Logo
Logo
×

পরবাস

মালয়েশিয়ায় ১৩ দেশের শিল্পীদের অংশগ্রহণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন

Icon

আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া থেকে

প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫৬ এএম

মালয়েশিয়ায় ১৩ দেশের শিল্পীদের অংশগ্রহণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন

মালয়েশিয়ায় যথাযোগ্য মর্যাদা এবং উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী নানা আয়োজনে মহান শহিদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়।

শুক্রবার কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের উদ্যোগে বাংলাদেশের শহিদ দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃতির ২৫ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে কুয়ালালামপুর এন্ড সেলেনগর চাইনিজ এসেম্বলি হলে আলোচনা, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী এবং বাংলাদেশসহ ১৩টি দেশের শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

এতে উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিক, জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান। ভাষা শহিদ এবং জুলাই -আগস্ট অভ্যুত্থানের শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান তার বক্তব্যে বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এখন সারা বিশ্বে ভাষাগত বৈচিত্র্য উদযাপনের দিনে পরিণত হয়েছে। ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে এবং স্বাধীনতার পথ দেখিয়েছে। আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের গুরুত্ব তুলে ধরেন হাইকমিশনার।

তিনি এ দিবস উপলক্ষে উপস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশি এবং আগত বিদেশি অতিথিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।

শামীম আহসান বলেন, নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার গুরুত্বপূর্ণ খাতে পরিবর্তনমূলক সংস্কার আনার মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করে বাংলাদেশ পুনর্গঠনের জন্য দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

অনুষ্ঠানের গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়ার  পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি রাষ্ট্রদূত কেনেডি মেয়ং অনন। তিনি তার বক্তৃতায় ভাষাগত বৈচিত্র্যের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশ -মালয়েশিয়ার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

এ পর্বে ইউনেস্কো আঞ্চলিক অফিস, জাকার্তা এর কান্ট্রি ডিরেক্টর মিসেস মাকি কাতসুনো-হায়াশিকাওয়ার ধারণকৃত বক্তব্য প্রচারিত হয়।  মাকি কাতসুনো-হায়াশিকাওয়া তার ধারণকৃত বক্তব্যে বহুভাষিকতা রক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি শিক্ষায় মাতৃভাষার ব্যবহার এবং ভাষা সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করেন।

এরপর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন  অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ, পরিচালক, সেন্টার ফর অল্টারনেটিভস, বাংলাদেশ, মিজ লেইলা নাগমানোভ, ডেপুটি কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ, ইউএনএইচসিআর এবং মালয়েশিয়ার সিটি ইউনিভার্সিটির সিনিয়র লেকচারার ড. রামিন হাজিনাফার্ড।

এ সময় আলোচকরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনে সব ভাষাভাষীর ঐক্যের চেতনার কথা বলেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে তারা ঐক্যের একটি শক্তিশালী ও অনুপ্রেরণামূলক বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বর্ণনা করেন। বক্তারা বহুভাষিকতার প্রসারে মাতৃভাষা ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

প্যানেল আলোচনার মডারেটর ছিলেন ডেপুটি হাইকমিশনার মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খাস্তগীর।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে ১৩টি দেশের শিল্পীদের সমন্বয়ে একটি বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, নাইজেরিয়া, রাশিয়ান ফেডারেশন, সুদান, তানজানিয়া, নেপাল, জাম্বিয়া, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, কিরগিজিস্তান, মেক্সিকো  এবং বাংলাদেশ হাই কমিশন পরিবারের সদস্য এবং শিল্পীদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা দর্শকদের বিমোহিত করে।

একই মঞ্চে বিভিন্ন দেশের শিল্পীদের বর্ণিল পরিবেশনা এক অনন্য সাংস্কৃতিক সম্প্রীতির বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।

অনুষ্ঠানে হাইকমিশনারের সহধর্মিণী পেন্ডোরা চৌধুরী, কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারবর্গ, বিভিন্ন দূতাবাসের কূটনীতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, সাংবাদিক এবং বিপুল সংখ্যক প্রবাসী তাদের পরিবারসহ উপস্থিত ছিলেন।

মিনিস্টার (রাজনৈতিক) ফারহানা আহমেদ চৌধুরীর উপস্থাপনা পুরো আয়োজনে অতিথিদের বিমোহিত করে রাখে।

এর আগে অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে হাইকমিশন প্রাঙ্গণে হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার মাধ্যমে দিনব্যাপী কর্মসূচির সূচনা হয়। এরপর প্রভাত ফেরির মাধ্যমে হাইকমিশনের অস্থায়ী শহিদ মিনারের বেদীতে হাইকমিশনারের নেতৃত্বে হাইকমিশন পরিবারের সদস্যবৃন্দ পুষ্পস্তবক  অর্পণ করেন।

এ ছাড়া মালয়েশিয়ায় স্থানীয় কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংস্থার সদস্য পর্যায়ক্রমে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

মূল আলোচনার শুরুতে শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত এবং এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

দিবসটিকে কেন্দ্র করে  প্রধান উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয় এবং এ দিবস উপলক্ষে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

আলোচনা সভায় মূল বক্তব্যে হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান  মহান শহিদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি উন্নত দেশ গঠনে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে মালয়েশিয়ায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের একযোগে কাজ করার আহবান জানান। তিনি মালয়েশিয়ায় একটি বাংলা স্কুল এবং শহিদ মিনার স্থাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম