সোনাক্ষী সিনহা বিয়ে করলেন অভিনেতা জাহির ইকবালকে। তাদের সাত বছরের সম্পর্ক বিয়েতে রূপ নিল। রোববার শাড়ি পরে জাহিরের নামে সিঁদুর সিঁথিতে পরলেন সোনাক্ষী। জাঁকজমকপূর্ণ নয়, একেবারেই সাদামাটাভাবে পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সামনে তিনি এ বিয়ে করেন।
ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদন অনুসারে, বলিউড নায়িকাদের বিয়ে মানেই তাদের পরনে বিখ্যাত কোনো খ্যাতনামা পোশাকশিল্পীর ডিজাইন করা শাড়ি বা লেহেঙ্গা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে একেবারেই ব্যতিক্রম সোনাক্ষী সিনহা। তার জীবনের বিশেষ দিনের জন্য যে শাড়িটি বেছে নিয়েছিলেন, সেটি ছিল তার মা পুনম সিনহার বিয়ের শাড়ি।
প্রায় ৪৪ বছর আগে সোনাক্ষীর মা পুনম সিনহা তার নিজের বিয়েতে এ শাড়িটি পরেছিলেন। আইভরি রঙের শাড়িটি যেমন অসাধারণ সূচিকর্মে ভরা ছিল, তেমনি আবেগেও পরিপূর্ণ। তবে সোনাক্ষী তার বিয়েতে কেবল মায়ের শাড়ি পরেই নয়, মায়ের গহনা পরেও সেজেছিলেন।
মায়ের শাড়ি আর গহনায় ঝলমল করছিলেন সোনাক্ষী সিনহা। অন্যদিকে জাহির পরেছিলেন সাদা ও সোনালি রঙের কাজ করা পোশাক। সোনাক্ষীর নিজেদের অ্যাপার্টমেন্ট 'অওরিয়েত'-এ তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। হিন্দু বা মুসলিম কোনো রীতি নয়, শুধু আইনি বিয়ে সারেন তারা। অবশ্য তারা যে এভাবেই বিয়ে করবেন, সে আভাস আগেই দিয়েছিলেন জাহিরের বাবা। তাদের বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন কেবল জাহির ও সোনাক্ষী পরিবার। এদিন বিয়ে নিয়ে বিবাদ, অভিমান ভুলে 'লাডলি' সোনাক্ষীর পাশে দাঁড়িয়ে তাকে আগলে রাখলেন বাবা শত্রুঘ্ন সিনহা। পাশে ছিলেন মা পুনমও।
দাদারের বাস্তিয়ান রেস্তারাঁতে আয়োজন করা হয় সোনাক্ষীর রিসেপশন। প্রায় এক হাজার অতিথি আমন্ত্রিত ছিলেন এদিন। ভোর ৪টা পর্যন্ত চলে এই মিক্স-অফ পার্টি। তাদের বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কাজল, সালমান খান, রেখা, অনিল কাপুর, সঞ্জয় লীলা বানসালি, হুমা কুরেশি, সায়রা বানুসহ আরও অনেকে।
এদিন এসেছিলেন সালমান। সোনাক্ষীর হবু স্বামীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া, জাহিরের সঙ্গে তার প্রেম এবং বলিউডে অভিনেত্রীর অভিষেক— এর সব কিছুর পেছনে অবদান ছিল সালমান খানের। আর এদিন তাদের দুজনের বিয়ের রিসেপশনে যোগ দিলেন বলিউড ভাইজানখ্যাত এ অভিনেতা। গায়ে কালো স্যুট পরে তিনি এসেছিলেন ‘ঘটক’হিসেবে। তাকে ঘটক বলার কারণ তো সবারই জানা। তিনিই জাহির ও সোনাক্ষীর ম্যাচমেকার হিসেবে কাজ করেন। একাধিক মৃত্যুর হুমকি উপেক্ষা করে, এদিন কড়া নিরাপত্তায় চলে আসেন সালমান খান। বিয়েতে এসেছিলেন সালমানের বোন অর্পিতা খান ও আয়ুশ শর্মাও। আর্পিতা ছিলেন জাহিরের স্কুলের সহপাঠী।
