মালয়েশিয়ায় অবৈধ লেনদেনের দায়ে ৫ বিদেশি আটক
আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া থেকে
প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৪:১৬ এএম
মালয়েশিয়ায় হুন্ডি প্রতিরোধে নড়েচড়ে বসেছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক (বিএনএম)। চলমান অভিযানে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ৮ টি প্রতিষ্ঠান।
অবৈধ লেনদেনের দায়ে আটক করা হয়েছে ৫ জন বিদেশি অবৈধ অভিবাসীকে। তবে তদন্তের স্বার্থে এ দুই বিদেশির নাম প্রকাশ করা হয়নি।
১২ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার রাজধানি কুয়ালালামপুর জালান তুংকু আব্দুল রহমান এবং জালান দাতো 'কেরামত আটটি রেমিটেন্স প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালায়। লাইসেন্স ছাড়াই অর্থের পরিবর্তন ও রেমিটেন্স ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে এ প্রতিষ্ঠানগুলি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, পুলিশি ও ইমিগ্রেশন বিভাগ মানি সার্ভিসেস বিজনেস অ্যাক্ট ২০১১ (এমএসবিএ) এর ধারা ৭ (১) এর অধীনে এ অভিযান যৌথভাবে পরিচালিত হয়। তদন্তের স্বার্থে ওই প্রতিষ্ঠানগুলির সংশ্লিষ্ট দলিল, কম্পিউটার ও কাগজপত্রাদি জব্দ করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠান গুলি হচ্ছে: আনভার কায়া এন্টারপ্রাইজ (০০২৪২২৮১৩-ডি), কাওজার এন্টারপ্রাইজ (০০২২২২৪৯৩-কে), মাবরোক মহায়দেন এন্টারপ্রাইজ (পিজি ০৪৪১৩৭৮৯-ইউ), নিশা খান এন্টারপ্রাইজ (০০২৬১৬৬৯২-ভি), রাফি মাজু এন্টারপ্রাইজ (০০২৬৮৯৯৬১-এক্স), বি ফার্ষ্ট রিসোর্স (০০২৫৮১৮৫৬-এক্স), মানি মি @ হোটেল কিতা (৯৪৫১৯৭-ইউ), নূর এক্সপ্রেস এন্টারপ্রাইজ (০০২৩৯২৬৮৫-এইচ)।
ইমিগ্রেশন অ্যাক্ট ১৯৫৯/৬৩ (অ্যাক্ট ১৫৫) এর অধীনে অভিযানে ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক অবৈধ সংস্থার গ্রাহকদের পরিচালনার জন্য জড়িত পাঁচ অবৈধ অভিবাসীদের আটক করা হয়েছে।
‘মানি সার্ভিসেস বিজনেস এ্যাক্ট ২০১১ (এমএসবিএ) এর ধারা ৭ (১) এর অধীনে প্রদত্ত লাইসেন্স ছাড়াই অর্থ পরিবর্তন এবং রেমিট্যান্স ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করা এমএসবিএর ধারা ৪ (১) এর অধীনে একটি অপরাধ’।
বি এন এম জানায়, যে এমএসবিএর ধারা ৪ (১) এর অধীনে কোন অপরাধ বা অপরাধ সংঘটিত কোনও ব্যক্তি বা সংস্থার বিরুদ্ধে ৫ মিলিয়ন রিঙ্গিত জরিমানা, বা ১০ বছরেরও বেশি মেয়াদে কারাদন্ড বা উভয়দন্ডে দন্ডিত করা হবে।
লাইসেন্সহীন আর্থিক ক্ষতির বিরুদ্ধে এবং জনসাধারণকে রক্ষা করার জন্য অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং জনসাধারণকে অবৈধ অর্থ পরিষেবাদি ব্যবসা বা রেমিট্যান্স লেনদেন না করার আদেশ জারি করেছে সংশ্লিষ্টরা।
এ দিকে মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাঙালিরা হুন্ডি ব্যবসায় জড়িত, যা বাংলাদেশ সরকারের রেমিটেন্স খাতে গুরুত্বপূর্ণ কুপ্রভাব ফেলছে। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি একটি সরকারি ও দুটি বেসরকারি ব্যাংকের শাখা থাকার পরও হুন্ডিকে সঠিক হিসেবে মনে করছে অনেকে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ ব্যবসার সঙ্গে শতাধিক বাংলাদেশি জড়িত রয়েছে। এদের মধ্যে হন্ডি ব্যবসার শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। প্রত্যেকটি প্রদেশে রয়েছে তাদের শক্তিশালি নেটওয়ার্ক। এ নেটওয়ার্ক প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২-৩ কোটি টাকা লেনদেন করে হুন্ডির মাধ্যমে।
বাংলাদেশ দূতাবাস ও রেমিটেন্স হাউসগুলো বৈধ পথে রেমিটেন্স প্রেরণে সচেতনতামূলক সভা-সেমিনার করলেও কে শুনে কার কথা।
মালয়েশিয়াস্থ এনবিএল রেমিটেন্স হাউসের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার শেখ আক্তার উদ্দিন আহমেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, রেমিটেন্স বৃদ্ধির লক্ষ্যে এনবিএলের পক্ষে আমরা সচেতনতামূলক সভা সেমিনার করে যাচ্ছি। আর এ সচেতনতা বাড়াতে হাইকমিশনার মহ. শহীদুল ইসলাম দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। হাইকমিশনারের দিকনির্দেশনাই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রবাসীদের বলা হচ্ছে বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠানো নিরাপদ এবং এনবিএলের ৯টি শাখার পাশাপাশি এজেন্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে যাতে করে এনবিএলের সেবার মান আরও বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি মনে করেন।
অগ্রণী রেমিটেন্স হাউসের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ও ডাইরেক্টর মো. লুৎফুর রহমান বলেন, বৈধ পথে রেমিটেন্স প্রেরণে সচেতনতামূলক বিভিন্ন আলোচনা চলছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ দূতাবাসে হাইকমিশনার মহ. শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনাসভা হয়েছে।
কীভাবে বৈধপথে দেশে রেমিটেন্স বাড়ানো যায় সে বিষয়ে হাইকমিশনার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
এ দিকে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে বাংলাদেশ সরকারকেই ভূমিকা রাখতে হবে বলে মন্তব্য করছেন প্রবাসীরা। তারা বলছেন মালয়েশিয়া যদি পারে অবৈধ লেনদেন ঠেকাতে বাংলাদেশ কেন পারবেনা?
অবৈধপন্থায় রেমিটেন্স প্রেরণ রোধ করে ব্যাংকের মাধ্যমে শ্রমিকদের কষ্টার্জিত অর্থ দেশে আনতে পারলে প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হবে। একই সঙ্গে সরকারকে বছর ভিত্তিক রেসিট্যান্স আদায়ের জন্য একটি টার্গেট নির্ধারণের জন্যও আহ্বান জানান প্রবাসীরা।