নিউইয়র্কে ‘মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান
হাসানুজ্জামান সাকী, যুক্তরাষ্ট্র থেকে
প্রকাশ: ০৬ মে ২০১৯, ০১:১১ পিএম
নিউইয়র্কে লেখক ও সাংবাদিক শামীম আল আমিনের ‘মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১’ বইয়ের সম্প্রতি প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয়েছে।
জ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশ প্লাজা মিলনায়তনে বইয়ের পাঠোন্মোচন করেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের উপ স্থায়ী প্রতিনিধি তারেক মো. আরিফ হোসেন, নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ ও পিপল এনটেকের প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জিনিয়ার আবু হানিফ।
সাংবাদিক হাসানুজ্জামান সাকীর সঞ্চালনায় কামরুজ্জামান বকুলের কণ্ঠে দেশের গান ‘যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে, লক্ষ মুক্তি সেনা’ এই দরদি গানটি দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। মিলনায়তন জুড়ে তখন আবেগঘন উৎসবমুখর পরিবেশ। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে সাউথ এশিয়ান এন্টারটেইনমেন্ট।
২০১৮ সালের ১১ মে ফ্লোরিডার সময় অনুযায়ী বিকাল ৪টা ১৪ মিনিটে মহাকাশে উড়ে যায় ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাই ১’। বাংলাদেশে তখন শুক্রবার শেষ হয়ে শনিবার পড়েছে। ক্ষণ রাত ২টা ১৪ মিনিট। ঐতিহাসিক সেই ঘটনার এক বছর পূর্তি হতে চলেছে। সে উপলক্ষকে সামনে রেখে নিউইয়র্কে এমন আয়োজন।
চলতি বছর অমর একুশে বইমেলায় আদিত্য প্রকাশ এনেছিল ‘মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১’। তখন বইটি নিয়ে ঢাকায় উৎসব হয়েছিল। এবার নিউইয়র্কে হয়ে গেল চমৎকার একটি প্রকাশনা অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে জাতিসংঘে বাংলাদেশের উপ স্থায়ী প্রতিনিধি তারেক মো. আরিফ হোসেন বলেন, একজন সাংবাদিক হিসেবে শামীম আল আমিন একটি ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহের সংবাদ সংগ্রহের কাজ করেই কেবল থেমে থাকেননি, তা নিয়ে বই লিখে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যে বইটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে মত দেন তিনি।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুন্নেসা বইটিকে একটি ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে তুলে ধরে বলেন, ভবিষ্যতে ইংরেজিসহ বিভিন্ন ভাষায় এ বইটি প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া দরকার। এতে করে বিশ্ববাসী বাংলাদেশের গৌরব সম্পর্কে জানতে পারবে।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান বইটির জন্য লেখককে ধন্যবাদ জানান। তিনি অভিযোগ করে বলেন, জাতির জনকের নামাঙ্কিত স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের সময়ও নানান অপপ্রচার চালানো হয়েছিল। কিন্তু সফল উৎক্ষেপণের মাধ্যমে সবাই জবাব পেয়েছে। এখনও স্যাটেলাইটের কার্যকারিতা নিয়ে কোন কোন মহল ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা তথ্য প্রচারের চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদেরকে রুখে দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ইঞ্জিনিয়ার আবু হানিফ বলেন, শুধু কথায় নয়, দেশ যে সত্যিকার অর্থেই ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মতো ঘটনা তারই প্রমাণ। সরকার তথ্য-প্রযুক্তি খাতকে আরও অনেকদূর নিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, বাংলাদেশ এখন নিজস্ব স্যাটেলাইটের মালিক। দেশে যেভাবে উন্নয়ন হচ্ছে, হয়তো একদিন বাংলাদেশ নিজেই এমন স্যাটেলাইট বানিয়ে মহাকাশে পাঠাতে পারবে।
সাংবাদিক হাসান ফেরদৌস মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষপণের ঘটনাকে বাংলাদেশের বড় একটি বিজয় হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি লেখককে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বইটি জুড়ে যে আনন্দ উদযাপন লিপিবদ্ধ হয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।
লেখক শামীম আল আমিন তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ইতিহাস গড়া সেই দিনে কেনেডি স্পেস সেন্টারে উপস্থিত থাকতে পারাটা ছিল ভীষণ সৌভাগ্যের। আর সেই ঘটনাপ্রবাহ লিখে রাখা একান্ত প্রয়োজন বলে মনে হওয়ায় বইটি লেখা। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে এক ধরনের জাগরণ তৈরি করাই বইটি লেখার উদ্দেশ্য। যাতে দেশের গৌরব সম্পর্কে তরুণেরা জেনে নিজেরাও ভালো কাজে উদ্যোগী হতে সচেষ্ট হয়।
প্রকাশনা অনুষ্ঠান উপলক্ষে নাইজেরিয়া থেকে লিখিত বার্তা পাঠিয়েছেন সেখানে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সময় তিনি নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেলের দায়িত্বে ছিলেন।
লিখিত বাণীতে তিনি বলেন, ‘ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে নিজস্ব স্যাটেলাইট আছে এমন গর্বিত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ৫৭ নম্বরে নিজেদের নাম লিখিয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামের সঙ্গে সম্পৃক্ত এই স্যাটেলাইট সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এ নিয়ে বই লেখায় শামীম আল আমিনকে অভিনন্দন জানান তিনি।
সাংবাদিক হাসানুজ্জামান সাকীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে দুটি কবিতা আবৃত্তি করে সবার হৃদয় ছুঁয়ে যান গোপন সাহা। শেষে সঙ্গীত শিল্পী শাহ মাহবুব যখন ‘সূর্যোদয়ে তুমি, সূর্যাস্তে তুমি’ গানটি শুরু করেন, তখন মিলনায়তনের সবাই দাঁড়িয়ে গানের সঙ্গে সুর মেলান। অনুষ্ঠানস্থলে থাকা সবাই তখন আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। যেন ফিরে যান প্রিয় বাংলাদেশে।