বিয়ের অনুষ্ঠান থেকেই একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন অভিনেত্রী কাজল। সেখানে তাকে দেখা যায় নতুন দম্পতি জাহির-সোনাক্ষীর সঙ্গে ড্যান্স ফ্লোর মাতাতে। তিনজনেরই গাল ভরা হাসি বুঝিয়ে দেয়— পার্টি ছিল সুপার-ডুপার হিট।
এসেছিলেন বলিউড অভিনেত্রী রেখা। তার সৌন্দর্য এখনো অতুলনীয়। অফ হোয়াইট আর সোনালি রঙের কম্বিনেশনের সালোয়ার স্যুট পরে এদিন আসেন তিনি। হাতে ম্যাচিং বটুয়া। আর খোঁপা বাঁধা চুল। গলায় ও কানে ভারি গহনা।
পিচ রঙের পালাজো স্যুটে এসেছিলেন অভিনেত্রী টাবু। বর্ষীয়ান অভিনেত্রী সায়রা বানুকেও দেখা গেল এদিন। তার গায়ে ছিল সবুজ রঙের স্যুট। এসেছিলেন সঞ্জয় লীলা বানশালি ও রবিনা ট্যান্ডন। হীরামান্ডি কোস্টার অদিতি রাও হায়দারিকে দেখা গেল এদিন। সঙ্গে ছিলেন প্রেমিক-অভিনেতা সিদ্ধার্থ। সোনালি রঙের লেহেঙ্গা পরেছিলেন অদিতি। আর সিদ্ধার্থের সাদা কুর্তার সঙ্গে বেজ রঙের ওভার কোট। অভিনেতার মাথায় ছিল হেয়ার ব্যান্ড। পার্টিতে রেখার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে দেখা গেল অদিতি ও সিদ্ধার্থকে। তাদের তিনজনের কাটানো সময় ছিল উষ্ণ-ভালোবাসায় ভরা।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১০ সালে সালমান খানের ছবি ‘দাবাং’ দিয়েই সোনাক্ষীর অভিনয় শুরু। আর শুধু সোনাক্ষীই নয়, জ়াহিরকেও বলিউডে প্রথম সুযোগ করে দেন সালমানই। ২০১৯ সালে সালমান খানের প্রযোজনা সংস্থার ছবি ‘নোটবুক’-এ জ়াহিরের প্রথম অভিনয়। বোঝাই যাচ্ছে— সোনাক্ষী আর জ়াহিরের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক এ অভিনেতার। ‘নোটবুক’ ছবিটি মুক্তির সময় সালমান বলেছিলেন, ‘ইকবাল রতনসি আমার ছোটবেলার বন্ধু।
সোনাক্ষীর পরিবারে কয়েক দিনে এই বিয়ে নিয়ে কম কটাক্ষ হয়নি। সোনাক্ষী তার লাইফ পার্টনার হিসেবে মুসলিম জাহিরকে বিয়ে করায় মত নেই পরিবারের, রটেছিল এমনটিও। শেষে এগিয়ে এসে অভিনেত্রীর বাবাই ‘খামোশ’ বলে চুপ করান কটাক্ষকারীদের। গোটা সিনহা পরিবারকে এদিন দেখা গেল বড় মেয়ের পাশে।
সোনাক্ষীর হবু স্বামী জ়াহির ইকবালের বাবা ইকবাল রতনসি পেশায় একজন গহনা ব্যবসায়ী। সালমানের সঙ্গে রয়েছে তার বিশেষ ঘনিষ্ঠতা। জ়াহির ইকবালের বোন একজন সেলিব্রিটি স্টাইলিস্ট আর ভাই পেশায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার।