দ্য গ্লোবাল হারমোনি ইনিশিয়েটিভ
সৌদি আরবে নেচে-গেয়ে উৎসব মাতালেন বাংলাদেশি শিল্পীরা
মাসুদ করিম, রিয়াদ থেকে
প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৪ পিএম
সৌদি আরবে নেচে-গেয়ে বিশ্ব দরবারে নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরলেন বাংলাদেশি শিল্পীরা। রাজধানী রিয়াদের সোওয়াদি পার্কে উপচে পড়া মানুষের ঢলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা মেতে উঠলেন অনাবিল প্রাণের উচ্ছ্বাসে। জেমস, হাবিব ওয়াহিদের মতো একঝাঁক তারকা শিল্পী বাংলাদেশ থেকে এসে উৎসবে যোগ দিয়েছেন। অংশ নিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশি শিল্পীরাও। উৎসব রাঙানো নাচ-গানের পাশাপাশি বাংলাদেশি খাবার বিশেষ করে পিঠা, ফুচকা কিংবা ঐতিহ্যবাহী পোশাকের মেলা বাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশি সংস্কৃতির আমেজ।
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ‘ভিশন ২০৩০’ ঘোষণা করেছেন আগেই। তার সঙ্গে সংগতি রেখে ‘দ্য গ্লোবাল হারমোনি ইনিশিয়েটিভ’ নামের এই বিরাট উৎসবের আয়োজন করেছে মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ দেশটির মিডিয়া মন্ত্রণালয়। সৌদি আরবে যে সকল দেশের কর্মীরা দেশটির উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন; ওই সকল দেশগুলোর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে গ্লোবাল হারমোনির এবারের ‘রিয়াদ সিজন’।
ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহণে ৪৫ দিনব্যাপি এই মহাউৎসবে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরার জন্যে ২০ থেকে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত চার দিন বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আল-সোওয়াদি পার্কে প্রতিদিন বিকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বাংলাদেশি গানের সুরের মূর্ছনা, ঢাক-ঢোলের মত্যে বাদ্যযন্ত্রের ছন্দের তালে দুলছেন হাজার হাজার প্রবাসী কর্মী। ঐতিহ্যবাহী ধারায় সংস্কৃতিকে তুলে ধরার পাশাপাশি ডিস্কের মতো আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহারও করছেন বাংলাদেশি শিল্পীরা। ডিজে কিংবা ব্যান্ডের কনসার্ট মাতোয়ারা করে রেখেছে রিয়াদের আসর। পরিবার-পরিজনসহ বিদেশের মাটিতে প্রবাসীরা খোঁজে পেয়েছেন একখণ্ড বাংলাদেশ। এই উৎসব শুধু বিনোদন কিংবা সংস্কৃতিকে বিশ^-দরবারে তুলে ধরার সুযোগ নয়; বরং সৌহার্দ্য, সম্প্রতি এবং পারস্পরিক বন্ধুত্বের মেলবন্ধন সৃষ্টির মাধ্যমে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আরও অধিক সংখ্যক বাংলাদেশির জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগও অবারিত করবে।
সৌদি আরব প্রধানত বিদেশি কর্মীদের মাধ্যমে তাদের গৃহস্থালি ও বেসরকারি খাতের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মোতাবেক, বিদেশি শ্রমিকের সংখ্যা ১২ কোটির বেশি হলেও সৌদি আরবের নিজ দেশের শ্রমিক মাত্র ২৪ লাখের কিছু বেশি। বিদেশি শ্রমিকদের মধ্যে বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা সর্বোচ্চ। ২৭ লাখের বেশি বাংলাদেশি কর্মী সৌদি আরবে কর্মরত আছেন। দেশটিতে ভারতের শ্রমিক সংখ্যা ২৪ লাখ, পাকিস্তানের ২৩ লাখ, মিসরের ১৩ লাখ, ইয়েমেনের ১২ লাখ, ফিলিপাইনের ৯ লাখ, সুদানের ৪ লাখ, নেপালের ৩ লাখ, ইন্দোনেশিয়ার ৭৩ হাজার কর্মী রয়েছেন।
অনেকে মনে করেন, সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক এবং বাংলাদেশি শ্রমিকদের আইন মেনে কঠোর পরিশ্রমের কারণে দেশটির বেসরকারি খাত এবং গৃহস্থালি কাজের মালিকদের (কফিল) প্রথম পছন্দ বাংলাদেশি শ্রমিক। যদিও বাংলাদেশিরা বিভিন্ন খাতের উচ্চ পদে আসীনের সংখ্যা তুলনামূলক কম। ফলে এই ক্ষেত্রে করণীয় অনেক কিছুই আছে। গ্লোবাল হারমোনি উৎসবে যোগদানের লক্ষ্যে আসা ভাইরাল হিপহপ গান ‘গাল্লিবয়’ নির্মাণ করে আলোচিত ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ছাত্র তাবিব মাহমুদ যুগান্তরকে বলেন, ‘দক্ষ শ্রমিক সৃষ্টি করতে পারলে সৌদি শ্রম বাজার থেকে অধিক রেমিট্যান্স অর্জন করা সম্ভব’।
শিল্পী হাবিব ওয়াহিদ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘অনেকগুলো দেশকে নিয়ে এই উৎসব হচ্ছে। এটি অনেক সুন্দর একটি উদ্যোগ। মানুষ মানুষের ভেদাভেদ ভুলতে সঙ্গীত অনেক বড় একটি মাধ্যম। ভাষা বোঝা ছাড়াই সুরের মাধ্যমে আবেগের কথা মানুষেরা সঙ্গীদের মাধ্যমে আরেকটা দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারে। এই আয়োজন দুই দেশের মানুষকে মেলবন্ধনে আবদ্ধ করবে। মানুষে মানুষে সম্পর্ক তৈরি করার জন্য সংস্কৃতি বড় একটা ভূমিকা পালন করতে পারে’। সৌদি আরবে প্রথমবারের মতো গান গাইতে আসা হাবিব ওয়াহিদ তার এই পরিবেশনকে প্রবাসী কর্মীদের উৎসর্গ করে বলেন, সবাই সম্প্রীতির বন্ধনে থাকব এটাই প্রত্যাশা।
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ফর্মে শুধু নয়; বরং আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহারের মাধ্যমেও মাতিয়ে তুলছেন কোনও কোনও শিল্পী। বাংলাদেশ থেকে আসা ডিজে সনিকা সাংবাদিকদের বলেন, ‘পৃথিবী এখন পরিবর্তনশীল। প্রত্যেকে আধুনিক প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম ব্যবহার করছেন। ডিজে হলো একটি আধুনিক পেশা। ডিজে পেশার মাধ্যমে আমি বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের গান প্রেজেন্ট করছি। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আমার ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে পেরে আমি খুবই খুশি’।