Logo
Logo
×

পরবাস

প্রশান্ত মহাসাগরের পাড়ে

Icon

রহমান মৃধা, সুইডেন থেকে

প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০১৯, ১১:১৩ এএম

প্রশান্ত মহাসাগরের পাড়ে

নীল আকাশের নিচে প্রশান্ত মহাসাগরের পাড়ে, নীল রংয়ের পানিতে, সোনালী রংয়ের চুল, নীল রংয়ের চোখ, রোদ্রের ঝলকে, পলক ফেলতে, দেখা মেলে তার আমার সঙ্গে।

সে হঠাৎ জিজ্ঞেস করল - হাই, আর ইউ ফ্রম ইনডিয়া? নো, ফ্রম বাংলাদেশ। ওহ! অ্যান্ড ইউ? আই এম ফ্রম হনুলুলু, হাওয়াই। মাই নেইম ইজ পিটারশন, হেলেনা পিটারশন। আই এম মৃধা, রহমান মৃধা।

ব্যবসা সংক্রান্ত ব্যাপারে এসেছ এখানে? না, FDA (food and drug  administration) conferenceএ। তুমি? হানিমুনে এসেছি। কার হানিমুন, তোমার? না আমার বান্ধবীর। বাহ! মজার ব্যপার তো? মানে? না সাধারণত হানিমুনে স্বামী-স্ত্রী আসে জানতাম কিন্তু বান্ধবীও আসে তা জানতাম না। তা কি করা হয় হনুলুলুতে? ফটো মডেল। বেশ, তবে তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে না তুমি দেখতে হাওয়াইয়ান। না আমি জন্মসূত্রে সুইডিশ।

হঠাৎ ইংরেজী ছেড়ে সুইডিশে কথা বলতে শুরু করলাম। হেলেনা এতক্ষণ যাই ভাবুক না কেন এবার সে মুগ্ধ হয়েছে। বাংলাদেশি, এসেছে FDA conference এ, অথচ হুড় হুড় করে সুইডিশ বলছে! কিউরিয়াস আমার থেকে সে বেশি বলে মনে হচ্ছে। এদিকে গল্প জমেছে ভালোই। হঠাৎ ইচ্ছে করে চলে যাবার ভান করতেই বলে, হেই যেওনা প্লীজ। আমি বললাম তাড়া আছে, তবে বিকেল ছয়টার পর ফ্রি যদি সময় থাকে আসতে পার। আমি আছি হোটেল হায়াত রিজেন্সিতে।

কেন যেন মনে হয়েছিল হেলেনা আসবে হোটেলে দেখা করতে। সন্ধ্যা সাতটা বাজতেই রিসেপশন থেকে ফোন এসেছে রুমে। ফোন ধরে হ্যালো বলতেই জানলাম আমার গেস্ট এসেছে হোটেলের লবিতে, অপেক্ষা করছে। বললাম, ওঁকে আমি আসছি।

বুকটা একটু জোর গতিতে ধড়পড় করতে শুরু করল। ঝটপট করে নিচে নেমে এলাম। হেলেনার গায়ে নীল রংয়ের পোশাক,  মানিয়েছে বেশ। বললাম এসেছ তাহলে, ও বললো হ্যাঁ। জিজ্ঞেস করলাম ডিনার করেছ? বললো না। তাহলে চলো যাই বাইরে।রিসসপশনে বললাম একটি ভালো রেস্টুরেন্টে আমাদেরকে ড্রাইভার যেন নিয়ে যায়। হেলেনা বললো চলো না ইতালিয়ান রেস্টুরেন্ট যাই, বললাম ঠিক আছে।

রাতের ডিনার প্রশান্ত মহাসাগরের পাড়ে, এক সুইডিশ রমনীর সঙ্গে, আজ থেকে পঁচিশ বছর আগের কথা। সে দিন হয়েছিল নানা কথা। হেলেনা সুইডেনের এনসোপিংয়ের মেয়ে। মডেলিং করতে এসেছে হনুলুলুতে। থাকবে আরো এক বছর, তারপর ফিরবে ইউরোপে।

রাতের ডিনার শেষে প্রশান্ত মহাসাগরের পাড় দিয়ে জোঁছনা রাতে হাঁটতে হাঁটতে হেলেনার হোটেলে এসে তাকে রেখে ফিরে এলাম আমার হোটেলে।

ঘুমোতে যাব ঠিক তেমন সময় ফোন বেজে উঠল। হ্যালো হেলেনা বলছি। কাল সন্ধ্যায় তুমি কি ফ্রি? বললাম কেন? মেক্সিকোর তিজুয়ানায় ডিনার করতে যাব আমার বান্ধবীদের নিয়ে, তুমি যাবে কি আমাদের সঙ্গে?  (প্রসজ্ঞত; বিয়ের কয়েকদিন আগে মেয়েরা মিলে কন্যাকে নিয়ে আর ছেলেরা বরকে নিয়ে হইহুল্লোর মধ্যদিয়ে আনন্দ ফুর্তি করে থাকে। এমনটি সুইডেনেও হয়। হেলেনা তার বান্ধবীদের সঙ্গে এসেছে কন্যাকে নিয়ে আনন্দ ফুর্তি করতে)। যাইহোক রাজি হয়ে গেলাম।

তিজুয়ানা, সান ডিয়েগো থেকে ট্রেনে মাত্র পনের মিনিটের পথ। হেলেনার তিন বান্ধবী, সঙ্গে আমি। সবার সঙ্গে পরিচিত হতে সময় পার হয়ে গেল আর ঢুকে গেলাম মেক্সিকোতে। ডিনারে বসেছি, হেলেনা আমার পাশে বসেছে। আমাদের চারপাশের পরিবেশ বেশ ফ্রি এবং ফ্রেন্ডলী।

ভালোই লাগছে সঙ্গীদের সঙ্গ। আমি একা সান ডিয়েগোতে, কোর্স শেষে বিকেল এবং সন্ধ্যায় সাথী হারা নই, বেশ চলছে মন্দ নয়।

ডিনার শেষে ফেরার পথে হঠাৎ সুইডেন থেকে ফোন এসেছে। আমাদের কথাপোকথন শুনতে পেরেছে হেলেনা, দেখে মনে হলো একটি ফুলন্ত বেলুন হঠাৎ চুপশে গেল! কিছুক্ষণ চুপচাপ হয়ে গেলাম, ট্রেনে করে ফিরতে পথে হেলেনা জিজ্ঞেস করল, মারিয়া কে? বললাম, মারিয়া আমার ফিয়ান্সে। সে ফোন করেছিল জানতে, কি করছি, কেমন আছি, কোথায় আছি এবং কার সঙ্গে আছি ইত্যাদি। আমি তোমার কথা বলেছি তাকে। ওহ, থ্যাংক ইউ বলে হেলেনা চুপ মেরে গেল।

সকালে ফিরতে হবে লস অ্যাঞ্জেলসে, পরে ফ্লাই বাক টু স্টকহোম। বিদায়ে জড়িয়ে ধরল হেলেনা, মনে হলো অনেক দিনের চেনা। হেলেনার বুকের ভিতর ধড়পড় শব্দ মনে করিয়ে দিল Michael Buble’এর to be loved গানের কিছু কথা; “ Close your eyes, give me your hand, darling

Do you feel my heart beating

Do you understand?

Do you feel the same…”!

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম