লিসবনের পর্যটনের আকর্ষনীয় এবং ঐতিহাসিক স্থানসমূহ
মো. রাসেল আহম্মেদ, পর্তুগাল থেকে
প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০১৯, ০২:৩২ এএম
প্রতি বছর পর্তুগালে সারা বিশ্ব থেকে বেড়াতে আসে প্রায় ১৫ মিলিয়ন মানুষ এবং যার প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ১৮ শতাংশ। সাম্প্রতিক সময়ে পর্তুগাল ট্যুরিজম বান্ধব নীতিমালা প্রণয়নের ফলে বেশকিছু শহর বিশ্বের অন্যতম সেরা ও আকষর্ণীয় টুরিষ্ট ডেস্টিনেশন এ পরিণত হয়েছে। বিশ্বের সেরা দশ টুরিস্ট ডেস্টিনেশনের অন্তত দুটি এখন পর্তুগালের দখলে।
পর্তুগালে বেড়াতে আসা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হলো রাজধানী শহর লিসবন। বৃহৎ সাতটি পাহাড় নিয়ে গঠিত টাগুস নদীর পাড়ের মনোরম এক শহর। এটি একটি প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক শহর। গ্রীসের এথেন্স এবং ইতালির রোমের পর বিশ্বের তৃতীয় প্রাচীন শহর হলো লিসবন। সাগর, পাহাড়, নদী বেষ্টিত প্রকৃতির পরিবেশ, সঙ্গে রয়েছে বেশ কিছু বিশ্ব ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির স্থান। পুরাতনের সঙ্গে আধুনিকতার মেলবন্ধনের এক অপরূপ সৌন্দর্য্যের শহরের নাম লিসবন।
চলুন জেনে নিই তেমনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থান বা দর্শনীয় জায়গা। প্রথমে চলে আসে ‘Jeronimos Monastery’ এর নাম। মূলত এটি হলো আবিস্কারক ভাসকো দা গামার সমাধিস্থল। এটি একটি বৃহৎ গীর্জা বা মট এবং এটিকে বিশ্বের অন্যতম সুদর্শন মট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ষোড়শ শতকে নির্মিত এ সমাধিস্থল বা গীর্জাটি একটি বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান হিসাবে স্বীকৃত।
১৪৯৮ সালে ভাসকো দা গামার ইন্ডিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রাকে স্মরণ করে এটির নির্মান কাজ শুরু হয়েছিল এবং এর বেশির ভাগ অর্থের যোগান এসেছিল আমাদের উপমহাদেশের মসলা বানিজ্য থেকে। লিসবন সিটি সেন্টার থেকে মাত্র দশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং বাস অথবা ট্রামে করে ১৫/২০ মিনিটে পৌঁছানো যায় সহজে।
Castelo de São Jorge লিসবনের প্রান কেন্দ্রে, পাহাড়ের পাদদেশে আলফামার পাশে অবস্থিত। এই রাজ প্রাসাদটি পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। এখান থেকে লিসবনের ৩৬০° ডিগ্রি ভিউ পাওয়া যায়। খুব কাছ থেকে টাগুস নদীর সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি সামান্য দূরে চোখ ফেললে আটলান্টিকের নীল জলরাশির দেখা মেলে।
১১৪৭ সালের আগ পর্যন্ত মরিশরা এখান থেকে খ্রিস্টান বাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করতো কিন্তু ঐ বছর Afonso Henriques এর নেতৃত্বে এ প্রাসাদ দখল করে নেয়। এর মধ্যে অবস্থিত যাদুঘর এবং প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, সুউচ্চ দেয়াল ও পর্যবেক্ষন টাওয়ার নিমিষেই যে কারো মন ভাল করে দিতে পারে।
Torre de Belém: A Historic Tower বেলেম টাওয়ার নামে পরিচিত এ দালানটি লিসবনের অন্যতম সেরা প্রতীক। ১৫১৫ থেকে ১৫২১ সালের মধ্যে নির্মিত এই টাওয়ারটি টাগুগ নদীর মাঝে গড়ে তুলেছিল সমুদ্রগামী নৌযান পর্যবেক্ষন করার জন্য। আবিষ্কারের যুগের অন্যতম সেরা একটি নিদর্শন হিসাবে এ টিকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসাবে স্বকৃীতি দিয়েছে ১৯৮৩ সালে। এটি পর্যটক আকষর্ণীয় স্থান বেলেমে অবস্থিত।
Oceanário de Lisboa: A Modern Aquarium লিসবন ওশেনারিয়াম হলো ইউরোপের সেরা ও বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অ্যাকোরিয়াম। ১৯৯৮ সালের লিসবন এক্সপো'তে এটির উদ্বোধন হয়েছিল। সামুদ্রিক প্রানীর এক অভয়ারণ্য, বিশেষ করে আটলান্টিক, ভারত, প্রশান্ত ও এন্টার্টিক মহাসাগরের জীব বৈচিত্র্য সমৃদ্ধ একটি অ্যাকোরিয়াম। পাশে রয়েছে ইউরোপের সর্ব বৃহৎ সেতু ভাসকো দা গামা ব্রিজ, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৭ কিলোমিটার এবং কেবল কার।
তাছাড়াও 'ট্রাম ২৮' রাউন্ড ভ্রমণের মাধ্যমে লিসবনে পুরাতন শহর আলফামা সহ বৃহৎ পাঁচটি পাহাড় ভ্রমণ করা যায়। সিটি সেন্টারে রয়েছে Elevador de Santa Justa: An Antique Elevator, এটি একটি একক লিপ্ট যার নকশা করেছে আইফেল টাওয়ারের নকশাবিদ। এই লিপ্ট থেকে লিসবন পুরো ৩৬০ ডিগ্রি ভিউতে দেখা যায়। Sé: Lisbon's Imposing Cathedral, Arco da Rua Augusta, Igreja do Carmo সহ অসংখ্য ঐতিহাসিক, নান্দনিক ও দর্শনীয় স্থান রয়েছে শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে।
সিটি সেন্টার থেকে মাত্র ১৫/২০ মিনিটের দূরত্বে রয়েছে নয়নাভিরাম সমুদ্র সৈকত। পর্যটকদের জন্য আলাদা সাইট পরিদর্শনের বাস, ট্রাম, মেট্রো সহ যোগাযোগের আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা।