আরব বিশ্বের মানুষের কাছে নজরুলের সৃষ্টিসমূহ ছড়িয়ে দিতে সৌদি আরবে নজরুল একাডেমি শাখার অনেক কিছু করার আছে। এ শাখার মাধ্যমে প্রবাসীদের নজরুল চর্চা এবং আরবি ভাষান্তর করে আরবীয় সাহিত্য-সংস্কৃতিতে কবির সৃষ্টিগুলি ছড়িয়ে দেয়ার সুযোগ রয়েছে।

নজরুল একাডেমি সৌদি আরব শাখা আয়োজিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠানে দূতাবাসের প্রেসউইংয়ের সচিব মো. ফখরুল ইসলাম এসব বলেন। তিনি বলেন, প্রবাসী প্রজন্মদের বাঙালি সংস্কৃতি চর্চা, জাতিসত্তার উপাদান সংগ্রহ, বাংলা সংস্কৃতির হাজার বছরের সংগীতের ধারাবাহিক উপকরণ অন্বেষণ এমনকি বাঙালির সমাজবদ্ধতার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে এ একাডেমি নানা কর্মসূচি হাতে নিতে পারে।

২৯ আগস্ট রিয়াদের একটি কম্যুনিটি সেন্টারে একাডেমির সৌদি আরব শাখা আয়োজিত জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রধানবক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন দূতাবাসের প্রেসউইং কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলাম। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন দূতাবাসের ইকনোমিক মিনিস্টার ড. আবুল হাসান। সভাপতিত্ব করেন সৌদি আরব নজরুল একাডেমি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথিরা ছিলেন রিয়াদের প্রিন্স সুলতান বিশ্ববিদ্যায়ের (পিএসইউ) আইন বিভাগীয় সহকারী অধ্যাপক ড. শকিকুল হাসান, পিএসইউ’র গবেষণা ও আন্তর্জাতিক প্রকাশনা জার্নালের প্রধান সম্পাদক ড. মো. নুরুন্নবী, রিয়াদ আওয়ামী পরিষদের সভাপতি এমআর মাহবুব, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ডা. শাহআলম, ঢাকা প্রবাসী অ্যাসোসিয়েশনের (ডিপিএ) সাধারণ সম্পাদক গাজী সাঈদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম, এনামুল কবির এবং আরো অনেকে।

ফখরুল ইসলাম আরো বলেন, জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে নজরুল একাডেমি দীর্ঘ ৫১ বছরের ঐতিহ্য বহন করে চলছে। এর মাধ্যমে দেশের বরেণ্য শিল্পীদের জনপ্রিয়তা রয়েছে। কেন্দ্রীয় নজরুল একাডেমি আদি গ্রামোফোন রেকর্ড থেকে নজরুল সংগীতের শুদ্ধতা ব্যবহারে নানান গবেষণা চলমান রেখেছে। ফলে, নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা নজরুল সংগীতের শুদ্ধতার ওপর যত্নবান হয়ে সংগীত শিখছেন এবং তা পরিবেশন করছেন।

ফখরুল ইসলাম বলেন, সৌদি আরবে বাংলাদেশি স্কুলগুলোতে নজরুল একাডেমির শাখা-কার্যক্রম করে প্রবাসী প্রজন্মরা নজরুল চর্চায় অগ্রসর হতে পারবে। এছাড়া বাংলা সংগীতের বিভাগীয় পর্যায়গুলি চালু করে প্রবাসী প্রজন্মরা বেশি উপকৃত হবে।

ফখরুল বলেন, সৌদি আরব শাখা সাংস্কৃতিক কর্মসূচি হাতে নিয়ে নজরুলের বিভিন্ন দিবস ও বার্ষিকী আয়োজনের পরিকল্পনা করলে দূতাবাস সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে। তিনি নজরুল একাডেমি শাখার মৌলিক আচরণ অবশ্যই জাতীয় পর্যায়ে হওয়ার আহ্বান জানান। যাতে প্রতিষ্ঠানটি প্রবাসীদের জন্য শিক্ষণীয় সংগঠন হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় কবিকে বাংলাদেশে এনে নাগরিকত্ব এবং জীবন ধারণের সকল ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছেন উল্লেখ করে ফখরুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর এই মহতি পদক্ষেপের কারণে নজরুলের সমগ্র সৃষ্টির মাত্রভারী উপকরণগুলি আমাদের জানতে সহজসাধ্য হয়েছে। তা না হলে, তার সৃষ্টির অনেক কিছুই এতদিন বিলুপ্ত হয়ে যেত। তিনি বলেন, নজরুল একাডেমির কর্মযজ্ঞ এবং বিভিন্ন গবেষণায় বর্তমানে অনেক কিছুই দৃশ্যমান হচ্ছে।

মো. ফখরুল ইসলাম আরবিভাষী জনগোষ্ঠীর কাছে নজরুলের সৃষ্টিসমূহ তুলে ধরার জন্য সৌদি আরব শাখাকে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করে রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীর সঙ্গে বিশেষ পরামর্শ করার আহ্বান জানান। এ ব্যাপারে দূতাবাসের পক্ষে সব ধরণের সহযোগিতা দেয়ার আশ্বাসও দেন তিনি।

এতে নজরুলের কবিতা আবৃত্তি, হামদ-নাত ও বিভিন্ন অঙ্গের সংগীত পরিবেশন করেন একাডেমির শিল্পীরা।

অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে সার্বিক উপস্থাপনা করেন কবি শাহজাহান চঞ্চল ও আবৃত্তিকার রুচিরা সুলতানা।