নিউইয়র্কে ড. শামসুজ্জোহা স্মরণে শিক্ষক দিবস করার দাবি

তোফাজ্জল লিটন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে
প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৮:৩৯ পিএম

বাংলাদেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক ড. শামসুজ্জোহার ৫১তম মৃত্যুবার্ষিকী ১৮ ফেব্রুয়ারি। এ দিনটিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করার জন্য নিউইয়র্ক থেকে আবারও দাবি জানিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, যুক্তরাষ্ট্র।
জ্যাকসন হাইটসের পালকি পার্টি সেন্টারে ১৬ ফেব্রুয়ারি এক স্মরণ সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্ররা এ দাবি জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাকসুর প্রথম নির্বাচিত জিএস আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, ড. শামসুজ্জোহা যেভাবে দেশের জন্য এবং ছাত্রদের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন তা ইতিহাসে বিরল।
তার আত্মত্যাগ এবং জীবনাদর্শ আমাদের আগামী প্রজন্মকে জানাতে হবে। এ জন্য তার মৃত্যুর দিনটিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবি করছি এ সমাবেশ থেকে।
তার জীবনী পাঠ্য বইয়ে অন্তর্ভুক্তি করার জোড় দাবি জানাই। সংগঠনের আহ্বায়ক ওয়াহিদুজ্জামান চৌধুরী রাব্বী সভাপতিত্বে এব নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক আসলাম আহমাদ খান ও নূরুন নাহার গিনির পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক কূটনীতিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, রাকসুর প্রথম নির্বাচিত জিএস আব্দুর রাজ্জাক খান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ঠিকানা পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ ফজলুর রহমান ও প্রকাশিত সাপ্তাহিক বাঙালী পত্রিকার সম্পাদক কৌশিক আহমেদ।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত বক্তব্য রাখেন ভয়েস অব আমেরিকার সাবেক সাংবাদিক জাকিয়া খান, সংগঠনের সাবেক সভাপতি আলী হাসান কিবরিয়া অনু, সাবেক জাতীয় এ্যাথলেট সাইদুর রহমান ডন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই এর সাবেক সভাপতি আখতার আহমেদ রাশা, উপদেষ্টা আহসান উল্লাহ ফিলিপ, রাকসুর সাবেক ছাত্র মিলনায়তন সম্পাদক মুজাহিদ আনসারী, সাবেক ছাত্রনেতা অসীম ব্রক্ষ্যচারী ও সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর বিপ্লব।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের নবনির্বাচিত সভাপতি একেএম মনিরু হক রাহুল, সহসভাপতি ফতেনূর আলম বাবু, সংগঠনের সাবেক সদস্য সচিব ও বর্তমান কমিটির সহসভাপতি নূরুন নাহার গিনি ও অধ্যাপক রেজাউল করিম।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কিশোর কণ্ঠশিল্পী আলভান চৌধুরীর নেতৃত্বে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন হল ভর্তি সকল দর্শক।
১৯৬৯ অভ্যুত্থানে তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে এবং ছাত্রনেতা আসাদ ও সার্জেন্ট জহুরুল হক হত্যার প্রতিবাদে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তখন সারা দেশে দাবানলের মতো আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। যার ঢেউ লাগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও।
১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের হামলায় বহু ছাত্র আহত হয়। ঐদিন সন্ধ্যায় রাবির কলাভবনে বাংলা বিভাগের এক অনুষ্ঠানে সকলের সামনে ছাত্রদের রক্তে রঞ্জিত শার্ট দেখিয়ে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ড. শামসুজ্জোহা বললেন, আহত ছাত্রদের পবিত্র রক্তের স্পর্শে আমি উজ্জীবিত। এরপর আর যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুলি হয়, সেই গুলি কোনো ছাত্রের গায়ে লাগার আগে আমার বুকে বিঁধবে।
পরদিন ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে আইয়ূব বিরোধী বিক্ষোভ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের রক্ষা করতে গিয়ে শহীদ হন ড. শামসুজ্জোহা।