চতুর্থ দিনে সমঝোতায় ইইউ শীর্ষ সম্মেলন
ফরিদ আহমেদ পাটওয়ারি, পর্তুগাল থেকে
প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২০, ০৩:৪৪ পিএম
সাম্য, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি এবং একতার প্রতীক হিসেবে পৃথিবীব্যাপী সমাদৃত এক অভূতপূর্ব জোটের নাম ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। ১৯৯৩ সালে সিঙ্গেল মার্কেট হিসেবে গঠিত হওয়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তবে এর গোড়াপত্তন সেই ১৯৫৭ সালে ইউরোপিয়ান অর্থনৈতিক কমিউনিটি (ইইসি) হিসেবে।
বৈচিত্র্যে একজোট (ইউনাইটেড ইন ডিভোর্সিটি) মূলমন্ত্র নিয়ে গঠিত হয়। এই জোটের তথা ইউরোপের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বর্তমান মহামারির মতো এত কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়নি। সঙ্গত কারণেই কোভিড-১৯ মহামারী ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে পূর্বনির্ধারিত ১৭ ও ১৮ জুলাই শীর্ষ সম্মেলন সিদ্ধান্তহীনতায় চতুর্থ দিনে পৌঁছালো।
ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ইইউ সম্মেলন ১.৬৮ ট্রিলিয়ন ইউরো ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২০২১-২০২৭ অর্থবছরের বাজেট এবং কোভিড-১৯ ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্যাকেজের বিষয়ে একমত হওয়ার আয়োজন করা হয়েছে।
পূর্ব ইউরোপের নেতারা আইনের শর্ত পূরণের বিরোধিতা করছেন এবং উত্তর ইউরোপের পাঁচটি দেশ নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রিয়া, ফিনল্যান্ড, সুইডেন এবং ডেনমার্ক উক্ত অর্থব্যয়ের কঠোর নিয়ন্ত্রণ চায়। লুক্সেমবার্গের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, তার সাত বছরের ইইউ বৈঠকে অভিজ্ঞতা তিনি এর আগে কখনও দ্বিধা বিভাজনের অবস্থানের এই চিত্র দেখেননি।
শনিবার সন্ধ্যায় আলোচনা যখন তীব্র উত্তেজনা ধারণ করে, তখন ফরাসি রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রন এবং জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসেন। এক প্রতিক্রিয়ায় ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট বলেছেন, তারা খারাপ মেজাজে পালিয়ে গেছে আমরা আগামীকালও আলোচনা চালিয়ে যাব।
ফ্রান্স এবং জার্মানি ইউরোপীয় ইউনিয়নর মধ্যে যেকোনো বড় চুক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্র তাদের প্রস্তাবিত বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে এবং বিভাজন মেটাতে ও সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করে। উক্ত আলোচনায় সদস্য দেশগুলোকে ঋণ এবং অনুদানের উচ্চাভিলাষী প্যাকেজের জন্য চাপ দিচ্ছে এবং সমঝোতার জন্য বারবার আবেদন করছে।
পর্তুগিজ প্রধানমন্ত্রী আন্তোনিও কস্তা দ্রুত সমঝোতায় পৌঁছাতে না পারায় ইউরোপীয় নেতাদের সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করেছেন। ক্রমবর্ধমান আলোচনার বিভাজনের জন্য এই শীর্ষ সম্মেলন ব্যর্থ হলে এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য একটি খারাপ সংবাদ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সমস্ত অর্থনৈতিক শক্তি এবং ইউরোপীয়দের জন্য একটি খারাপ সংকেত বলেই ধরে নেয়া হচ্ছে।
বিশেষত মহামারি পুনরুদ্ধার তহবিল নিয়ে মতানৈক্য বেশি দেখা দেয় রোববার সন্ধ্যায়। এদিন একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর একটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। প্রস্তাবিত ৭৫০ বিলিয়ন ইউরোর পুনরুদ্ধার তহবিলের ৩৯০ বিলিয়ন ইউরো অফেরৎযোগ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে। ৪০০ বিলিয়ন ইউরোতে জার্মানি এবং ফ্রান্স সম্মত হয়েছিল তবে উত্তর ইউরোপের পাঁচটি দেশ চায় তার সর্বোচ্চ ৩৫০ বিলিয়ন ইউরো হতে পারে।
উক্ত তহবিলের অর্থ ছাড় পেতে আইনগত শর্তের কিছু নিয়মনীতি করা হয়েছে যা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন এবং অন্যদের দ্বারা সমর্থিত হয়েছিল। উক্ত আইনগত শর্তের জন্য পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো বিশেষত পোল্যান্ড এবং হাঙ্গেরির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
গত ১৭ জুলাই শুরু হওয়া শীর্ষ সম্মেলন ১৮ তারিখে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এটি চতুর্থ দিনে গড়ায়। অবশেষে রিকভারি তহবিল ৬৭২.৫ বিলিয়ন ইউরোতে অন্যান্য চুক্তির শর্তাবলী সকল সদস্য রাষ্ট্র সম্মত হয় এবং তাদের সেই ঐতিহ্য তারা রক্ষা করতে সচেষ্ট হয়।
লেখক: ফরিদ আহমেদ পাটওয়ারি, সমাজকর্মী, ফ্রিল্যান্সার সাংবাদিক ও লেখক, পর্তুগাল থেকে