মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি
রহমান মৃধা, সুইডেন থেকে
প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০১৯, ০৭:৫২ পিএম
SOS stands for Save Our Souls, সুইডিশে বলা হয় “রেড্ডা ভোরা স্যল্যার” (Rädda våra själar)। বাংলায় বলা যেতে পারে “আমাদের জীবন বাঁচাও।” জীবনে যখন জটিল ঝুঁকি আসে তখন সুইডেনে SOSএ ফোন করলে সাহায্য এসে হাজির হয়।
১১২ সুইডেনের SOS নাম্বার। জিপিএস (গ্লোবাল পাথ সিস্টেম) এর সাহায্যে পুলিশ কর্তৃপক্ষ সহজেই খুজে বের করে সমস্যা কোথায় ঘটেছে। একারণে তাদের পক্ষে অনেক জটিল সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশে জানিনা এধরনের সাহায্যের ব্যবস্থা আছে কিনা! ডিজিটাল বাংলাদেশে এমনটি হতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি। দেশের জনগণের যে কোন সমস্যায় যদি পুলিশ, RAB বা সশস্ত্র বাহিনীর সাহায্য যথা সময়ে না পাওয়া যায় তবে জনগণ নিজেই আইন হাতে তুলে নেয়।
সেক্ষেত্রে সমস্যার মাত্রা বাড়ে বই কমে না। সরকারের উচিত হবে দেশের জনগণের নিরাপত্তার ওপর উন্নতমানের পদক্ষেপ নেয়া। প্রায়ই নজরে পড়ে নানা ধরনের উশৃঙ্খল এবং ভয়াবহ ঘটনা যা ফেসবুক বা খবরের মাধ্যমে দেশ বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে অথচ কর্তৃপক্ষে তার কিছুই জানেনা। না জানার নিশ্চয় যুক্তিসংগত এবং গ্রহণযোগ্য কারণ রয়েছে।
যদি SOS এলার্ম সিস্টেম সঠিকভাবে কাজ করে তবে বেশির ভাগ অপ্রত্যাশিত এক্সিডেন্ট, ধর্ষণ, খুন, ছিনতাই, এসিড নিক্ষেপ বা আগুনে পোড়া থেকে অনেককেই বাঁচানো সম্ভব হওয়ার কথা। যে দেশে এখনও দিনে দুপুরে মানুষ মানুষকে খুন করে।
যে দেশে মসজিদ বা মন্দিরে ধর্ষণ হয়। যে দেশের শত শত নারী দূরপরবাসে এবং বিশেষ করে মুসলিম দেশে কর্মরত অবস্থায় ধর্ষিত, নিপীড়িত, নির্যাতিত হয়ে জীবন্ত বা মৃত অবস্থায় দেশে ফিরে আসছে, সেদেশের আইন বিভাগ এবং তার প্রসাশন বিভাগ যদি দেশের জনগণের নাগরিক নিরাপত্তা দিতে না পারে তাহলে কি দরকার আছে সেই প্রসাশনের? সদ্য ঘটে যাওয়া অনেকগুলো ঘটনা বাংলার মাটিতে রক্তের স্রোত বইয়ে দিয়েছে, সরকার ইচ্ছে করলে এসমস্ত বর্বরতার নিপাত ঘটাতে পারত কিন্তু তা করা হয়নি বা হচ্ছে না। খেলাধুলার জগতে বাংলাদেশের একটি জায়গা বিশ্বের মাঝে গড়ে উঠেছিল ক্রিকেটের মাধ্যমে, তার ভেতরেও জঘন্য রাজনীতি ঢুকানো হয়েছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।
দেশের দুইজন ভালো খেলোয়াড়কে প্রলোভন দেখিয়ে সরাতে চেষ্টা এবং একজনকে সরকারি দলে ঢোকানো হয়েছে। অন্যজনও সেদিন ক্রিকেট ছেড়ে রাজনীতিতে মানষিক ভাবে চলে যায়। কি দরকার ছিল ক্রিকেট খেলোয়াড়দের রাজনীতিতে ঢোকানো? সেই যে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে তারপর সেটা এখন সর্বনাশা পদ্মানদীর মত ভাঙ্গতে শুরু করেছে। সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে সবাই যার যার চিন্তায় ব্যস্ত। বর্তমানে দেশের ঘৃণা এবং প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতির কারণে এমনটি হচ্ছে। কারণ বর্তমান সরকার এবং প্রশাসন ভালো করেই জানে যদি বিরোধী দল ক্ষমতায় আসে তখন কি অবস্থা হবে তাদের, তাই যে কোন মূল্যে টিকে থাকতে উঠেপড়ে লেগেছে তারা। দেশ জাহান্নামে গেলে কিছু যায় আসে বলে মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে সরকার এবং তার প্রশাসন বিভাগ নির্লিপ্তভাবে দেশের এই অন্ধকার পরিস্থিতি শুধু দেখছে। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীকে দেশের বৃহ্ত্তর স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছেনা।
কি কারণ থাকতে পারে সশস্ত্র বাহিনীর নিরবতার পেছনে! প্রতিদিন যদি একটি দুর্ঘটনা ঘটে এবং প্রতিদিন যদি একটি জীবনের বিলুপ্তি হয়, যথেষ্ট নয় কি সশস্ত্র বাহিনীকে দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে কাজে লাগানো? শুধু কি বহি:শত্রুর থেকে দেশকে রক্ষার করার জন্য সশস্ত্র বাহিনীকে রাখা হয়েছে? দেশের আভ্যন্তরীণ সমস্যার সমাধানে যেখানে পুলিশ বা RAB বার বার ব্যর্থতার পতাকা উড়িয়েছে, সেখানে কিভাবে নিরবতা পালন করতে পারে দেশের উচ্চতর প্রসাশন! সরকারের গুরুদায়িত্ব নাগরিকের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করা।
তা বজায় রাখতে যদি প্রয়োজন পড়ে পুরো দেশের সশস্ত্র বাহিনীর তা প্রয়োগ করতে হবে। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বেতনভুক্ত কর্মচারী যদি তার মালিকের জীবনের নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ হয় তাহলে দরকার আছে কি তেমন কর্মচারীদের? ভাববার সময় এসেছে আমাদের। বর্তমান সরকার সবার সরকার, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সবার প্রধানমন্ত্রী। বর্তমান প্রসাশন সবার জন্য সেখানে বর্ণ, ধর্ম বা বিরোধী দল বলে কিছু থাকার কথা নয়। হচ্ছে কি গণতন্ত্রের সৃজনশীল প্রাকটিস বাংলাদেশে! খোলো খোলো দ্বার, রাখিয়ো না আর বাহিরে আমায় দাঁড়ায়ে। দাও সাড়া দাও, এই দিকে চাও, এসো দুই বাহু বাড়ায়ে॥