ফ্যাসিলিটেটর (Facilitator) শব্দের অর্থ সমন্বয়কারী। পাশ্চাত্যে শব্দটির একটি গুনগত মান রয়েছে ভালো দিক দিয়ে।
কিছু লোক পৃথিবীতে রয়েছে যারা একজন ভালো ফ্যাসিলিটেটর হিসাবে একটি পরিবার বা সমাজে কাজ করে থাকে। এদের কাজের মূল উদ্দেশ্য হলো সমন্বয় সৃষ্টি করা এক বা একাধিক ব্যক্তির মাধ্যমে।
চোগলখোর শব্দের অর্থ অন্যের কাছে নিজেকে আপন করে তুলতে, নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে, ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করতে, সুযোগ-সুবিধা লাভে যে মানুষ একজনের কথা অন্যজনের কাছে বলে বেড়ায়। অকৃতজ্ঞ শব্দের অর্থ যে উপকারীর উপকার স্বীকার করে না।
নেমকহারাম উপকারীর উপকার স্বীকার করে না বরং পারলে বেইমানী করে। ফ্যাসিলিটেটর আবার একজন চোগলখোর, বেইমান, অকৃতজ্ঞ বা নেমকহারামের এক সম্মিলিত চরিত্র হতে পারে।
এ ধরনের ফ্যাসিলিটেটরদের দানবের সঙ্গে তুলনা করতে পারি। এ ধরনের ফ্যাসিলিটেটর পরিবার, সমাজ বা একটি দেশে বিরাজ করছে তাকি আমরা জানি? আমরা কি জানি যে এরা সমাজের সবচেয়ে কুৎসিৎ চরিত্রের মানুষ নামের এক দানব গোষ্ঠি? আমরা শুধু দুর্নীতি, ঘুষখোর, সুদখোর, ধর্ষক, মোনাফিক এদের কথাই বলি যে এরা মানুষ জাতির কলঙ্ক।
কখনও ভেবেছি কি সমাজে যে সব ফ্যাসিলিটেটর, চোগলখোর, বেইমান, অকৃতজ্ঞ এবং নেমকহারাম রয়েছে তারা একটি পরিবার, সমাজ এবং দেশকে ধ্বংস করতে যথেষ্ট? কিভাবে সনাক্ত করা যেতে পারে এদেরকে? একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি পরিষ্কার করতে চেষ্টা করি।
বাংলাদেশে এমন কোনো পরিবার নেই যেখানে মতামতের বিভেদ নেই। কিন্তু আমাদের এমন স্বভাব যে আমরা কখনও নিজেদেরকে নিয়ে সমালোচনা করিনা। আমরা অন্যের পরিবারে কি হচ্ছে তা নিয়েই মাথা ঘামিয়ে থাকি বেশি। পরনিন্দা, পরচর্চায় পঞ্চমুখ হতে পাকা। আমরা ভুলে যাই যে আমাদের নিজেদের পেট বর্জ্য ভরা এবং তা যখন শরীর ত্যাগ করে সে গন্ধ সহ্য করা কঠিন যদিও নিজেদেরই বর্জ্য। মৌলভীদের ভাষায় বলতে হয় “চিল্লাই বলেন ঠিক কিনা?” পরিবারে অনেক সময় ভাই ভাইয়ে মনোমালিন্য হয়ে থাকে। যা হতে পারে অর্থ সংক্রান্ত বা মত ভিন্নতার কারণে।
সে ক্ষেত্রে পরিবারের দুর্বল একত্ববোধের সুযোগ নিয়ে এগিয়ে আসে অনেকে। এরা দুই পক্ষের খবরাখবর বিকৃত করে কথা চালাচালি করে আনন্দ পায়। অনেকে কখনও বা কারো কাছ থেকে কোন বিষয়ে উপকৃত হয়েছে, বিনিময়ে কৃতজ্ঞতার ঋণ শোধ করতে না পেরে কুৎসা রটাতে উঠে পড়ে লাগে।
এরা জেনে শুনে এ ধরনের কর্ম করে। এ ধরনের কর্ম যারা করে তাদের মস্তিষ্ক এক ধরনের বিকৃত রোগে আক্রান্ত। এদের থেকে রেহাই পেতে একমাত্র উপায় যত সমস্যাই হোক না কেনো পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা শিখতে হবে। মনে রাখতে হবে পরিবর্তন পরিবার থেকে শুরু করতে হয়। দুষ্ট লোককে আদৌ সুযোগ দেয়া যাবে না।
ঘরের কথা ঘরের লোকের সঙ্গে আলোচনা করা শিখতে হবে। ঘরের কথা পরের কাছে বলা আর ঘরের বউ বা স্বামী পরের কাছে যাওয়া একই কথা। পার্থক্য শুধু দৈহিক এবং মানসিক। সুতরাং আমাদের অঙ্গীকার হোক, নিজে কাউকে শোষণ করবো না, কারো অধিকার হরণ করবো না, বৈষম্য সৃষ্টি করবো না, দুর্নীতি করবো না, অন্য কেউ এগুলো করলে তা মেনেও নেবো না।
আমরা অবশ্যই পারবো এবং আমাদেরকে পারতেই হবে। পৃথিবীর সর্বত্র সৃজনশীল সমাজে ফ্যাসিলিটেটর রয়েছে। এরা পরিবার বা সমাজে সুন্দর পরিবেশ এবং ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে সাহায্য করে। বাংলাদেশের মত বেশির ভাগ দেশে ফ্যাসিলিটেটরের কাজ নেগেটিভ হয়ে থাকে।
কারণ যে সমাজে সুশিক্ষার চেয়ে কুশিক্ষা বেশি, সেখানে ফ্যাসিলিটেটরদের চরিত্র জঘন্য হওয়াই স্বাভাবিক। পূথিগত বিদ্যা থাকলেই সুশিক্ষার অধিকারী হওয়া যায় না। বিবেকের অনুপস্থিতির কারণেই মানুষ দানবে পরিণত হয়। আমাদের সৃষ্টি হয়েছে মানুষ হিসেবে।
কুকর্মের মাধ্যমে আমরা যদি মনুষ্যত্বের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলি তখন ফ্যাসিলিটেটর চোগলখোর, বেইমান, অকৃতজ্ঞ, নেমকহারাম, দানব ইত্যাদি হয়ে যায়। তাহলে সুন্দর চরিত্র কিভাবে পাওয়া সম্ভব? আমি বিশ্বাস করি স্রষ্টাকে তাই বিশ্বাস করি বিবেককে।
সুন্দর চরিত্রের আরেক নাম বিবেক, যার মধ্যে বিবেক কাজ করে সে অমানুষ বা দানব হতে পারে না। সুশিক্ষার জন্য যেমন দরকার সৎ এবং সুন্দর পরিকল্পিত প্রশিক্ষণ ঠিক সুন্দর চরিত্র পেতে দরকার বর্জন করা পরনিন্দা, পরচর্চা এবং সর্বোপরি আমাদের চিন্তা চেতনায় এবং কর্মে বিবেককে সংযুক্ত রাখতে পারলে সুন্দর চরিত্র পাওয়া সম্ভব।