মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়ায় ইসরায়েলি পণ্য বয়কট
আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া থেকে
প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৪, ০৪:৪৯ এএম
পবিত্র রমজান মাসে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ইসরায়েলি পণ্য বয়কট জোরেশোরে চলছে। এই অঞ্চলের বৃহৎ দুটি মুসলিম দেশ মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের তালিকায় নতুন করে যুক্ত হচ্ছে দিনকে দিন।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট এবং নিক্কেই এশিয়া তাদের স্ব স্ব প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মালয়েশিয়ার কাস্টমস তাদের স্থানীয় বাজারে ইসরায়েলি খেজুর বিক্রির অভিযোগে একজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। অপরদিকে ইন্দোনেশিয়ার কর্তৃপক্ষ জনসাধারণকে ইসরায়েলি পণ্য আমদানি বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে।
হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় পর্যন্ত ৩০ হাজারের অধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এমন নৃশংস হামলার প্রতিবাদে বিশ্বের মুসলমানরা এক মাস ধরে ইসরায়েলি পণ্য ও কোম্পানি বয়কট করে চলেছে প্রতিদিন।
মালয়েশিয়ায় এই বয়কট কার্যকর হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের ফলে। এতে দেশটিতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এমন সব কোম্পানির বেচা-বিক্রি কমে গেছে। ডোমিনোস, স্টারবাক্সের মালয়েশিয়া শাখা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে নানা কাকুতি-মিনতি করে যাচ্ছে প্রতিদিন। এদিকে ম্যাকডোনাল্ডস আবার ক্ষতিপূরণ চেয়ে মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে সেদিন।
ওদিকে মুসলিম মিডিয়া মুঘল আল জাজিরা বলছে, ইন্দোনেশিয়ান কেলানা অক্টোবর থেকে ফাস্ট ফুড চেইন বয়কট করছে যখন ম্যাকডোনাল্ডস সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোষণা করেছে যে, তারা গাজা যুদ্ধের মধ্যে ইসরাইলি সেনাবাহিনীকে হাজার হাজার প্যাকেট খাবার বিনামূল্যে দান করেছে।
কেলানা আরও বলেছেন, এটি এতটা সরাসরি বয়কট নয়, বরং ইসরাইলের প্রতি গভীরভাবে অসন্তুষ্ট হওয়ার অনুভূতি।
তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলছিলেন, আমার গাড়িতে একটি ম্যাকডোনাল্ডের স্টিকার থাকত যা আমি ড্রাইভ-থ্রু ব্যবহার করার সময় আমাকে ছাড় দিত, কিন্তু যুদ্ধ শুরু হলে আমি তা ছিঁড়ে ফেলেছি। আমি যদি ইসরাইলি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে সাহায্য করতে গাজায় যেতে পারতাম, আমি তা করতাম। ইসরাইলিদের হাতে প্রতিদিনই মুসলমানদের হত্যা করা হচ্ছে। যেহেতু আমি সেখানে ব্যক্তিগতভাবে যেতে পারি না, পরবর্তী সেরা জিনিসটি হল ইসরাইলের সাথে সংযুক্ত পণ্যগুলি ব্যবহার না করে আমার সমর্থন দেখানো।
নিক্কেই এশিয়া বলছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জুড়ে ইসরাইলের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বলে মনে করা পণ্যগুলো বয়কট করার আহবান প্রধান ব্র্যান্ডগুলোর উপরে দারুণভাবে প্রভাব ফেলছে। ফেব্রুয়ারিতে, ম্যাকডোনাল্ডস বলেছিল যে, যুদ্ধের প্রভাব তাদের উপরেও পড়েছে কারণ ২০২৩ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে আন্তর্জাতিক বিক্রয় মাত্র ০.৭ শতাংশ বেড়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের মধ্যে ১৬.৫ শতাংশ বৃদ্ধি থেকে তীব্রভাবে কমেছে।
ম্যাকডোনাল্ডের সিইও ক্রিস কেম্পজিনস্কি বলেছেন, সবচেয়ে স্পষ্ট প্রভাব যা আমরা দেখছি তা হল মধ্যপ্রাচ্য এবং ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার মতো মুসলিম দেশগুলিতে। যতদিন এ সংঘাত, এ যুদ্ধ চলছে, আমরা কোন উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখতে পারব বলে মনে হয় না।
এদেশগুলিতে অন্যান্য ব্র্যান্ড ও যে পণ্যগুলি বয়কটের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ইউনিলিভার এবং কফি চেইন স্টারবাকস। ইউনিলিভার, যারা ডাভ সাবান, বেন অ্যান্ড জেরির আইসক্রিম এবং নর স্টক কিউব উৎপাদন করে তারা ফেব্রুয়ারিতে বলেছিল যে, ইন্দোনেশিয়ায় গত বছরের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে ‘ভূ-রাজনৈতিকভাবে প্রচারণার ফলে বিক্রি অনেক কমে গেছে।
সৌদি আরব, ওমান, কুয়েত এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অনেক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে ম্যাকডোনাল্ডের ফ্র্যাঞ্চাইজি ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছে এবং গাজায় ত্রাণ তৎপরতায় সহায়তার জন্য অর্থের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ইউনিলিভার ইন্দোনেশিয়া নভেম্বরে বলছে যে, তারা সংঘর্ষের জন্য ‘দুঃখিত এবং উদ্বিগ্ন’ এবং তাদের পণ্যগুলো, ইন্দোনেশিয়ার লোকেরা তৈরি, বিতরণ এবং বিক্রি করছে। তবুও তাদের কোম্পানি ও পণ্য বয়কটে দারুণভাবে প্রভাব ফেলছে এ যুদ্ধে।