Logo
Logo
×

পরবাস

বাঁধা থাকবে জীবনে

Icon

রহমান মৃধা, সুইডেন থেকে

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২০, ০৬:৩৬ এএম

বাঁধা থাকবে জীবনে

জীবন চলার পথে বাঁধা যদি আসে, থাকবেনা হয়ত কেউ তোমার পাশে কি করবে তুমি তখন? অন্যকে দোষারোপ করে ব্যর্থতার দায়ভার অন্যের ওপর চাপিয়ে বাঁধা মেনে নেবে?

জীবনে ভালোমন্দ যেকোনো ঘটনার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেয়ার মনোভাব সফলতার অন্যতম প্রধান শর্ত। অর্থাৎ জীবনের অর্জন, সম্পর্কের গুণগত, পেশাগত, মানসিক ও শারীরিক অবস্থান, আর্থিক অবস্থা সবকিছুর ক্ষেত্রে অন্যের ওপর দোষ না চাপিয়ে দায়ভার নিজের কাঁধে নিতে হবে।

জীবনে বড় হতে হলে নিজের প্রতি আত্নবিশ্বাস বাড়াতে হবে। নিজেকে যদি নিজেই ছোট ভাবা হয় তাহলে সারা জীবন ছোটই থেকে যাবে।

বড় হতে হলে যেমন দরকার আত্নবিশ্বাস তেমন দরকার চিন্তা ভাবনার পরিবর্তন করা। সব সময় বড় চিন্তা করতে হবে, আকাঙ্খাকে সামনের দিকে নিতে হবে। সবকিছু যে নিজের মনের মত ঘটবে তা নয়।

আজ শেয়ার করি বাস্তব একটি ঘটনা। আমার ছেলে টেনিস খেলোয়াড়, ছোট বেলা থেকেই মোটিভেটেড এবং বয়স ভিত্তিক সুইডেনের নাম্বার ওয়ান প্লেয়ার হিসেবে পরিচিত এক নাম। জীবনের প্রথম সে সুইডেনের পক্ষে টেনিস ইউরোপ আন্ডার ১০-এ খেলতে যাবে।

প্রচুর এক্সাটমেন্ট কাজ করছে তার মধ্যে। সকালে তার ফ্লাইট আমিও তার সঙ্গে যাব। আমার বাবা-মা তখন সুইডেনে থাকেন। রাতে ঘুমানোর আগে তাদের সঙ্গে কথা বললাম, তারাও বেশ আপ্লুত এমন একটি খবরে।

ভোর রাতে টেলিফোনে খবর এলো আমার মা স্ট্রোক করেছেন। এক উদিয়মান তারকার জীবনের যাত্রাকালে মায়ের স্ট্রোকের খবর। জীবন চলার পথে সেদিনের ঘটনাটি ছিল নিশ্চয় একটি বাঁধা। হাসপাতালে মার সমস্ত ব্যবস্থা করে ছেলেকে তার গন্তব্য স্থানে রেখে ফিরে আসি মায়ের কাছে।

পথে বার বার মনে হচ্ছিল এক পড়ন্ত নক্ষত্রের পাশাপাশি আরেকটি উদিয়মান নক্ষেত্রের যাত্রা! এ বাঁধা কি কাটিয়ে উঠতে পারব? বাবা-মা মারা গেছেন। জনাথান নানা বাঁধা-বিঘ্ন সত্যেও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য।

সব সময় অতীত নিয়ে চিন্তা করলে, অতীতে কী হয়েছে সেসব ভেবে থেমে থাকলে জীবনে কখনও এগোনো যাবে না। জীবনে ব্যর্থতা ছিল, থাকবে। খারাপ সময় ছিল, থাকবে, কিন্তু সেগুলো নিয়ে সবসময় চিন্তা না করে নিজের উপর ভরসা রেখে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। অতীতের ভুলগুলো শুধরে নিয়ে কীভাবে ভালো কিছু করা যায় সেই চেষ্টা করতে হবে। তাহলে একসময় সত্যি সত্যিই সফলতার কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া সম্ভব হবে।

সফলতা সবার কাছেই কাঙ্ক্ষিত একটি শব্দ। কিন্তু সাফল্য বা সফল হওয়া মানেই বা কী? অর্থ, ক্ষমতা, প্রতিপত্তি, সম্মান, পরিচিতি বা কাঙ্ক্ষিত ডিগ্রি ইত্যাদি অর্জনই কি সাফল্য, নাকি এর মানে অন্য কিছু? ধনী এবং ক্ষমতাধর ব্যক্তিটি যদি দিন শেষে অসুখী বা অতৃপ্ত থাকে, তাঁকে কি খুব একটা সফল বলা যায়? আসলে সফলতা শব্দটির নিজস্ব বৈশিষ্ট্যেই খুব ব্যক্তিগত এবং একেকজনের কাছে একেক রকম। তবে বলা যায়, প্রতিটি মানুষই অফুরন্ত সম্ভাবনা নিয়ে জন্ম নেয়।

সুতরাং জীবনের দায়ভার অন্যের ওপর চাপানো মানে নিজের ভালোমন্দের নিয়ন্ত্রণ অন্যের হাতে দিয়ে দেয়া।

জীবনে সফলতার স্বাদ পেতে হলে শত বাঁধাবিপত্তি সত্ত্বেও লেগে থাকতে হবে। এই লেগে থাকার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছোট-বড় নানা রকম ব্যর্থতা, ভুলত্রুটি, নিরুৎসাহ ইত্যাদি নানা কিছু হতে পারে। এসব বাঁধাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিয়ে যে ক্রমাগতভাবে নিজের কাজ করে যাবে, কঙ্ক্ষিত ফলাফলের দিকে সে তত দ্রুত এগিয়ে যাবে।

জীবন পথে চলা ১০০ মিটার রেস না, যেখানে নির্দিষ্ট দূরত্বে যেতে প্রতিযোগিতায় প্রথম হতে হবে। জীবন ম্যারাথন দৌড়ের মতো, সেখানে কে কতদূর পৌঁছাতে পারল, কতক্ষণ টিকে থাকল সেটাই মুখ্য। এই লম্বা রেসে মাঝে মাঝে পিছে, কখনো বা সমানতালে, আবার কখনো সামনে এগোবে। এখানে কে কার থেকে আগে বা পিছে গেল, সেটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ না বরং এই লম্বা পথে কে কত দূর টিকে থাকতে পারল সেটাই আসল।।

মনে রাখতে হবে সাফল্য, সুখ বা আনন্দের চাবিকাঠি নয়, তবে সুখ বা আনন্দ সাফল্যের উপাদান। সুতরাং যে কাজ ভালো লাগে সেটাতে লেগে থাকতে হবে। বাঁধা থাকবে জীবনে কিন্তু সাফল্য বাঁধার মধ্য দিয়েই আসবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম