অস্ট্রেলিয়ার সিডনির ম্যাকুরি লিংক গলফ ক্লাব কমিউনিটি হলে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পড়ুয়ার আসরের প্রথম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ৬ মে।
সীমিতসংখ্যক আমন্ত্রিত অতিথি ও বিশিষ্ট লেখক কবি-সাহিত্যিক এ বর্ষপূর্তি আনন্দ উদযাপনে উপস্থিত ছিলেন।
শনিবার সকালের রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ায় গলফ ক্লাবসংলগ্ন হলটি সজ্জিত হয় বইপড়ার গুরুত্ব তুলে ধরা নানারকম ব্যানার ও পোস্টারে। সময়মতো সব অতিথিদের উপস্থিতিতে পুরো স্থান উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। প্রথমেই নিমন্ত্রিত অতিথিদের চা চক্রের মাধ্যমে আপ্যায়িত করা হয়। এর পর নির্ধারিত সময়েই শুরু হয় পড়ুয়ার আসরের তিন পর্বে সাজানো প্রথম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে ছিল সব পড়ুয়া সদস্যদের অংশগ্রহণে বিশেষ পাঠ ও গীতি আলেখ্যানুষ্ঠান 'মা ও মাতৃভূমি'। মার্চ মাসে ছিল স্বাধীনতা দিবস আর এই মে মাসে মাতৃদিবস। এ বিষয় বস্তুকে ভিত্তি করে পড়ুয়ার আসর আয়োজন করেছিল এই বিশেষ পাঠ ও গীতি আলেখ্য 'মা ও মাতৃভূমি'। মা ও খোকাকে নিয়ে বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত সব ছড়া, কবিতা ও গান দিয়ে সাজানো হয়েছিল এ আলেখ্যটি যেখানে খোকার জন্ম, তার বেড়ে ওঠা, চার পাশের সমাজব্যবস্থা ও মাতৃভূমি নিয়ে খোকার ভাবনা এবং মাতৃভূমির ডাকে খোকার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ এবং অবশেষে মায়ের জন্য মাতৃভূমির স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনা— এটিই ছিল এই গীতি আলেখ্যর মূল উপজীব্য।
রোকেয়া আহমেদের রচনা এবং নাসরিন মোফাজ্জলের সঞ্চালনায় এই পাঠপর্বে পাঠ ও আবৃত্তিতে অংশগ্রহণ করেন লতা খান, বুলা হাসান, রওশন পারভীন, শামসুন্নাহার বিউটি, জিনাত চৌধুরী, নুরুন্নাহার বেগম আজিজা শাদাত বিউটি, লায়লা লজি, শামীমা আলমগীর মনি, রিনা আক্তার ও নুসরাত হুদা, নাসরিন মোফাজ্জল ও রোকেয়া আহমেদ। সংগীত পরিচালনায় রুমানা ফেরদৌস, তার সঙ্গে ছিলেন রুনু রফিক ও রানী নাহিদ, শিশুশিল্পী সাফিনা জামান এবং তবলায় ছিলেন সাকিনা আক্তার। পুরো অনুষ্ঠানের শব্দ নিয়ন্ত্রণে ছিলেন মেহেদী হাসান।
পড়ুয়াদের সাবলীল পাঠ ও সুললিত আবৃত্তি এবং গানের মাধ্যমে পুরো আলেখ্যানুষ্ঠানটি দর্শক শ্রোতাদের বিমোহিত করে।
মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পরে ছিল অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব রাইটার আর রিডার ঠু। এই পর্বে ছিল সিডনির বিশিষ্ট লেখক, কবি ও সাংবাদিকদের অংশগ্রহণে এক বিশেষ মনোগ্রাহী পাঠপর্ব। এই পাঠ পর্বে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও উদ্দীপনার সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন ড. আবদুর রাযযাক, ড. কাজী আলী, অজয় দাশগুপ্ত, আশীষ বাবলু, সিমি কাজী সুলতানা, আবু সৈয়দ ওবায়দুল্লাহ ও আবু সাঈদ। সম্মানিত অতিথিরা তাদের লেখা বই থেকে পাঠ ও আবৃত্তি করে শোনান এবং সেই সঙ্গে আবৃত্তি করে শোনান বুদ্ধদেব বসু, প্রেমেন্দ্র মিত্র, নজরুল ইসলাম ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা।
মৌলিক রচনা থেকে পাঠের এই পর্বের আকর্ষণীয় সংযোজন ছিল রুমানা ফেরদৌসের লেখা ও সুর করা মৌলিক গান "ভেসে যায়"। উপস্থিত দর্শক শ্রোতা একাগ্র মনোযোগে এ পর্বটি আনন্দের সঙ্গে উপভোগ করেন। ড. কাজী আলী পড়ুয়ার আসরের সদস্যদের কার্যক্রমের প্রশংসা করেন এবং এই উদ্যোগকে আরও সমন্বিত করে তোলার জন্য তার এক হাজার ডলারের অনুদান ঘোষণা করেন।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন রফিকউদ্দিন এবং সিডনি বাঙালি সমাজের অভিভাবক তুল্যবিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব গামা আবদুল কাদির। তার বক্তব্যে তিনি পড়ুয়ার আসরের বই পড়ার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান এবং এই উদ্যোগের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে নিজেও বই পড়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত হবেন বলেন আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের তৃতীয় পর্বে ছিল উপস্থিত অতিথি শিল্পীদের পরিবেশনায় বিশেষ পর্ব। এই পর্বে কবিতা আবৃত্তি করে শোনান রুমানা হক এবং বিশিষ্ট আবৃত্তিকার ও সাবেক বিটিভি সংবাদ পাঠিকা নাসিমা আক্তার। এ ছাড়া সংগীত পরিবেশন করেন রাসেল ইকবাল, নিলুফা ইয়াসমিন ও রুমানা হক। সবশেষে সব পড়ুয়া সদস্য সম্মিলিতভাবে উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, গত ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পড়ুয়ার আসর শুরু হয়েছিল বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বই পড়ার একটি ছোট্ট প্রচেষ্টা থেকে। এর পাশাপাশি কমিউনিটির জন্য ভালো কোনো কাজ করারও উদ্দীপনা ছিল প্রথম থেকেই। এই এক বছরে পড়ুয়ার আসর ৭টি পাঠপর্ব ছাড়াও শেয়ার দ্য ডিগনিটির জন্য দুটো চ্যারিটি অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছে।