো মানিক’–এর প্রতিচ্ছবি, ‘যেভাবে বক্সে ঢুকে ফেইন্ট (শরীরী ছল) করল...পেলেকে মনে পড়েছে।’ গোলটি না দেখে থাকলে আরেকটু বুঝিয়ে বলা যায়। ৪০ গজ দূর থেকে বল পায়ে টান দিয়ে তিন ডিফেন্ডারকে কাটানোর পথে ব্রাজিলিয়ানদের চিরায়ত ‘বডি ফেইন্ট’ করেছেন ভিনিসিয়ুস, তারপর বুলেট গতির শটে গোল।

রিয়াল ক্যারিয়ারে ভিনিসিয়ুসের এটি তৃতীয় হ্যাটট্রিক। উয়েফা জানিয়েছে, চ্যাম্পিয়নস লিগে ব্রাজিলিয়ান খেলোয়াড়ের হ্যাটট্রিকের এটি ২২তম নজির। টুর্নামেন্টটির ইতিহাসে আর কোনো দেশের খেলোয়াড়দের এত বেশি হ্যাটট্রিক নেই।

ফুটবলের মায়াপুরীতে কখনো কখনো এমন রাত নেমে আসে, যখন আপনার মন ও মুখের ওপর আর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন ভিনিসিয়ুসের মতো জাদুকর!

তবে এ পরিসংখ্যান দিয়ে তার গতকাল রাতের পারফরম্যান্স বোঝানো যাবে না। ভিনি নিজেও হয়তো বোঝাতে পারবেন না। তার কাছে বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে রিয়ালের মায়াপুরীতে দর্শকদের তার নাম ধরে চিৎকার। ম্যাচের পর মুভিস্টারকে তিনি বলেছেন, আমাদের ভক্তরা যখন আমার নামে স্লোগান ধরে, তখন স্বপ্ন বাস্তবতায় রূপান্তরিত হয়। আমি আরও গোল করে তাদের পুরস্কৃত করতে চাই। ভিনি বলেন, আমার বয়স ২৪ বছর। আমি মাদ্রিদে চিরকাল থাকতে চাই। যে ক্লাব আমাকে এত কিছু দিয়েছে, আমি তাদের সবকিছু ফেরত দিতে চাই।

ভিনি তা দিচ্ছেনও। তবে আপাতত তার নেওয়ার পালা। প্যারিসে ব্যালন ডি’অর অনুষ্ঠান শুরু হতে আর মাত্র ৫ দিন বাকি। রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তি অবশ্য এবারের ব্যালন ডি’অর নিয়ে ভাবছেন না। ম্যাচশেষে তিনি বলেন, আমার মনে হয় ভিনিসিয়ুসই ব্যালন ডি’অর জিতবে। তবে সেটি আজ (গতকাল) রাতের পারফরম্যান্সের জন্য নয়। সে গত মৌসুমে যা করেছে, সেটির জন্য। আজকের ৩ গোল তাকে পরের ব্যালন ডি’অর জিততে সাহায্য করবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম