একুশে পদকপ্রাপ্ত কণ্ঠশিল্পী নীলুফার ইয়াসমীনের জন্মদিন আজ
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১১:০৭ পিএম
বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী নীলুফার ইয়াসমীন
নীলুফার ইয়াসমীন বাংলাদেশের একজন বরেণ্য একুশে পদকপ্রাপ্ত কণ্ঠশিল্পী। রাগ প্রধান গানে অসাধারণ দখল থাকলেও তিনি নজরুল-সঙ্গীতশিল্পী হিসেবেই বেশি পরিচিত।
আজ তার শুভ জন্মদিন। ১৯৪৮ সনের ১৬ ফেব্রুয়ারি (মতান্তরে ১৩ ফেব্রুয়ারি) তিনি ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।
নীলুফার ইয়াসমীন উচ্চাঙ্গ, নজরুল, অতুলপ্রসাদ, দ্বিজেন্দ্রলাল, রজনীকান্ত, টপ্পা, ঠুমরি, কীর্তন, রাগপ্রধান, আধুনিক গানসহ গানের ভুবনের প্রায় সবগুলো শাখাতেই অবাধ বিচরণ করেছেন।
সঙ্গীতের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার নীলুফার ইয়াসমীনের পরিবার।পরিবারের সকলেই নিজ নিজ শিল্পক্ষেত্রে প্রথিতযশা শিল্পী। পাঁচ বোনদের মধ্যে তিনি চতুর্থ। বড় বোন ফরিদা ইয়াসমিন ও মেজো বোন ফওজিয়া খান প্রতিষ্ঠিত সঙ্গীতশিল্পী। ছোট বোন সাবিনা ইয়াসমিন বাংলাদেশের সঙ্গীতভুবনের উজ্জল নক্ষত্র।
নীলুফার ইয়াসমীনের মা মুর্শিদাবাদের স্বনামধন্য ওস্তাদ কাদের বখশের ছাত্রী ছিলেন। তিনি ভালো গান গাওয়া ছাড়াও ভালো হারমোনিয়াম বাজাতে পারতেন।
১৯৬৯ সালে প্রখ্যাত গীতিকার, সুরকার, শিল্পী ও অভিনেতা খান আতাউর রহমানের সঙ্গে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তার একমাত্র পুত্র কন্ঠশিল্পী খান আসিফুর রহমান আগুন একজন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী।
নীলুফার ইয়াসমীনের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শেখা শুরু হয় ওস্তাদ পি সি গোমেজ এর কাছে ১৯৬৪ সালে। একাধারে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত তিনি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শেখেন। তারপর উপমহাদেশের প্রখ্যাত ওস্তাদ বড়ে গুলাম আলী খানের সুযোগ্যা ছাত্রী মীরা ব্যানার্জীর কাছে তালিম নেন। এরপর প্রখ্যাত সারেঙ্গী বাদক ওস্তাদ সগীরউদ্দীন খাঁ ও মুরশিদাবাদের স্বনামধন্য ওস্তাদ এ দাউদ সাহেব ও প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে দীর্ঘকাল তালিমগ্রহণ করেন।
তিনি প্রখ্যাত কন্ঠশিল্পী, নজরুল-সঙ্গীতস্বরলিপিকার ও বিশেষজ্ঞ শেখ লুতফর রহমান ও সুধীন দাশের কাছে নজরুল-সঙ্গীত শিখেছেন।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের শুরু থেকে আমৃত্যু একজন নিয়মিত শিল্পী হিসেবে গান গেয়েছেন। নীলুফার ইয়াসমীন বেশ কয়েকটি ছায়াছবিতে কন্ঠ দিয়েছেন। যেমন- শুভদা, অরুণ-বরুন-কিরণমালা, জোয়ার ভাটা, আবার তোরা মানুষ হ, সুজন সখী , যে আগুনে পুড়ি, জীবন-তৃষ্ণা , জলছবি ইত্যাদি।
১৯৯৫ সাল থেকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগের নজরুল সঙ্গীত বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে মৃত্যুর শেষ দিন পর্যন্ত নিয়োজিত ছিলেন।
শিল্পী হিসেবে নীলুফার ইয়াসমিনের জনপ্রিয়তা শুধু দেশের গন্ডিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বিদেশেও ছিল ব্যাপক। ১৯৮৪ সালে কলকাতার 'অগ্নিবীণা'-র আমন্ত্রণে ঢাকাস্থ নজরুল একাডেমীর সাংস্কৃতিক দলের সঙ্গে কলকাতা গমন করেন। বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মেলনের আমন্ত্রণে দিল্লি ও কলকাতায় সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
এছাড়াও তিনি পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ফ্রান্স, পাকিস্তান ভ্রমণ করেন এবং সঙ্গীত পরিবেশন করে প্রচুর প্রশংসা অর্জন করেন।
সুজন চলচ্চিত্রে কন্ঠপ্রদানের জন্য ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সংস্থার পুরস্কার, শুভদা চলচ্চিত্রে কন্ঠপ্রদানের জন্য ১৯৮৬ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সংস্থার পুরস্কার, সঙ্গীত বিষয়ে অনন্য অবদানের জন্য ২০০৪ সালে মরণোত্তর রাষ্ট্রীয় একুশে পদক এবং নজরুল সঙ্গীতে অবদানের জন্য নজরুল পদক সহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন নীলুফার ইয়াসমিন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগে নজরুল সঙ্গীতে তার অবদানের কথা চিরস্বরণীয় করে রাখতে তার নামে নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগে পাঠাগার স্থাপন করা হয়েছে।
২০০৩ সালে সঙ্গীতভুবনের এ উজ্জল নক্ষত্র নীলুফার ইয়াসমিন ২০০৩ সালের ১০ মার্চ ৫৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।